যতদিন বৃষ্টি আছে -- তাকে ভালবাস
মনের কারুকাজ করা পাত্রে ধরে রাখ
আগামী সপ্নের সম্ভবনায়……..
__প্রনব মজুনদার
( বর্ষার আয়োজন, পৃষ্টা নং, ৪৯,বর্ষামঙ্গল )
গত এক দশক ধরে প্রতিদিন সকালের মত আজ সকালেও আমার ৮৬ বছর বয়স্ক পিতামহ বাগান থেকে একটি ফুল নিয়ে আমার ঠাম্মাকে দিল। আজ সকালে আমি ভাবলাম আমি তার সাথে ঠাম্মার সঙ্গে দেখা করতে যাব। যখন সে সেই ফুলটিকে তার সমাধিস্তম্ভর উপর রাখল, সে আমার দিকে তাকাল ও বলল, “ যখন সে বেচে ছিল তখন যদি আমি প্রতিদিন সকালে তাকে একটি করে ফুল দিতে পারতাম, তাহলে তার কত ভালো লাগত।”
__মার্ক
পরিবারের কেউ মারা গেলে আমরা ঘরে তার ফটো টাঙিয়ে রাখি। প্রতিদিন পূজো দেবার সময় তাকেও পূজা করি, প্রতিদিন সেই ফটোতে নতুন একটি ফুলের মালা পরাই, প্রতিদিন সেই ফটো থেকে ধুলো বালি মুছে রাখি। কারন সেই মানুষটি আমাদের ছেড়ে চলে গেছে, পড়ে আছে শুধু তার স্মৃতি। তার স্মৃতিকে আগলে রাখতে আমরা তার সাথে জুড়ে থাকা সবকিছুকেই আগলে রাখি। প্রতিবছর তার অতুষ্টিক্রিয়া করি, তার আত্মার শান্তি কামনা করি।
তবে এই সবকিছু করি তার মৃত্যুর পর, সে যখন বেছে ছিল তখন কি কখনো তার জন্য কিছু করেছি। তার মৃত্যুর পর সে কতটা শান্তি পাবে তা নির্ভর করে সে আমার সাথে কতটা শান্তি পেয়েছে। সে আমার জীবনসঙ্গী হতে পারে, মা-বাবা হতে পারে, আমার পিতামহ অথবা মাতামহ হতে পারে। যখন তারা আমাদের জীবনে ছিল তখন তাদের জন্যে কি করেছি?
যে নিঃসঙ্গতার অভাব কখনো অনুভব করেনি সে কাউর সঙ্গীর সঙ্গকে সে তুলনায় অনুভব করে না। কাউর সাথে একদিন সময় কাটালেও সে আমাদের মনে অনেক বড় ছাপ ফেলে যায়। আর কাউর সাথে অনেকগুলি বছর একসাথে থাকার পর সে কখনো আমাদের মন থেকে মুছে যায় না।
জীবনের সবকিছু একসাথে করার পর যখন তাকে তা একা হাতে করতে হবে তখন সে তার পাশে আর একজনের অভাব অনুভব করবে। সকালে যার মুখ দেখে ঘুম থেকে উঠতে যখন তোমার পাশে তাকে দেখতে পাবে না, যার সাথে সারাদিন নানা বিষয়ে খুটি নাটি ঝগড়া ঝাটি হত। সেই জায়গাটা তখন খুব ফাকা ফাকা লাগবে।
সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া ও কাউকে হারিয়ে ফেলার সময় মনে হয় হয়ত এই বুঝি এই ভাবটা আমাদের অনুভব হল। হয়ত এই বুঝি আমরা এই সম্পর্ককে ভেঙে ফেললাম, কিন্তু ভুলে যাই কখনো জানতে পারি না সেই অনুভবের অদৃশ্যরূপ কখন আমাদের মনে জন্ম হয়েছিল। কিছুকাল ধরে তা পরিপুষ্ট হলে তারপর আমরা তাকে দেখতে পাই।
এক বছর, দু বছর কিংবা দশ বছর একসাথে থাকার পর যখন দেখি সম্পর্ক ভেঙে যাবার মুখমুখি। তখন তার অর্থ এটা নয় যে, দশ বছর পরে তাদের সম্পর্কে ভেঙে গিয়েছে। তার অর্থ দশবছর ধরে তারা যে কাজ করেছে, সেই কাজের ফল তারা দশ বছর পরে পেয়েছে। দশ বছর ধরে তাদের ভেতর যে ঝগড়া-ঝাটি, কথা কাটা-কাটি, মনমালিন্য হয়েছে সেই সবকিছুর বোঝা বেড়ে গিয়ে আজ সেই সম্পর্কটা শেষ পর্যায়ে এসে দাড়িয়েছে।
প্রথম যে দিন তাদের সংসারে অশান্তি শুরু হয়েছিল, তারা তাকে না মিটিয়ে, সে অশান্তির পরিমান দিনদিন বাড়তে দিয়েছে। যা শেষে তাদের দুজনকে পরস্পরের থেকে আলাদা করে দিয়েছে। তাই সেই অশান্তিকে যদি সহজে মেটানো যায় তাহলে তা কখনো আমাদের জীবনে বোঝা হয়ে দাড়াবে না। সেই বোঝাপড়া আমাদের সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে, আমদেরকে পরস্পরের আরও কাছে আনবে।
সংসারে কখনো কোন বিষয় এসে দাড়ালে আমরা তাকে সম্পর্কের সাংসারিক অশান্তি বলি। তাকে খুব স্বাভাবিক ভাবি। ভাবি এমন কোন সম্পর্ক হয় না, যাদের মধ্যে অশান্তি নেই, সব ঘরেই সংসারের খুটি নাটি বিষয় নিয়ে ঝগড়া ঝাটি হয়। তাই তাকে স্বাভাবিক মনে করি, ঝগড়া, অশান্তি ছাড়া আমরা আমাদের জীবনকে কল্পনাই করতে পারি না। তাই সেই সবকিছুকে স্বীকার করে আমরা দুজন সেই ভাবেই জীবনে এগিয়ে চলি।
তবে ভুলে যাই সেই অশান্তি ভবিষ্যতে সম্পর্ক ভেঙে যাবার ক্ষুদ্রতম রূপ। যদি সেই তাকে অগ্রাহ্য করতে থাকি তবে তার বোঝা ধীরে ধীরে বাড়তে বাড়তে একদিন দুজনকে আলাদা করে দেবে।
দুজনের ভেতরে অশান্তি হলে তা কিছুদিন পরে দূর হয়ে যায়, তবে সেই কয়দিন তাদের দুজনের ভালোভাবে কাটে না। তারা একে অপরের প্রতি কাজগুলো করে, যেমন অফিসের সময় হলে স্ত্রী তার টিফিন গুছিয়ে দেয়, খাবার সময় হলে তার সামনে খাবার গুছিয়ে রাখে, সম্পর্কে নিজের তরফের কাজগুলি ভালোভাবে পালন করে, তবে একে অপরের সাথে কোন কথা বলে না। আবার কিছুদিন পরে রাগ দূর হয়ে গেলে তারা কথা বলতে শুরু করে।
আমাদের সম্পর্ক এতটা ঠুমকো নয় যে রাগারাগি হলে দুজন সারাজীবনের মত পরস্পরের থেকে কথা বলা ছেড়ে দেবে। হয়ত আজকে রাগারাগি হলে কাল সবকিছু আবার মিটে যাবে, আজকে রাগারাগি হলে দুদিন পরে আবার সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে, আজকে দুজন পরস্পরের সাথে কথা না বললে এক সপ্তাহ বাদে আবার কথা বলবে।
তাহলে এক সম্পাহ বাদে যখন আবার কথা বলতে হবে তাহলে আজকে কেন কথা বলবে না? এক সপ্তাহবাদে যখন সবকিছু মানিয়ে নিতে হবে তবে আজকেই কেন না সবকিছু মানিয়ে নেই? কেন অন্যের কাছ থেকে কিছু চেয়ে বসে না থেকে নিজেই আগে গিয়ে কথা বলি। কাল যে কাজটি করতে হবে তা আজকেই কেন করব না।
সংসারে কখনো কোন অশান্তি হলে, মনমালিন্য হলে যখন কথা বলার মত পরিস্হিতিই না থাকে তখন যে কয়েকটি উপায়ে সেই পরিস্হিতিকে দূর করা যায়, তার কয়েকটি নিয়ে আলচনা করা যাক।
( ক ) নিজেকে একটু সময় দাও মানসিক ক্লান্তি দূর হবার জন্যে।
( খ ) কথা না বলতে পারলে একটি চিঠি লেখ।
( অ )একটি চিঠি লিখে তার সাথে কথা বল।
( আ ) এমন কিছু কর যাতে ও বোঝে তুমি দুঃখিত।
( গ ) নিজে আগে গিয়ে কথা বল।
( অ ) আমি নিজের জন্য করছি।
( আ ) আমি এই ভালবাসার মুখ।
( ই ) তার মনে পাপবোধ জাগতে দিও না।
( ঈ ) নিজেদের স্বপ্নগুলির কথা ভাব।
( উ ) পুরনো দিনগুলির কথা মনে কর।
( ঊ ) তার কষ্টের কথা জানার চেষ্টা কর।
( ক ) নিজেকে একটু সময় দাও মানসিক ক্লান্তি দূর হবার জন্যে।
মানসিক অশান্তির সরাসরি প্রভাব আমাদের শরীরের উপর পড়ে। নিজেদের মধ্যে কোন বিষয়ে মতের অমিল হলে, যখন একজন আর একজনকে বোঝার চেষ্টা না করে নিজের সিদ্ধান্ত অন্যের উপর চাপাবার চেষ্টা করে, তখন তাদের ভেতর প্রচন্ড অশান্তির সৃষ্টি হয়। তারা সেই পরিস্হিতিকে সামলাতে না পেরে একে অপরের সামনে থেকে দূর হয়ে যায়।
তখন সবকিছু মানিয়ে নেবার চেষ্টা তাদের জন্য সার্থক হয় না। তারা যতবারই চেষ্টা করে তারা সেই একই ঝগড়ায়, সেই একই কথা কাটা-কাটিতে আবার জড়িয়ে পড়ে।
তাই নিজেদের একটু সময় দাও সেই অশান্তির গ্লানি দূর করে আবার কথা বলতে। শারীরিক মানসিক তন্দ্রাভাব দূর করতে।
যদি রাত্রে কখনো ঝগড়া হয়, তবে সকালে তার সমাধান করার কথা ভাববে। যদি সকালে অফিসে যাবার আগে ঝগড়া হয় তবে বাড়ি ফেরার সময় তা নিয়ে কথা বলার কথা ভাববে। যদি কথা কাটাকাটি হতে হতে মন খুব খারাপ হয়ে যায় তবে তখন সেই ঘর থেকে বেরিয়ে আস, সেখানে যাও যেখানে তুমি শান্তি পাও। যতক্ষন মন শান্ত হচ্ছে, যতক্ষন তুমি তোমার মানসিক শান্তি ফিরে না পাচ্ছ ততক্ষন সে নিয়ে তার সাথে কথা বল না।
অনেক সময় এমন কিছু আমাদের জীবনে ঘটে না, যা মেটাবার জন্য আমাদের অনেক সময় দিতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় দুজনের মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয়ে যাবার কিছু পরেই তারা আবার ভালভাবে কথা বলতে শুরু করে। তাদের শারীরিক ও মানসিক অবসাদ কাটাতে তারা নিজেদের কোন সময় দেয় না।
তাই তোমাদের সম্পর্কে যদি সেই সময় দিতে না চাও, যদি মনে হয় এমন কোন ঘটনা ঘটেনি যার জন্য একদিন দুইদিন কথা না বলে থাকতে হবে। তাহলে যা হয়েছে সবকিছু ভুলে গিয়ে আবার কথা বলতে শুরু কর। তাতেই সব মানসিক অশান্তি দূর হয়ে যাবে।
( খ ) কথা না বলতে পারলে একটি চিঠি লেখ।
যদি কথা বলার মত পরিস্হিতিই না থাকে তবে, তবে তুমি আরও কয়েকটি কাজ করতে পার যেমন;
( অ )একটি চিঠি লিখে তার সাথে কথা বল।
অথবা,
( আ ) এমন কিছু কর যাতে ও বোঝে তুমি দুঃখিত।
( অ )একটি চিঠি লিখে তার সাথে কথা বল।
একটি চিঠিতে তোমার কথা তাকে জনাতে পার। তুমি তাকে যা বলতে চাও, যা বোঝাতে চাও তাকে একটি কাগজে লিখে, তা এমন একটি জায়গায় রেখে দাও যাতে তার চোখে পরে। যেমন তার পকেটে, অথবা যে জিনিষটা সচরাচর তার কাজে লাগে তার কাছে।
যা ঘটেছে তাতে তোমার তরফ থেকে যতটা দোষ আছে তাকে স্বীকার কর। তুমি এক পা বাড়ালে দিলে সে তোমার সাথে আরও দশ পা বাড়িয়ে দেবে। কারন তুমি তার কাছ থেকে তার sorry আসা করলে, সেও তোমার কাছ থেকে একই জিনিস আসা করে।
একটি কাগজে তুমি তোমার কথা লেখ, তুমি তোমার কথাকে শুধু sorry বলেও শেষ করতে পার অথবা তোমার সমস্ত কথার সার কথাটুকু সেই কাগজে লেখ।
তুমি ঠিক এই ভাবে তোমার কথা শুরু করতে পার,
“আমি সবসময় আমাদের দুজনের ভালো চেয়েছি, আমি কখনো এমন কিছু করার কথা ভাবেনি যাতে তোমার কোন ক্ষতি হয়। তোমার আমার মাঝে যতকিছু হোক না কেন, আমি তোমাকে যত খারাপ কিছু বলি না কেন, আমি তোমার সাথেই এই জীবনটা কাটাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন যাই হোক না কেন আমাদের দুজনকে একসাথেই সারাজীবন থাকতে হবে। তবে নিজেদের উপরে রাগারাগি করে, মুখ কালো করে আমরা কি একসাথে থাকব? পরস্পরের সাথে বোঝাপড়া করেই প্রতিদিন কাটিয়ে দেব?
সেই দিনগুলির কথা ভাব, যে দিনগুলিতে আমরা একদিনও কথা না বলে থাকতে পারতাম না, একদিনও দেখা না করে থাকতে পারতাম না। কিন্তু আজকে আমারা সামনাসামনি থাকলেও কোন কথা বলছি না। যদি কখনো আমার মন খারাপ হত তুমি আমাকে হাসতে শেখাতে, তোমার কাছ থেকে আমি হাসতে শিখেছি। কিন্তু আজ সারাদিন মন খারাপ করে থাকলেও তুমি একবারও আমার দিকে ফিরে তাকাও নি ।
আমি তোমাকে আগের মত করে পেতে চাই। আমি তোমাকে খারাপ যা কিছু বলেছি সে সবকিছুকে আমি ফিরিয়ে নিচ্ছি। যদি তুমি পার, আমাকে ক্ষমা করে দিয়ে আমার মনের পাপবোধকে দূর কর। যদি তুমি আমাকে ক্ষমা কর, তাহলে আমাকে আমার ফোনে ছোট একটি মিসকল কর, তাতেই আমি বুঝে যাব তুমি আমাকে ক্ষমা করেছ।”
চিঠিটা বেশি বড় কর না, ছোট করে লেখার চেষ্টা কর। যদি তুমি দেখ তোমার সঙ্গী কোনকিছু পড়তে অভ্যস্ত নয় তবে সেই সময় তাকে কোন কিছু পড়তে দিও না।
চিঠিতে শুধু তোমাদের সম্পর্ককে শোধরাবার চেষ্টা কর, সেই কথা কাটা-কাটি বা ঝগড়া ঝাটির কোন কথা লিখ না। মতের খাতিরে কেউ না মানলে, ভালবাসার খাতিরে সবাই মানিয়ে নেবার চেষ্টা করে।
কারোর কাছে নিজের তিরস্কার সহ্য করে, তার পরের মুহুর্তে তাকে ক্ষমা করা তার কাছে সহজ হয় না। সেসব কিছু ভুলতে সে কিছুটা সময় নেয়, তাকে সবকিছু মানিয়ে নিতে সেই সময়টুকু তাকে দাও। রাত্রে ঝগড়া হলে সকালে তার হাতে কোন চিঠি ধরিয়ে দিলে, সবকিছু মিটে যাবে ! সবকিছু এত সহজ না।
সব মানুষ একরকম হয় না, কেউ অন্যের মুখের কথাকে মনে রেখে, সারাজীবন ধরে নিজেকে কষ্ট দিতে থাকে। তবে তাকে ভুলে যেতে পারে না।
তবে দুজনের মধ্যে মনমালিন্য হলে, একজন যখন বন্ধুত্বের হাত বাড়ায় সে আর একজনকেও বন্ধুত্ব করতে সাহায্য করে। তখন তাকে ভালবাসতে চাইলে আমাদের যে কাজটিই করা উচিত, সেটা করাই আমাদের কর্তব্য।
( আ ) এমন কিছু কর যাতে ও বোঝে তুমি দুঃখিত।
কাউর প্রতি অনেক বড় ভুল করে বসলে পরে যখন নিজের ভুলের কথা বুঝতে পারি তখন তার কাছে ক্ষমা চাওয়া আমাদের পক্ষে সহজ হয় না। আমরা সেই কাজ করার সাহস করতে পারি না। যদিও জানি সে আমাকে ক্ষমা করে দেবে তবুও আমরা সেই কাজ করতে পারি না।
তাহলে এমন এক কাজ করতে হবে যাতে তার কাছে ক্ষমা চাইতেও হবে না, অথচ সে বুঝবে তুমি তোমার ভুল স্বীকার করেছ, যার জন্য তুমি অনুতপ্ত, যার জন্য তুমি ক্ষমা চাইতে চাও।
এখন দেখ, কোন জিনিসগুলি তোমাকে সেই কাজ করতে বাধা দিচ্ছে :
( ১ ) আমিই ঠিক !
( ২ ) তাকে ক্ষমা চাওয়া উচিত।
( ৩ ) আমি আগে কেন ?
যদি না নিজে নিজের ভুলকে বোঝা যায় অন্যের কাছে ক্ষমা কি করে চাইব। তাই যতক্ষন নিজে নিজের ভুলকে বুঝতে পারছ, নিজের জায়গা থেকে সরে এসে অন্যের জায়াগায় দাড়িয়ে তার দিকটিকে বুঝবার চেষ্টা করছ তুমি মনের ভেতর ক্ষমা চাওয়ার কোন প্রসঙ্গ তুল না।
আমরা কাউর কাছে তখন ক্ষমা চাই যখন আমরা নিজের ভুলকে বুঝি, তাকে আরও ভালো করে চিনি। তার কটাক্ষের পেছনে লুকিয়ে থাকা কারনকে দেখি। সে যেই পরিস্হিতি মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে সেই পরিস্হিতিকে বোঝার চেষ্টা করি। সে আমার সাথে যেই রকম ব্যবহার করছে তার পেছনে লুকিয়ে থাকা তার কোন কষ্ট, কোন টেনশন, কোন কিছুর অভাবকে দেখার চেষ্টা করি।
যখন সে সব কিছু দেখি, যখন তার আসল পরিচয় পাই তখন নিজের উপর খুব খারাপ লাগে আমি তাকে কত কথা শুনিয়েছি, কত কথা বলেছি। কোন মানুষকে খারাপ ভাবলে যখন তাকে আরও ভালোভাবে চিনতে পারি তখন আমাদের মনে হয় আমরা তার সম্পর্কে কত খারাপই না ভাবতাম।
যখন নিজের ভুল বুঝতে পারব তখন তার কাছে ক্ষমা চাইতে না পারলে :
যদি তুমি স্ত্রী হও :
( ১ ) সে যা খেতে ভালবাসে তার জন্য সেইটাই রান্না কর।
বা ,
( ২ ) ফোন বা sms করে জিজ্ঞাসা কর রাত্রে সে কি খাবে।
যদি তুমি স্বামী হও :
( ১ ) সে যা ভালবাসে ( কোন গিফট, বা কোন শো পিস ) তার জন্য কিনে আন।
বা,
( ২ ) কোন ফোন বা sms করে বল তুমি আজ তারাতাড়ি বাড়ি ফিরছ, ফিরে এসে দুজন সিনেমা দেখতে যাবে।
দুজনের ভালবাসায় এই সবের কোনকিছু করারই দাবি রাখে না, কিন্তু যখন একজন মনে করে সে ভুল করেছে, তবে ক্ষমা চাইবারও সাহস তার নেই তখন এই কাজগুলি করে সে তার পক্ষের ক্ষমা চাইতে পারে। একজন বারবার একই ভুল করলে বারবার তার ক্ষমা চাইতে চাইতে শেষে তার সেই ক্ষমা বা ভুল স্বীকারের কোন দাম থাকে না। তাই ক্ষমা চাওয়া শুধু নিজের ভুল স্বীকার না, সেই ভুল দ্বিতীয়বার না করার সংকল্প। স্বামী, স্ত্রী যখন সেই সংকল্প করে তাদের সেইসব কাজগুলির মাধ্যমে তখন তাদের দুজনের আজকের দিন সবসময় কালকের থেকে ভালো হয়।
তাই নিজেদের সম্পর্ককে সুন্দর করার জন্য সেইসব কাজ গুলি যতই তাদের কাছে বেশি মনে হয় না কেন তা শুধু তাদের দুজনের ভালোর জন্য, তাদের দুজনের ভালো ভবিষ্যতের জন্য।
আমি যে কোম্পানিতে কাজ করি সেখানে আগে একজন কাজ করত। তার সাথে সকালে যদি তার স্ত্রীর ঝগড়া হত, তার স্ত্রী রাতে তাকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করত, “রাতে কী খাবে ?”। সে বলত, “ যা হয় কিছু একটা কর”। এই টুকু কথায় তাদের ভেতরের সমস্ত রাগারাগি মিটে যায়। এই ঘটনা প্রায় প্রতিদিন চলে, প্রতিদিন তার স্ত্রী ফোন করে একই কথা জিজ্ঞাসা করে, ও সে প্রতিদিন তার একই উত্তর দেয়।
তারা তাদের দুজনের জীবনকে সুন্দর করার উপায় খুঁজে পেয়েছে। স্ত্রী ফোন করলে স্বামী ভাবে, সে আমার কেয়ার করে, ও স্বামী যখন বলে, “তোমার পছন্দ মত কিছু কর” স্ত্রী ভাবে সে আমাকে ভালবাসে।
তাদের কাছে তা কোন বাড়াবাড়ি নয়। তা তাদের দুজনের প্রতিদিনের ঘটনা, যা শুধু তাদের সম্পর্কের সৃজন করে।
স্বামী, স্ত্রীর মধ্যে কিছু জিনিস সবার চোখে পড়ে, তাহলে আরও কত কিছু থাকবে যা কাউর চোখে পড়ে না। সেইসব কিছু সারাজীবন ধরে তাদের দুজনকে একসাথে রাখে, সেইসব কিছুর জন্যে একে অপরের থেকে দুরে চলে গেলেও বার বার তারা একে অপরের কাছে আবার ফিরে আসে। সেইসব কিছু তারাই আবিষ্কার করে, তাদের দুজনের জন্যে কোনটা ঠিক। কি করে সে তার সঙ্গীকে মানাবে। যদি তারা সেসব কিছু আবিষ্কার করতে পারে তাহলে সেটাই তাদের করা উচিত।
একজন ফোন করে তার স্বামী কি খাবে তা জিজ্ঞাসা করলে সকলের যে সেই একই কাজ করতে হবে তা নয়। তাদের ভেতরের সমস্যা তারা কিভাবে মেটাবে তা তাদেরকে ভাবতে দেওয়া উচিত।
সম্পর্কে কখনো বড় কিছু ঘটলে অনুতাপ বা পশ্চাতাপ বোধ তারা কখনো করে না। তবে আমার মনে হয়, কেউ কাউকে খুব ভালোবাসলে পৃথিবীতে এমন কোন ভুল নেই যা ক্ষমা করা তাদের পক্ষে কঠিন।
( গ ) নিজে আগে গিয়ে কথা বল।
“যদি তুমি কর তাহলে আমিও করব !” যদি সে এসে আমার সাথে কথা বলে তবে আমিও তার সাথে কথা বলব। তবে নিজে আগে কথা বলতে যাব না, তার সামনে মুখ ফুলিয়ে বসে থেকে তার sorry বলার অপেক্ষায় থাকব।
তবে আমরা জানি আমি তার কাছে যা আসা করছি সেও আমার কাছে একই জিনিস আসা করে। যদি আমরা দুজনই একে অপরের থেকে আসা করে থাকি তাহলে কেউ কি তা পাবে। সেখানে এমন একজন থাকা উচিত যে তা দেবে।
যদি দুজন পন করে বসে ও তাদের সেই কথায় অটল থাকে, কেউ নত না হয়। তাহলে এক সপ্তাহ, দু সপ্তাহ কেটে গেলেও তাদের ভেতর কিছু মেটে না। তারা একসাথে, এক বাড়িতে, একই ঘরে থাকে কিন্তু একে অন্যের সাথে কোন কথা বলে না। খাবার সময় হলে সামনে ভাত বেড়ে দেয়, অফিসে যাবার সময় টিফিন গুছিয়ে দেয়, আরও কিছু দরকার হলে তাদের ছেলে মেয়েকে ডেকে জিজ্ঞাসা করে “আমার ঐ জিনিষটা কোথায়”। তার মা পাশের ঘর থেকে বলে, “তোমার বাবাকে বল ওখানে রাখা আছে।”
অর্থাৎ তারা একে অপরের সাথে সব কথা বলে, তাদের ভেতর ভাব বিনিময় হয় কিন্তু মুখে কোন কথা হয় না।
তারা জানে কয়দিন পরে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে, কয়দিন পরে আবার কথা বলতে থাকবে। তারা সারাজীবন কথা না বলে একসাথে থাকতে পারবে না। তবে কয়দিন পরে যখন আবার কথা বলতে হবে তবে এখন থেকে কেন নয়। দুদিন পরে যখন আবার মিশতে হবে তবে এখন থেকে কেন নয়।
যেসব কিছু আমাকে আগে কথা বলতে বাধা দেয় :
( অ ) আমি আগে কেন ?
( আ ) কেন সে ক্ষমা চাইছে না ?
( ই ) কেন প্রতিবার আমাকে মানিয়ে নিতে হয় ?
এই প্রশ্নগুলির উত্তর না থাকলে বা না খুঁজে পেলে জোর করে তার সাথে গিয়ে কথা বলা যায় না। কারন সে মুখে কথা বললেও তার মন তখনও ভাবতে থাকে আমার কোন দোষ ছিল না।
যেসব কিছু আমাকে আগে কথা বলার সাহস দেয় :
( অ ) আমি নিজের জন্য করছি।
( আ ) আমি এই ভালবাসার মুখ।
( ই ) তার মনে পাপবোধ জাগতে দিও না।
( ঈ ) নিজেদের স্বপ্নগুলির কথা ভাব।
( উ ) পুরনো দিনগুলির কথা মনে কর।
( ঊ ) তার কষ্টের কথা জানার চেষ্টা কর।
( অ ) আমি নিজের জন্য করছি।
( অ ) আমি নিজের জন্য করছি।
আমি যদি মানিয়ে নেবার চেষ্টা করি তাহলে আমি তার জন্য করছি না, করছি আমার নিজের জন্য। কারন আমার কাছে এই সম্পর্কের গুরুত্ব আছে, এই সম্পর্কে আমি সুখ দেখতে চাই। তাই এই সম্পর্ককে সুন্দর করার জন্য আমাকে যা কিছু করতে হবে তা আমি শুধু আমার নিজের জন্য করছি।
আমার সবকিছু মানিয়ে নেবার ফল তার উপর পরে হবে, তবে প্রথমে তার ফল আমি পাব। মানিয়ে নিয়ে আমি তার উপর কোন উপকার করছি না, তবে আমি যে কথা দিয়েছিলাম শুধু তাকে পালন করছি।
আমি তাকে তার মনের সৌন্দর্যকে দেখাবার জন্য, আমি তাকে তার ভুলকে বাধা দেবার জন্য। তাহলে সে যদি কোন ভুল করে আর একজন তার সেই ভুল দূর করার দায়িত্ব নেয়। তখন সে সবকিছু মানিয়ে নেয় তার সঙ্গীর ভালো জন্য, কারন সে যদি মানিয়ে না নেয় তাহলে তার সঙ্গী কখনো তার ভুলকে বুঝতে পারবে।
যদি কোন ভুলকে ঠিক করার জন্য আর একটি ভুল করা হয় তাহলে তা কখনো ঠিক হয় না। কেউ রাস্তার wrong side দিয়ে গাড়ি চালালে নিজেও wrong side এ গিয়ে তার ভুলকে ঠিক করা যাবে না।
একজন তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করলেও তুমি যদি তার সাথে ভালো ব্যবহার কর তার মনে অপরাধবোধ জন্মায়। সে তো তোমারই, যার সাথে সারাজীবন একসাথে থাকার কথা দিয়েছিলে, যে তোমার একান্ত আপনজন। তুমি বাইরের কাউর সাথে কিছু করছ না যা করছ নিজের আপনজনের সাথে। বরং অন্যের থেকেও বেশি তুমি নিজের জন্যে করছ।
সেই তাদের ভালোবাসার সৃজন করে ও আর একজন শুধু তাতে সুন্দর হয়। সেই তাদের সম্পর্কে তাদের ভালবাসার মুখ।
( ই ) তার মনে পাপবোধ জাগতে দিও না।
( ই ) তার মনে পাপবোধ জাগতে দিও না।
তোমার মানিয়ে নেওয়া পরে কারোর মনে অপরাধবোধ জাগালে তোমার দায়িত্ব হওয়া উচিত সেই পাপবোধ যেন আর ডালপালা না মেলে। সে যেন নিজেকে আরও ছোট মনে না করে।
কেউ কোন ভুল কাজ করার পর, পরে সেই কাজটি ঠিক করার জন্য যে শক্তি দরকার হয় তাকে শাস্তি দিয়ে পরে তার সেই কাজটি করার শক্তি চলে যায়। কেউ যদি মনে করে সে ভুল করেছে তবে তার মনে যে পাপবোধ জন্মায় সেটিই তার শাস্তি। যদি তার পরে তার জন্য আরও শাস্তি রচনা করা হয় তাহলে তার অপরাধের জন্য তাকে বেশি শাস্তি দেওয়া হয় এবং সেই ভুলটি পরে শোধরাবার ক্ষমতাও চলে যায়।
যদি তুমি বুঝতে পার সে তার ভুলকে বুঝেছে ও অপরাধ বোধ করছে, কিন্তু ক্ষমা চাইতে পারছে না। তাহলে তাকে আর শাস্তি না দিয়ে, তার দোষকে বারবার তাকে মনে না করিয়ে তাকে তার অপরাধবোধকে দূর করে দাও।
তুমি তাকে ক্ষমা কর ও তাকে সাহায্য কর তাকে নিজেকে ক্ষমা করতে। যাতে সেই ভুলটা সে দ্বিতীয়বার না করে, যাতে সেই বোঝাপাড়ায় তোমাদের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী হয়।
নিজের মনের সাথে এই বোঝাপড়ায় আমি তার সাথে আগে কথা বলতে এগিয়ে আসব। যখন আমি দেখব সে বিবেক বিদ্বেষে জ্বলছে, আমার বিবেকবোধ আমাকে আগে তার সাথে কথা বলতে প্ররণ করবে।
( ঈ ) নিজেদের স্বপ্নগুলির কথা ভাব।
( ঈ ) নিজেদের স্বপ্নগুলির কথা ভাব।
সেই স্বপ্নগুলির কথা ভাব যে স্বপ্নগুলি দুজনে একসাথে দেখতে। যে স্বপ্নে দুজনের বৃদ্ধ বয়স অবধি একসাথে কাটাতে চাইতে। যে স্বপ্নে দুজন একসাথে থাকতে।
তবে এই ভাবে কি একসাথে থাকতে চাই ? একে অন্যের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে, সবসময় রাগারাগি করে। সম্পর্কের বোঝাপড়ার পিছুটান সয়ে কি আমরা সারাজীবন কাটাব ?
যে সপ্নে দুজন এক সাথে সুখে থাকতে দেখতে যখন বাস্তবে তাকে মলিন হতে দেখবে তখন সেই স্বপ্ন বাস্তবে সবকিছু ঠিক করার অনুপ্রেরনা দেবে। সবকিছু ঠিক করতে নিজে আগে এগিয়ে আসবে অন্যের sorry বলার অপেক্ষায় থাকবে না।
আজকের সমস্যা যদি আজকেই মিটিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে এর পরের দিনগুলি খুব ভালো হবে। যখন বৃদ্ধ বয়স আসবে, চুলে যখন পাক ধরবে তখন বৃদ্ধ বয়সের সমস্ত স্বপ্নগুলিকে সত্যি হতে দেখবে। তখন আগের সমস্ত দিনগুলির কথা মনে পরবে যে দিনগুলিতে মানিয়ে নেবার ফলে, দুজনের সম্পর্কের সমস্যাকে দূর করার ফলে আজকে সেই সব স্বপ্ন সত্যি হয়েছে।
( উ ) পুরনো দিনগুলির কথা মনে কর।
( উ ) পুরনো দিনগুলির কথা মনে কর।
জীবনে এমন কোন সময় এসেছে যেখানে তুমি মনে কর, “ ও আমার পাশে না থাকলে আমি কখনো এই কাজটি করতে পারতাম না”। যখন কেউ তোমার যোগ্যতার উপর বিশ্বাস করেনি, সে তোমাকে বিশ্বাস করে বলেছে তুমি পারবে। যখন সবাই তোমার সঙ্গ ছেড়ে দিলেও সে তোমার সঙ্গ কখনো ছাড়তে চাইনি।
যখন তুমি অসুস্হ ছিলে সে সারারাত তোমার কাছে বসে ছিল। তোমার ছোটখাট প্রয়োজনে যখন সে তোমার সাথে ছিল। যখন খুব অসুখে ছিলে সে যখন তার সব কাজ ছেড়ে দিয়ে তোমাকে সুস্হ করতে তোমার সাথে থেকেছে। তোমার চলার জন্য তার কাধ দিয়েছে।
সেই সবকিছু করেছে যার বিনিময়ে সে আজও কিছু চাইনি। যে ঋণের বোঝা তুমি মনে কর সাত জীবনের ভালবাসা দিয়েও শোধ করতে পারবে না।
আমরা যখন জীবনের বড় বড় পরিস্হিতিতে একসাথে কাটিয়ে এসেছি, আমার খারাপ সময়ে যখন সে আমার ছায়া হয়ে আমার সাথে ছিল। সেইসব দিন গুলির স্মৃতি আজকে তার একটা-দুটো কথা খারাপ লাগলেও তাকে ভুলিয়ে দিতে সাহায্য করবে এবং আমাকে আগে তার সাথে কথা বলতে প্রেরণ করবে।
( ঊ ) তার কষ্টের কথা জানার চেষ্টা কর।
( ঊ ) তার কষ্টের কথা জানার চেষ্টা কর।
আমাদের সমাজে অন্ধ ভালবাসার খুব বদনাম আছে। কেউ যদি কারোর কোন দোষ দেখতে না পারে তার অর্থ হয় সে তাকে অন্ধের মত ভালবাসে। আসলে সে যাকে ভালবাসে সে তার পুরোটাকে দেখতে পারে, যা আর কেউ দেখতে পারে না। তার কোন খারাপ ব্যবহারের পেছনে লুকিয়ে থাকা তার কোন পীড়া, তার কোন কষ্টকেও দেখতে পারে।
যদি কেউ অসুস্হ থাকে তাহলে তার ব্যবহার সুস্হ মানুষের মত হয় না। যে তার অসুস্হতার খবর জানে সে তার কাছ থেকে ভালো ব্যবহার না পেলেও সবসময় তার প্রতি নমনীয়তা বজায় রাখবে। তখন যদি তাকে অন্ধ নাম দেওয়া হয় তাহলে সে অন্ধ হয় না, অন্ধ তারা যারা তার অসুস্হতাকে দেখতে পাচ্ছে না।
যদি সে তোমার প্রতি খারাপ ব্যবহার করে তাহলে তার ব্যবহারে প্রভাবিত না হয়ে তার পেছনে তার কোন কষ্ট, কোন পীড়ার কথা জানতে পারি, তাহলে তাকে বুঝতে পারব। তা বুঝতে পারলে তার প্রতি ঘৃনার মনভাব দূর হয়ে, সহানুভুতির মনভাব জন্মাবে। তারপর তার সেই পীড়া ও কষ্ট দূর করতে তাকে সাহায্য করবে।
তবে তার কথায় যদি একটাই খারাপ লেগে যায় তাহলে তার কষ্টকে কখনো বুঝতে পারবে না। হয়ত অফিসে কোন কিছু ঘটেছে, বাইরের টেনশন ঘরে নিয়ে আসছে, কোন বিষয়ে কষ্ট পাচ্ছে।
সে আজকে খারাপ ব্যবহার করলে যদি প্রতিদিন খারাপ ব্যবহার না করে তাহলে তা তার স্বভাব নয়। কোন কারন তাকে জ্বালাতন করছে। তাই তার সম্পর্কে মনে খারাপ মনভাব পোষন করে তাকে মনের রাজ্য থেকে বের করে দেওয়া আমাদের ভালবাসার পরিচয় নয়।
যদি তার কষ্টের কথা জানতে পারি তাহলে, তার প্রতি সহানুভুতি, ও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে। তখন তার সামনে মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকতে ইচ্ছা করবে না, মনে হবে এক্ষুনি সবকিছু মিটিয়ে নেই।
নিজের সম্পর্ক ও ভালবাসাকে সুন্দর করার জন্য সবাই চেষ্টা করে, তবে সম্পর্ককে বাচানোর জন্য বা কোন মলিন সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখার জন্য কাজ করতে করতে অনেক সময় নিজে নিজের আত্ম পরিচয়ই হারিয়ে ফেলে। তার চেষ্টা ধীরে ধীরে তার মনের ও হৃদয়ের উন্নতি না করে তার নিজের কাছ থেকে নিজের পরিচয়ই হারিয়ে ফেলে। তার নিজের চোখে তার যে পরিচয় ছিল সেই পরিচয় মুছে গিয়ে যখন অন্য আর একজনের মুখ ( গালি গালাজ, অপমান ) থেকে তার যে নকল পরিচয় পায় যখন সে নিজেকে পৃথিবী থেকে ভুলতে শুরু করে। সেই সময় সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেষ্টা না করে তাকে সেই কাজই করা উচিত যা তার জন্য ঠিক।
যে জিনিসের প্রতি মায়া আমাদেরকে কষ্ট দেয়, যার সঙ্গ আমাদের জীবনকে দুর্বিসহ করে তোলে তখন আমাদের একটাই কাজ করা উচিত, তা হল, letting go।
আমাদের চেষ্টা হওয়া উচিত প্রতিদিন আমাদের সম্পর্ককে সুন্দর করে তোলা। তবে প্রতিদিন সেই সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা নয়। টিকিয়ে রাখার চেষ্টায় জীবনের শেষ দিন অবধি হয়ত সেই সম্পর্কটি টিকে থাকল তবে তার ফল কি তাদের দুজনের সুখ হবে ? যদি তারা তাদের সেই সম্পর্ক ভেঙে দিয়ে নিজেদের সুখ দেখতে পায় তাহলে তাদের সেই কাজই করা উচিত।
কেউ তাদের সম্পর্ককে সুন্দর করে নেবে নাকি ভেঙে দেবে তা সম্পুন্ন তাদের সিদ্ধান্ত। যদি তারা তাদের জীবনের ছোটখাটো ঝগড়া-ঝাটি, কথা-কাটাকাটি মেটাতে চায় তবে তারা এই বিশেষ কয়েকটি উপায়ে তাদের সেই বোঝাপড়া মেটাতে পারে।
অন্তিম কথা।
ভালো লাগে যখন কেউ তাদের সাংসারিক অশান্তি দূর করে তাদের সম্পর্ককে সুন্দর করে। যার সাথে আগে কোন কিছু মিলত না, যার সাথে প্রতিদিন কোন না কোন বিষয়ে রাগারাগি হত যখন তার সাথেই সবকিছু মিলতে এবং প্রতিদিন সুন্দর হতে দেখবে। আমাদের লজ্জা লাগে কাউর কাছে নত হতে, তাই মনের ভেতর সেই আশ্ন্তির বোঝা বয়ে বয়ে আমাদের হৃদয় দগ্ধ হতে থাকে।
চোখে যখন ভালবাসা থাকে তখন সে সূচী অসুচি কিছু বোঝে না, ঠিক ভুলও কিছু বোঝে না। তাই তখন তার প্রতি নত হওয়া তাদের কাছে অসম্মানের কিছু না। সেই সময় যদি কোন অভিমান তাদের মনে জেকে বসে তাহলে কিছু কাজ করে তারা তাদের মনের সেই ভাবগুলি দূর করতে পারে।
ভালবাসায় পাথরের বুকেও বীজের অঙ্কুরোদগম সম্ভব। তুমি তোমাদের জন্য কী কাজ করছ তার মূল্যও কেউ না দিলেও তুমি জানো।
সাংসারিক অশান্তির উপর চাই চাপা দিয়ে সাময়িক মঙ্গল সৃষ্টি হলেও তা স্থায়ী হয় না, যদি না সেই সমস্যা গোড়া থেকে মেটানো যায়। যখন দুজন দায়িত্ব নিয়ে সেই সমস্যা দূর করার চেষ্টা করে যাতে সেই সমস্যা জীবনে কখনো তাদের কাছে আর না আসে, সেই সময় তা গোড়া থেকে নির্মূল হয়। যাতে তাদের কালকের দিনটা আজকেই দিন থেকে আরও সুন্দর হয়।
বার বার অভিমান আমাদের ভালবাসার কলঙ্ক, দুজন সুখে থাকতে গেলে দুজনকে শুধু সেই অভিমানই সামলে চলতে হয়। অন্যের মনের উপর আমার কথার কতটা আঘাত সয়, তার ওজনবোধ থাকা দরকার। তার মনে যতটা আঘাত সয় তার থেকে বেশি জোর দিয়ে ফেলি, সেটা অন্যের পক্ষে কতটা অসহ্য তা মনে থাকে না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন