বুধবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১৫

প্রকৃতির কবিতা : পৃথিবীতে প্রথম সকাল

পৃথিবীতে প্রথম যে দিন সকাল হয়েছিল, প্রথম যে দিন উষা এসেছিল সেই দিনটি হয়ত শীতকাল হবে। শীত মানুষের কাছে, পৃথিবীর কাছে সবুজ বিপ্লব নিয়ে আসে, মাঠে ঘটে ফসলে ভরিয়ে দিয়ে কৃষকের মনে সুখ নিয়ে আসে। শীত বাজারে শাক, সজ্বি ভরিয়ে তোলে, শীত সকালবেলায় এই প্রকৃতিকে ঠিক এতটাই সাজিয়ে তোলে, যাতে মনে হয় সে বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের নক্ষত্রের আলোকে তার কাছে আসতে বলছে, ঠিক সেই জন্য কোন নক্ষত্রের আলো পৃথিবীতে হয়ত প্রথম শীতকালেই এসেছিল। শীতে প্রকৃতি রানী যেভাবে সাজে তার যৌবন যেভাবে ভরে ওঠে তাতে যেন বিশ্বব্রহ্মান্ডের সকলে দেখতে তার কাছে আসে। তাদের মধ্যে একজন হয়ত উষা হয়ে এই পৃথিবীতে এসেছিল। পৃথিবীর প্রথম সকাল হয়ত শীতকালই ছিল। 


পৃথিবীরপ্রথম সকাল তুমিই এনেছ
তুমিইপ্রকৃতিকে কত সাজিয়েছ   
কুয়াসারচাদরে,    
ফুল ফলের ভুষন দিয়ে
প্রকৃতিরানীরশৃঙ্গার করেছ
তুমি বিশ্বের আলোকে ডাক দিয়েছ
পৃথিবীরপ্রথম সকাল তুমিই এনেছ


তাকে দেখতে এসেছ সবনক্ষত্র আলো
তাদেরতুমি তোমার কুয়াসায় ডাক
হাজারপথ দুরে, থেকে
জলকন্যারভুষন পড়ে
 তোমার স্বয়ম্বরে আসতেবল
তুমি বিশ্বের আলোকে নিমন্ত্রন কর
পৃথিবীরপ্রথম সকাল তুমিই এনেছ


ধরনী উষার মিলনশুধু তোমার আয়োজন
তুমিইকরেছ পৃথিবীর সাথে এই মিলনবন্ধন 
তাকে লালন করে   
তার বক্ষ দিয়েছে ভরে
সন্ধিক্ষনেতাকে এনেছ স্বয়ম্বরে 
তুমি পৃথিবীর বুকে তার বিবাহেরলগন      
পৃথিবীরপ্রথম সকাল তোমার হাতেআগমন


পৃথিবীরপ্রথম মিলন তুমিই করেছ
শীতেরপ্রতাপে তাদের কাছে এনেছ
বিবাহেরশুভ লগ্ন আসে
তোমার দিনগুলিতে
এক বন্ধনে বাধতে তাদেরদুজনাকে
তুমি পৃথিবীর সাথে উষার মিলনকরেছ
পৃথিবীরপ্রথম সকাল তুমিই এনেছ      


বিজ্ঞান আমাদেরকে বলে পৃথিবী একটি জলন্ত আগুনের পিন্ড থেকে কোটি কোটি বছর ধরে ঠান্ডা হয়ে পৃথিবীতে পিরনত হয়েছে। নবজাতক সন্তানের ন্যায় পৃথিবী কোমল হল, তার ওপর ঋতুর বৈচিত্র শুরু হল, গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত, বসন্ত প্রভৃতির প্রভাবে পৃথিবীর গায়ে নতুন আবরনের সৃষ্টি হল, সবুজের সৃষ্টি হল, তার কোলে একদিন মানুষের জন্ম হল, তবে সে সব কিছু যেন শীত ও তার সোহাগেই প্রথমে শুরু হয়েছিল। যেমন শীতে পৃথিবীর কোল ভরে ওঠে, সেই কোলেই হয়ত মানুষের জন্ম হয়েছে, সেখানেই হয়ত পৃথিবীর প্রথম কুয়াসা এসেছে। শীতেই বিবাহ হয়, শীতেই নতুন জীবনের শুরু হয়, শীতই আমাদের কাছে আসতে শেখায়। যেমন শীতে বিবাহে মানুষের জীবন শুরু হয়েছে তেমনি হয়ত শীতে প্রথম সকাল শুরু হয়ে পৃথিবীতে দিনের শুরু হয়েছে। 

মঙ্গলবার, ৬ জানুয়ারী, ২০১৫

শীতের কবিতা : শীতের কুয়াসা



শীতে কুয়াসা বাতাস ডেকে দেয়, আমাদের চোখে তা আমাদের কুয়াসা দেখায়। কুয়াসা যখন জলকানা হয়ে কচু পাতায় জমে যায় আলো এসে  তাকে উজ্বল করে যেন মুক্ত রেখে যায়। কুয়াসা শীতে প্রকৃতি রানীকে সাজায় তার ভেজা চাদরে, বেলা হয়ে গেলে সে চাদর খুলে যায়। মানুষ যেমন শীতের প্রতাপে চাদর মুড়ি দেয়, প্রকৃতি রানী তেমনি শীতের সকালে কুয়াসার চাদর গায়ে জরায়। মানুষ যেমন বেলা হলে চাদর খুলে নেয়, প্রকৃতি রানীও বেলা পোহালে সূর্য যখন তার শিখরে উঠতে চায় সে তার কুয়াসার চাদর খুলে নেয়।  


শীতে তুমি আস ঝাপসা তোমার আচল নিয়ে
কুয়াসা  সে নাম তোমায় বলে ।
তুমি আস প্রকৃতির গায়ের চাদর হয়ে
জলকন্যার পুথি দিয়ে ভরে।
ঝাপসা হয়ে আস স্বচ্ছ এ বাতাসে
পৃথিবীর কাপড় ভিজিয়ে দিয়ে।
পথ, ঘাট, দূর সমীরন পায়নি দেখিতে
শীতে তুমি আস ঝাপসা মায়ার আচল নিয়ে।


শীতে তুমি আস সবার চোখের বালি হয়ে
ধরনীর সাথে উষার মিলনতিথিতে।
উষার আলো তোমায় ভেদ করে বেলা পোহাতে
তোমার ঝাপসা ছবিতে এই মাটি ভালবাসে।
তোমার আদলে মিলনবন্ধনে বাধে তারা দুজনে
পৃথিবীর বুকে সৃজনতা ভরিয়ে দিয়ে।
কুয়াসার চোখের বালিতে উষা আসে তার বিশ্বাসে
শীতে তুমিই দাও উষাকে পৃথিবীর হাতে তুলে।


শীতে তুমি আস জন মানবের সুখ হয়ে
সবাই ওঠে তোমার দেখা পেতে।
তুমি আসবে জল কন্যার ভার নিয়ে
দিগন্তকোন, পথের সন্মুখে।
বুঝবে সবাই শীত এসেছে তোমার পালকি করে
পৃথিবীর সাথে মিলন সঙ্গমে।
কুয়াসার ঝপসা বাতাসে আসতে হয় আরও কাছে
শীতে তুমিই বল দুজনকে আরও কাছে আসতে।


শীতের কুয়াসা আমাদেরকে দূরকে স্পষ্ট দেখতে দেয় না, আমাদের তাকে দেখতে তার কাছে আসতে হয়। কুয়াসা আমাদের চোখের বালি হয়ে, আমাদেরকে ঝপসা দেখায়, আমরা তার কাছে হেরে দূরকে বিশ্বাস করি। দূরে যা আছে ভালো আছে মনে করি, এই কুয়াসায় দূরকে বিশ্বাস করতে শিখিয়েছে। এই কুয়াসাই আমাদের কাছে আসতে শেখায়, কোন জিনিসের কিংবা কোন মানুষের, দূর থেকে যাকে মলিন মনে হয় তার কাছে এসে আরও ভালো করে চিনে নিতে শেখায়। প্রকৃতির এই রূপ মানুষকে কত না দান দেয়, মানুষের জীবনকে কত কিছু শেখায়। হয়ত মনের কোন কুয়াসার জন্য তাকে চিনতে পারেনি ও ভালোবাসেনি তবে তার কাছে এসে যদি তাকে চিনতে পারি মনের সেই মলিনতা দূর হয়ে যাবে।

শনিবার, ৩ জানুয়ারী, ২০১৫

প্রকৃতির কবিতা: উষার বিবাহমঙ্গল



বিবাহে পিতা তার পুত্রীর কন্যাদান করেন তবে পৃথিবীর কাছে কে সকালের দান করেন ? সে আকাশের চাদ; ঘুম পারানির গানে যার পরমাদ, প্রভাতের আলোয় যে মিশে যায়, পৃথিবীকে সাজিয়ে যেন তার কন্যাকে রেখে যায়। কচু পাতায় মুক্তমনি, ঘাসে, ঘাসে জল দেবীকার পুঁথি, আকাশের ললাটে আকা চাদের ছবি, বাতাসে ছড়ানো তার ঘুঙুর গুলি বলছে যেন এ ঐ চাদের কন্যার আগমনী।


           ওগো চাদের মেয়ে !
শান্ত পৃথিবী নয়ন মেলে তোমা পানে চেয়ে আছে।
        চপল চরনে এস ধরনীতে,
        চাইছে পৃথিবী তোমার দেখা পেতে;
সকলে চোখ মুছে তোমায় দেখতে চায়,
বাপের হাত ধরে পৃথিবী জগাতে এস আমার গায়।

         ওগো চাদের মেয়ে !
দিগন্তের ঘোমটা তুলে এসো চোখের পড়ে।
       তারার আকাশ বিদায় দিয়ে,
       তোমার আকাশ আন পাখির গানে;
পলক চেপে ঘুমঘোরে আছে সব্বাই,
ফুলের কুড়ি পাপড়ি হতে তোমার অপেক্ষায়।


        ওগো চাদের মেয়ে !
তোমার পিতার হাত থেকে পাব তোমায় কন্যাদানে।
       তোমার সাথে শুভদৃষ্টি বেধে,
       আমার সৃজনরহস্য ফুটবে পুষ্পটিয়ে;
উষার আমেজী বরমাল্য দিয়ে বরন কর আমাকে,
পুষ্পের ভান্ডারে সাজবে ভরে আমাদের সংসারে।


        ওগো চাদের মেয়ে !
পিতার আয়ু ফুরিয়ে এলে আস পিতার আলো হয়ে।
      পিতাকে কপাল কোলে রেখে,
      তার সাথে আস এই বন্ধনে;
পিতার ছায়া একে রাখ তোমার ললাটে,
হাজার ফুলের গন্ধ পেয়েও তুমি নও আপন অহংকারে।


        ওগো চাদের মেয়ে !
চাদ দিয়েছে তোমায় আমার হাতে তুলে,
       তোমার পিতার কন্যাদানে,
       ভরতে এ ধরাতল সৃজন শৃঙ্গারে;
চাদমামা নামে তোমার পিতা পূজিত হন,
তোমার কাছে এসে পিতা কন্যায় মিলে যান।


       ওগো চাদের মেয়ে !
পৃথিবী ভরে তুলতে বিশেষ অলংকারে;
      তুমি আস তার গায়ে পড়ে,
      ফুলে, ফুলে, ঘাসে, ঘাসে, ভূষন জড়িয়ে;
তোমার পিতা তোমায় দিয়ে আপন ভুলতে চান
সৃজন রহস্যে পিতার এই পরম কন্যা দান।