মঙ্গলবার, ১ মার্চ, ২০১৬

৬ টি স্বভাব মানুষকে কাউকে সহজে বিশ্বাস করতে সাহায্য করে (যখন বিশ্বাস করা কঠিন)

        
কিভাবে কাউকে সহজে বিশ্বাস করা সম্ভব

বিশ্বাস করে কাউর হাত ধর একসাথে থাকার সময় তার ভেতর বিশ্বাস খোজার চেষ্টা করো না।
__নিত্য কিশোর চন্দ্র

       আমরা কাউকে বিশ্বাস করলে যদি সেই বিশ্বাস ভেঙে যায় দ্বিতীয়বার আমরা সহজে বিশ্বাস করতে পারি না। যার ফলে যে আমাদের উপর ভুল করেছে তার কিছু হয় না ক্ষতি হয় শুধু আমাদের জীবনের। আমরা একাকিত্ববোধ করি, মানসিক শান্তি হারিয়ে ফেলি, হীনমন্যতায় ভুগি, দশজনের থেকে আলাদা হয়ে বেচে থাকি।
       কেউ আমাদের প্রতি ভুল করলে একা একা বেচে থেকে কেন আমরা নিজেদেরকে কষ্ট দিতে চাই। ভুল যদি সে করে তবে নিজেদেরকে কেন তার স্বাস্তি দিই। একা থেকে, লোকজন থেকে নিজেকে দূর করে, দ্বিতীয়বার কোন সম্পর্ক গড়ে না তোলার সংকল্প করে আমরা তার ভুলের শাস্তি নিজে নিজেকে দিচ্ছি। সে যদি ভুল করে তার কথার দাম না রেখে আমরা ভুল করি তার কথা মনে করে নিজেকে শাস্তি দিয়ে।
      আমরা যদি কাউকে বিশ্বাস করি ও সে আমাদেরকে ঠকাতে সফল হয় তবে জিতবে কে? সে আমাদের ঠকাতে শুধু এই কারনে সফল হয়েছে কারন আমরা তাকে যেটুকু বিশ্বাস করেছি সে সেই বিশ্বাসের যোগ্য নয়। তাই সে সবসময় একজন হেরে যাওয়া মানুষ হয়েই ছিল, তার কথার মূল্য না রেখে সে শুধু আমাদের কাছে তার ব্যর্থ মানুষটাকেই প্রকাশ করেছে। এই কথাটা বুঝলে আমরা কাউর দ্বারা প্রতারিত হলে বসে বসে দুঃখ করতে ইচ্ছা করবে না।
     আমাদের জীবন কখনো কাউর জন্য থেমে থাকে না, জীবন চলতে থাকে। কেউ আমাদের ছেড়ে চলে গেলে, আমাদের কাছে আরও অনেক কিছু থাকে নিজের জীবনকে আবার নতুন করে সাজিয়ে তুলতে। আবার কাউর হাত ধরে নতুন করে নিজের জীবনকে সুযোগ দেওয়া, কাউকে বিশ্বাস করে তার সাথে একসাথে চলা, সারাজীবন একসাথে থাকার কথা দেওয়া। যে সব কিছু আমাদেরকে আগের সবকথা ভুলে কাউকে সহজে বিশ্বাস করতে শেখায় তার কয়েকটি কারন এখানে লেখা হল।
      ( ক ) আমাদের মানসিক শান্তির জন্য আমরা সহজে কাউকে বিশ্বাস করি।
      ( খ ) বিশ্বাস করে সম্পর্ক গড়ে তুলি, সম্পর্ক গড়ে ওঠার পর আমরা বিশ্বাস খুজি না।
      ( গ ) আমরা বিশ্বাস করি আমাদের নিজেদের জন্য।
      ( ঘ ) বিশ্বাস কখনো আমাদের ক্ষতি করে না বরং মানুষকে বদলাতে সাহায্য করে।
      ( ঙ ) আমরা জানি বিশ্বাস আমাদের জীবনে আরও অনেক কিছুর সৌন্দর্যকে সাথে নিয়ে আসে।
      ( চ ) কাউকে বিশ্বাস করা আমাদের প্রকৃত স্বভাব।

      ( ক ) আমাদের মানসিক শান্তির জন্য আমরা সহজে কাউকে বিশ্বাস করি।

      বিশ্বাস মানুষকে, মানুষের জীবনকে কত শান্তি দেয়। পিতা যখন তার সন্তানকে কোলে নিয়ে তাকে উপরে তুলে তার  সাথে খেলা করে তখন সে হাসতে থাকে, সেটা হল সেই সন্তানের তার পিতার প্রতি বিশ্বাস, তার পিতা কখনো তাকে ফেলে দেবে না।
      কাউকে আলিঙ্গন করার সময় চোখ বন্দ করে নেই কারন আমরা তাকে বিশ্বাস করি, সে সেই বিশ্বাস ভাঙবে না।
      যখন পিতা তার কন্যাকে বিবাহ দিয়ে তাকে বিদায় করে তখন তার চোখে জল থাকলেও মনে শান্তি পায় সে তার কন্যার বিবাহ দিয়েছে, সে সুখী হবে।
      এই পৃথিবীতে প্রত্যেকে কাউর উপর বিশ্বাস করেছে এবং তার সেই বিশ্বাস তাকে তার জীবনে শান্তি দিয়েছে। এই বিশ্বাসই আমাদের কোমল মনকে আগলে রাখে, খর্ব হতে দেয় না।  

      ( খ ) বিশ্বাস করে সম্পর্ক গড়ে তোল, সম্পর্ক গড়ে ওঠার পর বিশ্বাস খুজ না।

       অনেকে সহজে বিশ্বাস করতে পারে না, নিজের মনকে বিশ্বাসের শান্তি দিতে পারে না। আমরা আমাদের মনকে বিশ্বাসের সুখ থেকে বঞ্চিত করে রেখেছি তাকে অবিশ্বাস ও সন্দেহ করতে শিখিয়ে।
     প্রথমে বিশ্বাস করে কাউকে না চিনে, সন্দেহ করে, যাচাই করে, নিরীক্ষন করে বিশ্বাস করতে শিখেছি। যার ফলে আমরা নিজের মনকে তার স্বভাব থেকে, তার প্রকৃতি থেকে তাকে বঞ্চিত করে রেখেছি।
      কখনো দুজন মানুষের মধ্যে এক সম্পর্ক গড়ে উঠল বিশ্বাস ছাড়া। তারা ভাবল প্রথমে একসাথে থেকে পরস্পরকে চিনে তারপর বিশ্বাস করবে। তাই সম্পর্ক গড়ে ওঠার পরও, বিবাহ হয়ে যাবার পরেও যে সময়টুকু তাদের একে অপরের সঙ্গে কাটানো উচিত, সেই সময়টুকু তারা শুধু একে অপরকে চিনতে ও বুঝতে কাটিয়ে দেবে।
      ঠিক একভাবে তারা তাদের জীবনের এই সময়কে হারিয়ে ফেলছে। সম্পর্কবন্ধনে একজনের কাছে এসে তাকে চিনে তার উপর বিশ্বাস করার চেয়ে প্রথম তাকে বিশ্বাস করে তাকে চিনবার বা বুঝবার চেষ্টা করাই ভালো।

    ( গ ) আমরা বিশ্বাস করি আমাদের নিজেদের জন্য।

     আজ আমি একজনকে বিশ্বাস করলাম কাল সে সম্পুন্ন অন্য মানুষ রূপে আমার কাছে আসল তখন কী আমি আমার এই বিশ্বাসকে দোষ দেব? সে দোষ আমার বিশ্বাসের নয়।
     আমি তার উপর বিশ্বাস করেছি আমার জন্যে কারন আমি কারোর উপর সন্দেহ করে তার সাথে থাকতে চাই না। যদি সে আমার বিশ্বাস নাও রাখতে পারে আমি দুঃখ পাব না কারন তার উপর বিশ্বাস করা সিদ্ধান্ত আমার ছিল, কেউ আমাকে তাকে বিশ্বাস করতে জোর করেনি।
     একজন মানুষ যদি বিশ্বাস না রাখার মনভাব নিয়েও আমার কাছে আসে যদি আমি তার ওপর বিশ্বাস করি, সে বদলে যাবে। আমার নিঃশর্ত বিশ্বাস তার মনেও বিশ্বাস রাখার মনভাব জাগাতে পারে।

     ( ঘ ) বিশ্বাস কখনো আমাদের ক্ষতি করে না বরং মানুষকে বদলাতে সাহায্য করে।

       কোন ব্যক্তি যদি সম্পর্কে এসে শুধু সন্দেহ ও অবিশ্বাস করে তবে আর একজন যদি তাকে বিশ্বাস করে, তাকে ভালবাসে তবে সেই ব্যক্তির অবিশ্বাস ও তার ভালবাসার কাছে কে জিতবে?
       সন্দেহ ও অবিশ্বাস করে সে সন্দেহ ও অবিশ্বাসকে অনুভব করবে তবে তার সঙ্গী  শুধু তার বিশ্বাস ও ভালোবাসাকে অনুভব করবে। যা সে ব্যক্তি কখনো অনুভব করতে পারবে না। তার সঙ্গী তাকে ভালোবেসে যে সুখ পাবে, বিশ্বাস করে যে শান্তি পাবে তা সেই ব্যক্তিকেও বিশ্বাস ও ভালবাসকে গ্রহন করতে শেখাবে।
       সেই ব্যক্তির মুখে সন্দেহ ও অবিশ্বাসের ছবি ফুটে উঠবে তবে তার সঙ্গী তাকে বিশ্বাস ও ভালোবাসায় আরও সুন্দর হবে। তখন তার প্রতি তার সঙ্গীর বিশ্বাস তাকে বদলে দেবে। কারন তাদের দুজনের ভেতর একজন সন্দেহ না করে বিশ্বাস দিয়ে নিজেদের জীবন শুরু করেছে। অবিশ্বাস করে, না আমার ভালো হয় না তার, হয় শুধু দুজনার মনের ক্ষয়।
       যদি জীবনে কখনো অচেনাকে বিশ্বাস না করতে শেখ, মৃত্যুর কানাতে দাড়িয়ে যখন জীবনকে দেখবে তখন দেখতে পাবে না জীবনে কত লাভ করেছ, কত বুদ্ধি করেছ। দেখতে পারবে জীবনে জীবনে কত ভালোবেসেছ, জীবনে কতটা বেচে থেকেছ। কারন মৃত্যুর সময় কেউ অফিসে সময় কাটাতে চায় না, যাকে ভালবাসে তাকে দেখতে ও তার সাথে থাকতে চায়।  

    ( ঙ ) বিশ্বাস আমাদের জীবনে আরও অনেক কিছুর সৌন্দর্যকে সাথে নিয়ে আসে।

      যেমনভাবে বিবাহ শুধু তোমার জীবনে তোমার প্রয়োজনকে সাথে নিয়ে আসে না, তোমার প্রিয়জনের মাধুর্য, তার সৌন্দর্য, তোমার জীবনে তার প্রাধান্য, তোমার প্রয়োজনগুলি মিটিয়ে আসে। ঠিক সেরকম বিশ্বাস শুধু বিশ্বাসকে নিয়ে আসে না, বিশ্বাস শান্তিকে নিয়ে আসে, বিশ্বাস ভালোবাসাকে নিয়ে আসে, বিশ্বাস ত্যাগ ও নিস্বার্থ ভালবাসার প্রতিক হয়।
      মানুষ সহজে বিশ্বাস করতে পারে না বিশ্বাস অর্জন করার পরীক্ষায়, সে তার জীবনের অর্ধেক সময়ই কাটিয়ে দেয় আর যদিও সে এটুকু বিশ্বাস করতে পারে তবে সে বিশ্বাসকে একটু পরেই হারিয়ে ফেলে।

     ( চ ) কাউকে বিশ্বাস করা আমাদের প্রকৃত স্বভাব।

       প্রথমে আমরা সবাইকে বিশ্বাস করতাম কারন তা আমাদের স্বভাব ছিল। অবিশ্বাস করতে শিখেছি কাউর প্রতারনা সহ্য করে। অথবা বিশ্বাস সম্পর্কে সমাজ ও মানুষের ধারনা নিজের মনের মধ্যে পোষন করে। তারপর থেকে আমরা নিজেদের স্বভাবের বিরুদ্ধে কাজ করা শুরু করি।
       যদিও দুজন মানুষ বিশ্বাস করতে পেরেছিল তবে সামান্য কিছুর জন্য সে বিশ্বাস ভেঙ্গে যায়, যেখানে বিশ্বাস করাই তার কাছে সহজ হয়ে ওঠে না, যেখানে বিশ্বাস তার মনের স্বভাব হয়েই উঠতে পারে না, সেখানে বিশ্বাস ভেঙ্গে যাওয়া খুব সহজ। যেমন রঙ কাপড়ের আসল পরিচয় নয় তাই সূর্যের আলোর সামনে তা বর্নহীন হয়। তেমনি বিশ্বাস যখন আমাদের মনের স্বভাব হয়ে উঠতে পারে না, সে বিশ্বাস মানুষ, সমাজ পরিস্হিতি, ও সামান্য শক্তির প্রভাবেই নষ্ট হয়ে যায়।
      বিশ্বাসের উপর সম্পর্কের রঙ নয় বরং যে সম্পর্কের উপর বিশ্বাসের রঙ তার বিশ্বাস সমাজ, পরিস্হিতি ও মানুষের প্রভাবে তো নষ্ট হবেই। বিশ্বাস করতে শিখে বিশ্বাসকে নিজের রং নয়, বরং বিশ্বাস করাকে নিজের স্বভাব তৈরী করতে নাও।

     বিশ্বাস মানুষের মনের স্বভাব, যেমনভাবে ভাবমান নৌকা জলের ওপর কখনো স্থির থাকে না, নৌকার সহজাত স্বভাব তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়, তেমনি মানুষের স্বভাব বিশ্বাস করা জীবনের স্রোতেবিশ্বাসের হাত ধরে জীবনে এগিয়ে যাওয়া।
      সেই বিশ্বাসকে এখন নিজের রঙ বানিয়ে নিলে তা ফিকে হয়ে যাবে বরং নিস্বার্থ বিশ্বাসকে নিজের স্বভাব বানিয়ে নিয়ে, তার হাত ধরে জীবনে চলতে হবে। এই বিশ্বাসকে মনের মধ্যে বন্ধ করে রেখে মনের বাচ্চা মানুষকে অনেক দিন ধরে হাসতে দেয়নি। এখন সে বিশ্বাস করে মানুষের কাছে এসে হাসতে শিখবে, সে বিশ্বাস করে শান্তি পাবে।
      জানি না আজ  বিশ্বাস মানুষের জীবনের কতটা জায়গা জুড়ে আছে এবং সেই বিশ্বাসের কাছে এই লেখা কতটা জায়গা পাবে।
      মানুষ যদি তার বিশ্বাসের অমূর্ত প্রতিমাকে মূর্তি দিতে চায়, মানুষ যদি তার বিশ্বাসের গুনে মানুষকে গন্ধ দিতে চায় তবে সে নিজেই লেখে তার বিশ্বাসের প্রবন্ধ। সেই প্রবন্ধ আর কাউর কাছে সত্য না হলেও তার সেই বিশ্বাসের কাছে সে সত্য, সে সাক্ষী , সে পূর্ণ। যার কাছে বিশ্বাস করা সহজ তার কাছে তার বিশ্বাস নিয়ে কথা বলা কঠিন না। বিশ্বাস করা যার স্বাভাবিকতা, সে তার জীবনের সুখ, শান্তি, ভালোবাসাকে ভালোভাবে বোঝে। সে বোঝে বিশ্বাস তার জীবনকে কত সুন্দর করে তুলেছে।
     তাই কাউকে সন্দেহ করার বদলে কাউকে বিশ্বাস করে তার সাথে সম্পর্ক গড়ে তলার মতবাদ একবার গ্রহন করে দেখা উচিত। দেখা উচিত তাতে আমাদের জীবন কতটা ভালো, খারাপ হয়ে উঠছে। এই বিশ্বাস নিজের জীবনসঙ্গীর প্রতি হোক, নিজের ব্যাবসাহী বন্ধুর প্রতি হোক, কিংবা অন্য কাউর সাথে হোক।
    আমরা সবাই জানি মানুষকে বিশ্বাস করা ভালো, কিন্তু তা সবসময় হয় না কারন আমরা ভয় পাই আমাদের সাথে খারাপ কিছু হবার। বিশ্বাসের সম্পর্কে কয়েকটি কথা জানলে আমরা সহজে কাউকে বিশ্বাস করতে পারি, আর কাউর প্রতি নিজের মনের সংসয় বোধকে দূর করে রাখতে পারি। উপরিউক্ত কথাগুলি সবসময় কাউকে বিশ্বাস করতে আমাদের সাহায্য করে, আমার মনে হয় খুব বেশি জায়গায় তার ব্যতিক্রম হবে না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন