যদি কাউকে পছন্দ না করি তাকে ভালবাসা আমাদের কাছে সম্ভব বলে মনে হয় না। কারন জীবনের সবকিছু আমাদের পছন্দ মত তৈরী করি। যদি কোন কিছু আমাদের পছন্দ না হয় তবে তার প্রতি সেই মনভাব বজায় থাকে না।
কাউকে পছন্দ না হওয়া ভালবাসার শুন্যতা নয়। তুমি যাকে পছন্দ কর না তাকে কি তুমি ঘৃনা কর? যদি এই প্রশ্নের উত্তর ‘না’ হয় তবে তুমি তাকে ভালবাস। তার প্রতি তোমার ভালবাসার মনভাব বজায় না থাকলেও, তার প্রতি স্বাভাবিক মনভাব বজায় আছে। তাই তার প্রতি তোমার ভালবাসা পুরোপুরি শেষ হয়ে যায় নি, যদি তা হতো তাহলে তুমি তাকে ঘৃণা করতে।
এই স্বাভাবিক মনভাবকে ভালবাসার প্রতিও নিয়ে যাওয়া যায়, ঘৃণার প্রতিও ঘোরানো যায়, আবার তার প্রতি সারাজীবন স্বাভাবিক মনভাবও বজায় রাখা যায়। আমরা চাই আমাদের জীবনে যেই আসুক না কেন আমরা তাকে ভালবাসি ও তার কাছ থেকেও ভালবাসা ফিরে পাই।
তবে সবসময় আমরা আমাদের পছন্দ মত সবকিছু করতে পারি না, কিছু কিছু ঘটনা আমাদের ইচ্ছা ছাড়াই আমাদের সাথে ঘটে। যেমন অফিসে আমি যার সাথে কাজ করি তাকে পছন্দ না হওয়া অথবা কলেজে আমি যার সাথে নতুন প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছি তাকে পছন্দ না করা, আমি যার সাথে থাকি তাকে ভালো না বাসা ইত্যাদি। তবে তাদেরকে পছন্দ না হলে তাদেকে ছেড়ে চলে যাওয়া আমাদের কাছে সম্ভব হয় না। তখন আমাদের কাছে দুটি পথ বাকি থাকে, একটি তাদেরকে ভালবাসা ও আর একটি তাদের সাথে থেকেও সবসময় অস্বস্তি বোধ করা।
কাউর সাথে সবসময় অস্বস্তি বোধ করা থেকে কাউকে ভালোবাসতেই আমরা বেশি পছন্দ করি। কারন আমরা সবাই আমদের জীবনে শান্তি চাই। তাই কাউকে গ্রহন করা, কাউর সাথে মানিয়ে নেওয়া আমাদের প্রাথমিক প্রয়োজন হয়ে ওঠে। তবে কাউকে গ্রহন করা বা কাউকে স্বীকার করা আমাদের বাধ্যবাধিকতা নয়, সেটিও আমাদের ইচ্ছা। সেই ইচ্ছা কয়েকটি সহজ জিনিস বুঝেই আমরা পূরণ করতে পারি। যেমন ,
( ক ) একে অপরকে চেনার চেষ্টা করা।
( খ ) তার ভালো জিনিসগুলিকে দেখা।
( গ ) তার প্রতি সম্মান বজায় রাখা।
( ক ) একে অপরকে চেনার চেষ্টা করা।
কাউকে পছন্দ করা বা না করার পিছনে কি কারন আছে ?
আমরা কাউকে কেন পছন্দ করি ;
( অ ) তার সুন্দর ও আকর্ষনীয় ব্যক্তিত্ব,
( আ ) ভালো ব্যবহার,
( ই ) সৌজন্যবোধ।
এই তিনটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে আমরা কাউকে পছন্দ করি। যদি কাউকে পছন্দ না করি তার পেছনে এই তিনটি কারনই দায়ী থাকে, কাউর সুন্দর ও আকর্ষনীয় ব্যক্তিত্বকে বোঝার জন্য তাকেও একটু সময় দিতে হয়। সে সময়টুকু তাকে না দিয়ে তাকে যদি অপছন্দ করি তাহলে হয়ত একজন সুন্দর মানুষকে আমাদের জীবন থেকে বের করে দেব।
( i ) ব্যক্তিত্বের অস্ফুটন :
অনেক মানুষ আছে যাদের কাছে এক ফোটা ভালো কিছু থাকলেও সেই জিনিষটিকে বড়ো করে দেখাতে পারে, কিন্তু অনেকে তা দেখাতে পারে না তাদের দুর্বল ব্যক্তিত্বের কারনে। সেই কারনে আমরা তাকে অপছন্দ করে তাকে বাতিল করে দেই, তাই যদি কাউকে পছন্দ না হয় আমাকে তাকে চেনা উচিত, আরও ভালো করে জানা উচিত। এটাও হতে পারে আমি তাকে চিনি না তাই আমার তাকে পছন্দ হয় না। এটাও হতে পারে যখন আমি তাকে চিনতে থাকব তখন আমি তাকে পছন্দ করতে শুরু করব, কাউকে ভালবাসা বা কাউকে পছন্দ করার এটাই প্রথমপথ। এই পথটিকে অনুসরন করলে এর পরের প্রতিটি পদক্ষেপে আমরা সফলতা পাব।
জীবনে এমন ঘটনা অনেক সময়ই দেখা যায় যেখানে সম্পর্ক প্রনয়ে তৈরী হয় না তাদের সম্পর্ক arrange করা হয়। তখন তাদের জন্য তাদের পিতা মাতা তাদের সঙ্গীকে পছন্দ করেন। তখন সেই দুজন মানুষের একে অপরের প্রতি স্বাভাবিক মনভাব বজায় থাকে, তারপর এক সাথে থাকার সাথে সাথে যখন পরস্পরকে চিনতে শুরু করে তখন তাদের মনে ভালবাসা জন্মায় আর তাদের পরবর্তী জীবনও খুব ভালো হয়। প্রথমে তাদের মনে একে অপরের প্রতি ভালবাসা ছিল না, ছিল একটি স্বাভাবিক অনুভব। তখন তারা পরস্পরকে পছন্দ করেনি। ঠিক সেরকম যদি আমি বলি আমি তাকে পছন্দ করি না তার অর্থ আমার তাকে আরও চেনা উচিত, জানা উচিত। যদি তাকে ভালো ভাবে চিনতে পারি তাহলে সে আমার খুব ভালো লাগতে শুরু করবে।
( ii ) নিস্বার্থ সম্পর্ক:
এমন অনেক সম্পর্ক আছে যা আমরা কখনো নিজে পছন্দ করে তৈরী করি না, যেমন মা ও তার সন্তানের সম্পর্ক, মা কখনো পছন্দ করে তার সন্তানের সাথে ও সন্তানও কখনো পছন্দ করে তার মার সাথে সম্পর্ক তৈরী করে না, তবুও তাদের সম্পর্ক সবচেয়ে সুন্দর।
তারা একে অপরকে চেনা জানার প্রয়োজনবোধ করে না কারন যখন সে জানে সে কারোর মা, যখন সন্তান জানে আমি আমার মায়ের সন্তান। তখন সেই চেনা, জানার প্রশ্ন উঠে যায়, তখন তারা শুধু একটা জিনিসকেই চেনে আর বোঝে তা হল তাদের ভালবাসা। তাই মা ও তার সন্তানের সম্পর্ক যদি এমন সুন্দর হয় তাহলে অন্য সম্পর্ক গুলিও তেমন সুন্দর হতে পারে।
( iii ) অন্যের নামে নিজের পরিচয় :
যখন আমি নিজে নিজের পরিচয় অন্যের থেকে পাওয়া সম্পর্ক থেকে পাব। মা যেমন তার মা হবার নাম পেয়েছে তার সন্তানের পরিচয়ে, গৃহবধু যেমন তার নাম পায় একজনের সাথে সম্পর্ক গড়ার ফলে, স্বামীও তার নাম পায় কাউকে বিয়ে করার পরে। তেমনি আমাদের নাম যখন আমরা অন্যের থেকে পাওয়া পরিচয় থেকে পাব, আমারা তাদের প্রতি নিজেদের সেই ভালবাসা বজায় রাখব। তাই সেই সম্পর্ক পৃথিবীতে সুন্দর সম্পর্কের মধ্যে গোনা হবে।
অনেকে বলে স্বামী, স্ত্রীর সম্পর্ক এবং মা ও সন্তানের সম্পর্কের ভেতরে অনেক বৈষ্যম্য আছে, তাই এই দুটির তুলনা করা উচিত না। তবে মা ও সন্তান এবং স্বামী ও স্ত্রী দুটিই সম্পর্ক তাই মা ও সন্তানের ভেতরে যে নীতি কাজ করে করে তা অন্যান্য সম্পর্কের ভেতরেও কাজ করবে।
যদি কাউকে নিস্বার্থ ভালবাসা না যায় তবে তাকে চেনা ও জানার সুযোগ নিজেদেরকে দেওয়া উচিত। হয়ত তাকে চিনি না তাই তাকে পছন্দ করি না, যদি তাকে চিনতে পারি তাহলে হয়ত তাকে পছন্দ করব।
( iv ) যদি এর বিপরীত ফল হয় :
যদি তাকে চিনতে গিয়ে তাকে আরও অপছন্দ করতে শুরু করি, তাকে আরও বেশি ঘৃনা করতে শুরু করি তাহলে তাকে চেনার সেই সিদ্ধান্তের উপরে আমার কোন দুঃখ হওয়া উচিত নয়। কারন আমি সেই মানুষটিকে চিনতে শিখেছি, যার সাথে থাকব তার আসল পরিচয়ের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতে চেয়েছি। যখন তাকে চিনি না সেই মানুষটির সাথে থাকতে চায়নি। আমার সিদ্ধন্তের পরিনতিতে যদি আমি তার খারাপ দেখি তাহলে আমি তার আসল পরিচয়কে দেখেছি ও যদি তার ভালো দেখ তাহলেও আমি তার আসল পরিচয় পেয়েছি। তখন তার প্রতি ঘৃনা বা ভালবাসা জন্ম দিয়ে আসল মানুষকে ভালবাসছি সেই মানুষটিকে ভালবাসেনি যাকে আমি চিনি না।
( v ) তাকে চেনবার সুযোগ কেন দেব :
কাউকে অপছন্দ করার আগে নিজেকে তাকে একটু চেনার সুযোগ দাও বা তাকেও তোমার কাছে নিজের ভালো দিকটি দেখাবার সুযোগ দাও। হয়ত তোমার ব্যক্তিত্বের সামনে এসে সে তার স্বাভাবিক ব্যবহার করতে পারে না, হয়ত তোমার সাথে প্রথম পরিচয়ে সে ঘাবড়ে গেছে হয়ত পরবর্তী দিনে তার সাথে তোমার পরিচয় আজকের দিন থেকে আরো ভালো হবে। হয়ত কালকে আবার তার সাথেই দেখা করবে তবে কালকে একটু নতুনভাবে তাকে দেখবে, তার ভেতর একটি নতুন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষকে খুঁজে পাবে। তাকে হয়ত প্রথম পরিচয়ে বাতিল করে দিয়ে তুমি পৃথিবীর সুন্দর একজন ব্যক্তিত্বের সাথে দেখা করা থেকে নিজেকে বঞ্চিত করে রাখবে।
( খ ) তার ভালো জিনিসগুলিকে দেখা।
বাঙালি সমাজে একটি প্রথা প্রচলিত আছে, বিয়ে বা কোন সম্পর্ক তৈরী হবার সময় তাদের সেই দুজনের কুষ্ঠী বিচার করে তাদের জোটক মিলন করা হয়। যাতে এক জনের ৩৬টি গুনের সাথে আর একজনের ৩৬টি গুনের মিল দেখা হয়। যদি ৩৬ এর ভেতর কাউর সম্পর্ক ১৮ এর পার করে যায়, তার অর্থ হবে তারা দুজন একসাথে থাকতে পারবে, যদি ১৮ এর কম হয় তাহলে সেই সম্পর্ক গড়ে উঠবে না।
কাউর ৩৬ টি গুনের মধ্যে অন্তত একটি গুন তো তোমার সাথে মিলবে, অন্তত একটি গুন তোমার পছন্দ হবে, অন্তত একটি জিনিস তোমার ভালোলাগবে। সেই একটি জিনিস দিয়েই তুমি তোমার মনে তার ছবি আক।
( i ) কারোর ভালো দেখবার ক্ষমতা :
যে ভালো শিল্পী সে একটি পেনসিল দিয়েও একটি ভালো ছবি আকতে পারবে, তবে যে শিল্পী নয় তার হাতে বারোটি রঙের তুলি দিয়ে বসিয়ে দিলেও সে ভালো ছবি আকতে পারবে না।
যে ভালো রান্না করে তার হাতে কম দ্রব্য সামগ্রী থাকলেও সে তার রান্নায় স্বাদ আনতে পারবে, তবে যে রান্না করতে পারে না তার কাছে অনেক জিনিস এনে দিলেও সে ভালো রান্না করতে পারে না কারন সে সেই কাজে অভিজ্ঞ নয়।
তোমার যদি কাউর মধ্যে কোন ভালো কিছু দেখার ও তা দিয়ে তাকে ভালোবাসার ক্ষমতা না থাকে। তুমি যদি কাউর ভেতর একটি ভালো জিনিস দেখে তাকে ভালোবসতে না পার। তাহলে কাউর ভেতর অনেক ভালো কিছু খুঁজে পেলেও তাকে সেই তুলনায় ভালবাসতে পারবে না।
( ii ) নিস্বার্থ ভালবাসা যা শেখায় :
নিস্বার্থ ভালবাসা আমাদেরকে সেই শিল্পী হতে শেখায়। কাউর ভেতর একটি ভালো জিনিস দেখেও, একটি ভালো জিনিশ খুঁজে পেলেও সেই একটি ভালো জিনিস দিয়ে তার পুরো ছবি আকা। ভালবাসা আমাদেরকে তার ভেতরে যে জিনিস গুলি আমি পছন্দ করি সেই জিনিসগুলিকে খুঁজে বের করতে শেখায়, ভালবাসা আমাদেরকে চোখ দিয়ে, আমাদের মন দিয়ে তাকে নিজের আরও যোগ্য করে নেয়, তার ভেতর সেই গুনগুলি দেখে, নিজের চোখে তার ছবিকে একে তার শুধু ভালো জিনিস গুলির প্রশংসা করে, সেই ভালো জিনিস গুলিকে ভালোবেসে।
কাউকে পছন্দ না হলে তাকে ভালবাসা যায় তার ভেতর ভালো জিনিসকে খুঁজে। যদি বলি আমি তার খারাপ জিনিসগুলিকে পছন্দ করি না, আমি তার খারাপ জিনিসগুলিকে নিই না, আমি শুধু তার ভালো জিনিসগুলিকে দেখি, তাহলে অপছন্দ করা মানুষটি আমার কাছে খুব পছন্দের হয়ে উঠবে।
( iii ) তোমার যা ভালোলাগে :
আমার যে জিনিষটা ভালোলাগে তা আমি শুধু তার কাছে পেয়েছি। তার ৩৫ টি জিনিস যদি আমি অপছন্দ করি ও বাকি ১টি জিনিস আমি পছন্দ করতে পারি, তবে সেই একটি জিনিস আমি শুধু তার কাছেই খুঁজে পাব, যে একটি জিনিস আমি কাউর কাছে খুঁজে পায় নি। তাই সেই আমার জন্য বেস্ট, কারন আমার যা দরকার, আমার যা ভালো লাগে, আমি সেই একটি জিনিস শুধু তার কাছ থেকেই পেয়েছি, আর কাউর কাছ থেকে পায়নি।
যদি প্রতিদিন তার ভেতর একটি একটি করে ভালো জিনিস দেখতে থাকি, ভালো জিনিস খুজতে থাকি, তাহলে প্রতিদিন সেই অপছন্দের মানুষটি ধীরে ধীরে আমার কাছে খুব পছন্দের হয়ে উঠবে। তাই, ( ক ) তাকে চেনবার সুযোগ দেওয়া, ( খ ) তার ভেতর একটি ভালো জিনিস খুঁজে পেয়ে, সেই একটি ভালো জিনিস দিয়ে তার পুরো ছবি আকা। তার কাছে তোমার যে জিনিসটি দরকার সেই একটি জিনিস তার কাছে খুঁজে পেলে, যা তুমি আর কাউর কাছে খুঁজে পাওনি, তাহলে তুমি সেই একটি জিনিস নিয়েই থাক।
একটি গাছ আমদেরকে অনেক কিছু দেয়। গাছ আমাদের অক্সিজেন দেয়, ফল দেয়, ফুল দেয়। গাছের আঠাও অনেক কাজে ব্যবহার করা হয়। তবে কোন গাছ থেকে আমাদের যে জিনিষটা দরকার, যে জিনিষটা ভালবাসি সেই জিনিসটাই আমরা নিই। যেমন আমরা আম গাছের ফল ভালবাসি, তাই তার ফলকে নিই, তবে আমের পল্লব বা মুকুল কেউ খায় না। গোলাপ গাছ থেকে আমরা তার ফল নিই না, কারন আমরা তার ফুলকে ভালবাসি। আমরা গদ গাছ থেকে তার আঠা নেই কারন সেই আঠা আমাদের কাজে লাগে।
ঠিক যেমন কোন গাছ থেকে আমরা তার যে জিনিষটা ভালবাসি শুধু সেই জিনিসটাকে নেই। সেই জিনিসটার জন্যেই সেই গাছকে আমাদের জীবনে প্রধান্য দেই। ঠিক সেরকম কোন মানুষের মধ্যে যেই জিনিসটাকে ভালবাসি আমরা যদি শুধু সেই জিনিষটাকে গ্রহন করি, সেই জিনিষটার জন্য আমরা আমদের জীবনে তাদের প্রধান্য দেই, তাবে সে সবসময় আমদের কাছে আমাদের পছন্দের হয়ে থাকবে।
( iv ) কারোর ভালো মন্দ দুটোকেই গ্রহন করতে হয় :
তবে ভালোবাসতে গেলে, একসাথে থাকতে গেলে আমাদের কাউর ভালো মন্দ দুটোই গ্রহন করতে হয়, দুটো জিনিসকেই সহ্য করতে হয়। আমরা সবসময় কাউর ভালো জিনিসটিকে নিয়ে থাকতে পারি না, কারন কয়দিন পরে তার খারাপ কোন দিক আমাদের কাছে এসে দারাবে। সে তার স্বভাবের কোন খারাপ দিকটা আমার কাছে লুকিয়ে রাখতে পারবে না, ও আমার স্বভাবের খারাপ কোন কিছু তার কাছে লুকানো থাকবে না। কারন আমাদের সম্পর্ক প্রত্যক্ষ, প্রতিদিন নতুন কিছু আমাদের কাছে সবসময় নতুন করে প্রকাশ পাবে। প্রতিদিন আমরা পরস্পরের কাছে আরও নতুন হয়ে উঠব, আর সেই চেনা, জানার পথটি আমাদের কাছে প্রতিদিন নতুন হয়ে থাকবে।
একথা ঠিক যে আমাদের খারাপ দিকটি অন্য কাউর কাছে কখনো লুকানো থাকবে না, তার স্বভাবের যে জিনিষটা আমি পছন্দ করি না, সেটা তার সাথে থাকতে থাকতে আমার কাছে বার বার উঠে আসবে। তবে তার অর্থ এটা না আমরা তার খারাপ জিনিসটাকে দেখব না, তার কোন খারাপ জিনিস খুঁজে পেলে আমরা চোখ বন্দ করে নেব।
( v ) কারোর খারাপ কিছুকে নিও না :
তার খারাপ জিনিসকে দেখব জানব তবে তাকে গ্রহন করব না অর্থাৎ তার কোন খারাপ জিনিস আমার মনে কোন খারাপ অনুভব জাগাবে না। আমি তার দুর্বলতাকে দেখব, জানব তবে সেই দুর্বলতা আমার মনকে, তার প্রতি ভালোবাসাকে দুর্বল করবে না। তার প্রতি অনুভবকে দুর্বল করবে না। তার ভেতর যে ভালো জিনিষটি থাকবে আমি সেই ভালো জিনিস দিয়ে তার প্রতি আমার অনুভবকে তৈরী করে তুলব। যেমন ভাবে আম গাছের মুকুল ও ফল দুটোই হয় তবে ফুলকে কেটে কেউ খায় না, আমরা তার পরবর্তিতে যে আম হয় আমরা সেই আমকে খাই। আমরা সেই মুকুলকে গ্রহন করি না আমরা তার ফলকে গ্রহন করি।
ঠিক যেমন আমরা আম গাছের ফলকে গ্রহন করি তার মুকুলকে ফলতে দিই, ঠিক তেমনি আমারা কাউর সাথে থাকলে তার ভালো জিনিসটিকে গ্রহন করব আর খারাপ জিনিসকে শুধু দেখব। তবে সেই খারাপ জিনিস আমাদের মনে কোন খারাপ অনুভব জাগাবে না।
( v ) যদি তা সম্ভব হয় :
কাউর প্রতি এই অনুভব যদি আমাদের জন্মায় তবে নিশ্চয় সে আমাদের কাছে খুব পছন্দের হয়ে উঠবে। কাউকে যদি এই চোখে দেখা হয়, কাউর সম্পর্কে নিজের মনে যদি এই অনুভব তৈরী করি, তবে নিশ্চয় সে আমার জীবনে খুব পছন্দের হয়ে উঠবে। আমি যাকে পছন্দ করেছি তাকে এই চোখে দেখলে হয়ত আমি তাকে আরও বেশি পছন্দ করতে পারব, আরও বেশি ভালবাসতে পারব।
একদিন একটি ছোট ছেলে তার মার কাছে বসে খেলা করছে। তার মা চেয়ারে বসে একটি আসনে এমব্রয়ডারির কাজ করছিল। ছেলেটি খেলতে খেলতে বারবার তার মার দিকে তাকাচ্ছে, দেখছে তার মা হাতে একটি আসন নিয়ে তাতে কেমন সব নকশা আকছে। প্রতিবার যেন সেই সুচ আর সুতো সেই আসনটিকে আরও নষ্ট করে দিচ্ছে, তাতে আসনটিকে দেখতে যেন আরও খারাপ লাগছে। ছেলেটি খেলতে থাকল সেই আসনটির দিকে বেশি নজর দিল না। তার মার সেই আসনটি সেলাই করা শেষ হলে, সে তার ছেলেকে দেখিয়ে বলল, ‘দেখ তো সোনা কেমন লাগছে’। সে দেখল সেই আসনের উপর খুব সুন্দর একটি নকশা। প্রথমে যা তার ভালো লাগেনি কারন সে তখন আসনের পিছনের দিক দিয়ে দেখছিল, আসনের সামনে টা দেখেনি। কারন আসনের যে দিকে নকশা আকা হয়, সেই দিক দিয়েই তার সৌন্দর্যকে লক্ষ করতে হয়, তার বিপরীত দিক দিয়ে তাকে দেখে বোঝা যায় না। তেমনি মানুষের যে দিকটা ভালো সেই দিক দিয়েই তাকে লক্ষ্য করতে হয়, তার বিপরীত দিক দিয়ে তাকে দেখতে খারাপ লাগে।
( গ ) তার প্রতি সম্মান বজায় রাখা।
ভালবাসা আমাদের কাছে খুব পোশাকী, যাকে ভালবাসি তাকে অনেক কিছু দিতে ইচ্ছা করি, নিজের ভালো জিনিসের নির্যাসটুকু তার সাথে শেয়ার করি। তবে যাকে পছন্দ করি না, তাকে সেই সবকিছু থেকে বাতিল করে রাখি, তার বিন্দু, বিসর্গ দিতে চাই না, কারন তাকে আমি পছন্দ করে নিয়ে আসেনি।
কোন কারনবসত নিজের ভাগ্য যদি কাউর সাথে জুড়ে যায়, যাকে পছন্দ না করা সত্বেও তার সাথে থাকতে হবে। তাহলে তাকে সেই সবকিছু থেকে বাতিল করে শুধু না তাকে তার পায়না থেকে বঞ্চিত করি, নিজের মনে ভালবাসার যে গুন আছে তাকেও মেরে ফেলি।
চোখে অনেক বছর আলো না পরলে চোখ অন্ধ হয়ে যায়, তেমনি কাউর প্রতি নিজের ভালোবাসাকে আড়াল করে রাখলে তা নিজের মনের মধ্যেই শুকিয়ে মরে যায়।
তারপর সে আর কাউকে ভালবাসতে পারে না, তখন সে কাউকে চেয়েও পছন্দ করতে পারে না, সে নিজেকে সারাজীবন অসুস্থ করে রাখে।
( i ) সারাজীবন একা থাকলেও নিজেদের একটি সুযোগ দিতে চাই না :
কাউকে পছন্দ না হলে তাকে ছেড়ে চলে যাই, সারাজীবন একা থাকার কথা ভেবে নেই, তবে সে সম্পর্ককে আরও একবার সুযোগ দিতে চাই না। আমরা কাউকে ভালবাসতে না পারলে, আমরা অসুস্হ। কাউর প্রতি কোন কিছু অনুভব না করলে আমরা সুস্হ নই, সেই অসুস্হতাকে আমরা আমাদের পরিচয় করে তুলি তবে নিজেদেরকে আরও একবার সুযোগ দিই না।
আমরা যদি চাই নিজেদেরকে আরও একবার সুযোগ দিতে, যাকে পছন্দ করেনি তাকে চেনার ও জানার আরও একটি সুযোগ দিতে তাহলে হয়ত এইবার তাকে ভালবাসতে পারবে।
রবার্ট ব্রুস তার শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করে সাতবার অসফল হবার পরে একটি গুহায় গিয়ে লুকিয়ে ছিল। সেই গুহায় সে দেখল একটি মাকশা দেবালে বার বার চরবার চেষ্টা করছে। কিন্তু সে বার বার সেখান থেকে নিচে পরে যাচ্ছে এবং সপ্তমবারে সেই দেবাল চড়তে সফল হয়। তার থেকে রবার্ট ব্রুস অনুপ্রেরনা পায় তার শত্রুদের বিরুদ্ধে আবার যুদ্ধ করতে, নিজের ভাগ্যকে আরও একবার সুযোগ দিতে।
তেমনি একবার অসফল হবার পরেও আমরা সেই সম্পর্ককে আরও একবার সুযোগ দিতে পারি। হয়ত প্রথমবার বার অসফল হবার পরে এইবার আমি তাতে সফল হবে। এই নতুন সুযোগে হয়ত আমাদের মধ্যে সব দুঃখ, অশান্তি দূর হয়ে যাবে।
( ii ) একসাথে থাকার চেষ্টা :
আমরা নিজেদেরকে সুযোগ না দিযে নিজের হারকে স্বীকার করে সারাজীবন একা থাকার সাহস দেখাতে পারি। কিন্তু কাউকে আর একবার সুযোগ দিতে চাই না। যতখানি সাহস একা থাকার সিদ্ধান্তে নিতে হয়, ততখানি সাহস যদি একসাথে থাকার চেষ্টায় করা হয় তাহলে তাতে তার জোর আরও বেড়ে যায়। আমরা হেরে গিয়ে একা থাকার সিন্ধান্তকে মেনে না নিয়ে যতবার খুশি নিজেদেরকে আরও একবার সুযোগ দিতে পারি কারন তাতে সফল হবার চেষ্টা শুধু আমাদের জন্যে। যে সমস্ত কিছু আমাদের সম্পর্কের অশান্তির কারন তাকে দূর করতে পারি।
( iii ) পছন্দ না করলে অন্তত সম্মান কর :
একদিন একজন মেয়ের বিয়ে হয়ে যায় তার বয়সের দ্বিগুন বয়সী একজনের সাথে। সে লোকটি সেই মেয়েটিকে যতটা ভালবাসত, সেই মেয়েটি কখনও তাকে ততটা ভালবাসতে পারেনি তবে সে তাকে সম্মান করত। তাকে সম্মান করার জন্য জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তারা একসাথে ছিল।
তাই যদি কাউকে পছন্দ না হয়, তাকে ভালবাসতে না পার অন্তত তাকে সম্মান কর। সম্মান কর সে একজন মানুষ হবার জন্য, তার নিজের একটা পরিচয় থাকার জন্য, তার ভালো কিছুকে শ্রদ্ধা করার জন্য। যদি সম্মান করতে পার, তাহলে তাকে না চেয়েও সারাজীবন ধরে তাকে ভালবাসতে থাকবে। কারন ভালবাসা ও সম্মান হাতে হাতে আসে। যদি তাকে সম্মান কর তুমি তাকে ভালবাসবে, তবে তুমি জানবে না তুমি তাকে ভালবাসছ, তুমি জানবে তুমি তাকে সম্মান করছ। একে অপরের প্রতি সেই সম্মানটুকু তোমাদের দুজনকে সারাজীবন একসাথে রাখবে।
( iv ) সম্মান ভালবাসার চেয়ে আলাদা কিছু নয় :
সুখ, শান্তি, ভালবাসা একে অন্যের থেকে আলাদা কিছু নয়, সেগুলি একই সারিতে দাড়িয়ে থাকা অনুভুতি। যদি একটাকে গ্রহন করতে পার তবেই বাকি অন্য সবকিছু তার সাথে সাথে আসবে। যদি মানুষ হবার জন্য কাউর প্রতি সামন্যটুকু সম্মান না করা যায়, তাহলে তাকে ভালো চোখে দেখ, যদি তা না করা যায়, তবে তার কাছে ভদ্রতা দেখাও কারন সুখ, শান্তি, স্নেহ, মায়া মমতা ভালবাসারই অন্য নাম।
ভালবাসা পোশাকী, ভালবাসা সাজগোচ যা নিজের চোখের সামনে সাজিয়ে রাখার মত, তবে ভালবাসার পেছনে থাকে বিশ্বাস, স্নেহ, মায়া, মমতা, কৃতজ্ঞতাবোধ, দায়িত্ববোধ, প্রতিশ্রতি পালন ইত্যাদি। ভালবাসার সেই পোশাখী রূপ না দেখে যদি সেই অনুভবগুলিকে নিজের জীবনে গ্রহন করা যায়, সেই অনুভবের একটিকেও অনুসরন করে চলা যায়, সেই একটিকেও নিজের সম্পর্কের নাম দেওয়া যায় তাহলে তা দুজনকে সারাজীবন সাথে রাখার কথা দেয়।
( v ) ভালবাসায় ধারাবাহিকতা রাখ :
যদি সেইসব কোন কিছু গ্রহন করা না যায় তবে তার প্রতি স্বাভাবিক মনভাব রাখ। যেন তার প্রতি কখনো ঘৃনা না জন্মায়। কাউকে অপছন্দ করার অর্থ যদি ঘৃনা না হয় তাহলে তার প্রতি তোমার ভালবাসা আছে। ভালবাসা ও ঘৃনার মাঝখানের রেখায় তুমি দাড়িয়ে আছ। সেখান থেকে কখনো যেন তুমি ঘৃনায় না যাও বা তার স্বভাবের কোন কিছু তোমার মনকে যেন ঘৃনার প্রতি নিয়ে না যায়।
তার প্রতি তোমার অনুভব যেন বেশি বা কম না হয়ে একটি স্বাভাবিক তরঙ্গে বইতে থাকে। তার প্রতি তোমার অনুভবের ধারাবাহিকতা থাকে। আজকে তার খারাপ দেখলে তা শেষ হয়ে যায়, কালকে তার ভালো দেখলে যদি ভালবাসা উপরে পড়তে তাকে তাহলে তা হল শুধু মানসিক চঞ্চলতা। যে কাউর প্রতি তার মনে ভালবাসার ধারাবাহিকতা রাখে সেই তখন তাকে ভালোবাসে।
কোন কাজে আমাদের মন তখন বসে যখন সে কাজে আমাদের মন ও বুদ্ধি কেন্দ্রীত থাকে। আমরা অন্যের জন্যে যা কাজ করি তা যদি অন্তর দিয়ে অনুভব করি তাহলে মন শুধু তার কাছেই থাকে।
ঠিক তেমনি যার সাথে থাকি, যার জন্য কাজ করি, যার সাথে ভালোভাবে কথা বলি, সে সব কিছু যদি মন থেকে করি তাহলে মন শুধু তার সাথে থাকে। যদি সে কাজ করার সময়, তার সাথে কথা বলার সময় তাতে সে ভালো অনুভব করে না তবে সেখানে কখনো তার মন বসে না। তার মন যখন অমনযোগী হয়ে ওঠে, তার জায়গা থেকে সে অন্য জায়গাকে সবসময় ভালো মনে করে।
তখন সে সেই জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে চায়। সে যেখানে আছে, যার সাথে আছে যদি তার মন শুধু তার সাথে থাকে, তার মন অন্য কিছু দেখতে পায় না। তখন তার কাছে সেটাই তার সবকিছু হয়, তার পৃথিবী বলতে সে তার জায়গাটিকেই বোঝে।
স্বামীজি শিকাগো শহরে বক্তৃতা দিতে গিয়ে একটি কুয়োর ব্যাঙের সাথে সুমুদ্রের ব্যাঙের তুলনা করেছিলেন। কোন কারনবসত সুমুদ্রের ব্যাঙটি কুয়োর ব্যাঙের কাছে এসে পরেছিল। যখন তাদের দুজনের দেখা হল কুয়োর ব্যাঙটি এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় লাফিয়ে গিয়ে তার বন্ধুকে বলল, ‘তোমাদের সুমুদ্রে কী এত বড় জায়গা আছে’। তখন সুমুদ্রের ব্যাঙটি বলল, ‘কুয়োর সাথে সুমুদের তুলনা কি করব, সুমুদ্র সে তো অনেক বড়’। কুয়োর ব্যাঙটি তার কথার উপর সন্দেহ করল, নিশ্চয় সে মিথ্যে কথা বলছে ! তার মতে, তার কুয়োর থেকে বড় জায়গা আর কোথাও হতে পারে না।
এ দুজনের মধ্যে কে ঠিক ? কেউ ঠিক না কারন তারা তাদের নিজেদের জায়গাটিকে সবচেয়ে ভালো মনে করে। কেউ যার সাথেই থাকুক না কেন সেই তার কাছে সবকিছু কারন সে তার নিজের জায়গাটিকে সবকিছু মনে করে। যদি তার সবকিছু তার সাথে থাকে, তাহলে সেই তার পৃথিবী হবে। বাইরের কেউ এসে যখন তাকে বলবে, ‘ আমি তোমার থেকে আরও ভালো জায়গায় আছি’ তখন সে তার কথাকে বিশ্বাস করবে না, সে বিশ্বাস করবে সে যার সাথে আছে তার থেকে ভালো আর কিছু হতে পারে না। কারন তার কাছে সেই মানুষটিই সব, তার মন শুধু সেই মানুষটির সাথে আছে, সে শুধু সেই মানুষটিকে দেখে। কারন তার মানবিক, অমানবিক উভয় দুটি জিনিসই তার কাছে বন্দক রাখা আছে।
( i ) আমাদের ক্ষমতা :
কেউ তার জীবন কাটাবার জন্য যেমন মানুষই পাক না কেন, কেউ তার স্কুলে বা কলেজে যেমন বন্ধুই পাক না কেন, কেউ তার অফিসে যেমন কলিং, যেমন বস হোক না কেন, সে যদি চায় সেই জায়গায় সে নিজের জন্য সবচেয়ে যোগ্য, সবচেয়ে আদর্শ, সবচেয়ে নীতিবাচক করে তুলতে পারবে। কারন কোন জায়গা, কোন মানুষ কখনো আমাদের জীবনে তার জায়গা করে নেয় না। আমরা নিজের চোখ দিয়ে তাকে নিজের যোগ্য করে নেই।
কারোর যতই গুন হোক না কেন আমাদের ক্ষমতা না থাকলে আমরা তাকে নিজের যোগ্য করে না তুলতে পারব না। কয়েকটি ছোটখাটো জিনিস যা বুঝে আমরা তাদের সাথে আমাদের জীবনকে সহজ করে তুলতে পারি, তাদের সাথে আমাদের জীবনকে নতুন ভাবে সাজাতে পারি, তাদের সাথেই নিজের বৃদ্ধ বয়সকে দেখতে পারি। তা তাদের ক্ষমতা না, তা শুধু আমাদের ক্ষমতা। আমরা চেয়েছি তাই তাকে আমাদের জীবনে জায়গা দিয়েছি আমরা যদি না চাই তো জায়গা দিতাম না।
( ii ) জীবনে চলার দুটি পথ :
জীবনে চলার দুটি পথ আছে,১ ) চলতে চলতে যাকে কাছে পেয়ে যাই তাকেই নিজের সাথী করে নেওয়া, আর ২ ) যাকে সাথে পাই তাকে সাথী না বানিয়ে তার থেকেও আরও ভালো কিছু খোজার চেষ্টা করা।
এই দুটি পথের মধ্যে যে তার চলার পথে যাকে সাথী পায় তাকেই তার সাথী করে নেয়, তাকে আর কোন কিছু খুজতে হয় না, অন্যরা যাকে খুজছে সে তাকে নিয়ে তার জীবনে এগিয়ে চলছে। ও যে যাকে সাথে পায় তাকে সাথী না করে তার থেকেও আরও ভালো কেউ খোজার চেষ্টা করে, খুজতে থাকে সে তার থেকে আরও ভালো কাউকে খুঁজে পেলেও তারা ভাবতে থাকে যদি এর থেকেও আরও ভালো কাউকে খুঁজে পেতাম।
যারা কাউকে পেয়ে তার সাথে তার জীবনকে অনুভব করছে, সেই রকম মানুষ তখনও নিজের জীবনসঙ্গীকে খুজতে থাকে, নিজের জন্য আরও ভালো জায়গা খুজতে থাকে, নিজের জন্য আরও ভালো অফিস খুজতে থাকে, নিজের জন্য আরও ভালো বন্ধু খুজতে থাকে।
( iii ) ক্ষমতা আমাদের হাতে থাকে :
কাউর সাথে আমাদের জীবনকে সুন্দর করে তোলার ক্ষমতা সম্পুন্ন আমাদের হাতে, যা সম্পুন্ন আমাদের পছন্দ, আমরা যাকে সাথে পেয়েছি তার সাথে থাকে নিজের জীবনকে দেখব, নাকি তার থেকে আরও ভালো জায়গা খুজব।
যদি সে তার সাথে থাকতে পছন্দ করে, তবে যে কয়টি ছোট বোঝাপরা তাদেরকে করতে হয় সে কয়েকটি বোঝা পরা গুলির নাম হল তাকে চেনা, তার ভেতর আরও ভালো কিছু দেখা, তাকে সম্মান করা, নিজের সাথে সাথে নিজের মনকেও তার সাথে রাখা ইত্যাদি। এ কয়টি বিষয় বুঝতে পারলে আমরা তার সাথে আমাদের সুখকে দেখতে পারি, আমাদের ভালবাসাকে তরান্বিত করতে পারি, তার সাথে আমাদের বৃদ্ধ বয়স অবধি কাটাবার স্বপ্ন দেখতে পারি, সেই জায়গাকেই নিজের ছোট্ট পৃথিবী করে তুলতে পারি।
( iv ) নিজেদের সাথে কারোর তুলনা করো না :
আমাদের সেই ছোট্ট পৃথিবী তখনই হারিয়ে যায় যখন আমরা নিজের পৃথিবীর সাথে অন্য কাউর পৃথিবীর তুলনা করি। তখন নিজের জায়গা থেকে অন্য কাউর জায়গাকে সবসময় ভালো মনে হয়। তাই নিজের সম্পর্কের সাথে অন্য কাউর সম্পর্কের তুলনা করতে নেই। কারন প্রতিটি সম্পর্ক নিজে নিজের জায়গা থেকেই সবচেয়ে বেশি সুন্দর।
শিশুকে তার মার কোলে দেখতেই সবচেয়ে ভালো লাগে, অন্য কাউর কাছে নয়। একজন স্ত্রীকে তার স্বামীর সাথে থাকতেই ভালোলাগে, স্বামীকে তার পরিবারের সাথে থাকতেই বেশি ভালোলাগে, অন্য কাউর সাথে নয়। কারন সেই প্রতিটি সম্পর্ক তার নিজস্ব জায়গায়ই সবচেয়ে সুন্দর। অন্য কাউর সাথে সে সুন্দর নয়, কারন তার ‘মা’ নাম তার সন্তানের জন্যে, স্বামী ও স্ত্রীর নামও কাউর সাথে সম্পর্ক তৈরী করার পরিনামে। তাই নিজেদেরকে কাউর সাথে তুলনা না করে নিজের মনকে কয়েকটি কথা বোঝাবার চেষ্টা করি, তবে নিশ্চয় যাকে পছন্দ হয় না সেই আমাদের খুব পছন্দের পাত্র হয়ে উঠবে।
যাকে পছন্দ হয় না তাকে ভালবাসা তো কখনো যায় না, যাকে পছন্দ হয় না তাকে আবার পছন্দ করা যায় আর পছন্দ হলে তাকে ভালোবাসাও যায়।
( v ) কার সাথে মানিয়ে চলি :
কাউকে পছন্দ না হলে কিভাবে তাকে ভালবাসা যায় এই প্রশ্নের উত্তর আমরা তখন খুজি যখন তাকে ছেড়ে চলে যেতে পারি না। যদি চলে যেতে পারতাম তাহলে তাকে পছন্দ না হলে সঙ্গে সঙ্গে তার কাছ থেকে সরে আসতাম। যেমন, আমরা যার সাথে কাজ করি, যার সাথে থাকি বা আমাদের কলেজ বা অফিসের বন্ধু।
( ঙ ) অস্বীকৃতি
( ক ) একে অপরকে চেনার চেষ্টা করা।
কাউকে অপছন্দ করার পেছনে কয়েকটি কারন থাকে প্রথম, তাকে না চেনা। তাই তাকে চেনার সুযোগ আমাদের দেওয়া উচিত। তবে সেটিই দুজনের সম্পর্কের মুখ্য উদ্দেশ্য না, কারন সে সম্পর্ককে সুন্দর করার দায়িত্ব সেই দুজন মানুষের উপরেও থাকে। কাউর স্বভাবে যদি কাউর সাথে বন্ধুত্ব করার প্রবনতা না থাকে তবে তাকে যতই চেনার সুযোগ দেওয়া হোক না কেন, তাকে চেনার সুযোগ দেওয়া আমাদের পক্ষে ততটা সার্থক হয় না।
( খ ) তার ভালো জিনিসগুলিকে দেখা।
আমারা যার সাথে থাকি তাকে যদি পছন্দ না করি, তার সাথে থাকার সময় অসুস্হবোধ করি, তাহলে নিজের মনের অশান্তি দূর করার জন্য নানান উপায় খুঁজে বার করার চেষ্টা করি। তখন তার প্রতি ভালো অনুভব রাখার জন্য আমাদের তাদের মধ্যে ভালো জিনিসকে দেখা উচিত। কাউর সাথে নিজের সম্পর্ককে ভালো করার উপায় তার মধ্যে ভালো কিছু খোজা ও দেখা। তবে দুজনের সম্পর্ক কেমন হবে তা সেই দুজনের উপরের সম্পুন্ন নির্ভর করে।
ঘরের দেওয়ালে দুদিকের দুটি জানলা খোলা থাকলেই বাইরের হওয়া, বাতাস সহজে যাতায়াত করতে পারে। তবে একটি জানলা বন্ধ থাকলে তা দিয়ে সে তুলনায় হওয়া বাতাস আসতে পারে না। তাই সম্পর্কে দুজনই যখন একে অপরের প্রতি একই রকম ভাব রাখে তখনি তাদের সম্পর্ক সুন্দর হয়।
( গ ) তার প্রতি সম্মান বজায় রাখা।
আমাদের ব্যক্তিত্বের সৌন্দর্য হল সৌজন্যবোধ। আমারদের কাউর প্রতি ব্যবহার করার আর্ট যা আমাদের সৌজন্যবোধ, যা আমাদের ব্যক্তিত্বের সৌন্দর্য। যাকে অপছন্দ করি তার সাথে নিজের ব্যক্তিত্বকে, নিজের সৌজন্যবোধকে প্রকাশ করতে পারি না, তবে তার উপর শুধু সম্মান রাখতে পারার জন্য সেই সৌজন্যবোধ আমাদের ব্যক্তিত্বে ফুটে ওঠে।
তবে এই ব্যস্ততাপূর্ণ পৃথিবীতে দুজনের মধ্যে এমন অনেক কিছু থাকবে যা শুধু সম্মানে গড়ে উঠবে না, তাকে গড়ে তুলতে গেলে আরও অনেক কিছু তাদের দুজনকে খুঁজে দেখতে হবে, আরও অনেক উপায় অনুসরন করতে হবে।
কোন এক জায়গায় আমাদের মন কেন্দ্রিত থাকলে আমাদের মন সে জায়গা থেকে আর কোন কিছু দেখবার ও বুঝবার সুযোগ পায় না। তাই মন সেই জায়গাকেই নিজের জন্য আদর্শ মনে করে। নিজে নিজেকে খারাপ জায়গায় রাখলেও সে যদি তার খারাপটাকে না দেখতে পায়, তাহলে সে খারাপ জায়গায় থেকেও সে থাকে ভালো মনে করবে।
যদি সেই জায়গা থাকা তার ক্ষতি করে তবে সে জায়গার বাইরে চলে আসাই তার জন্যে ভালো। জীবন একটাই জীবনকে সুন্দর করার জন্য, জীবনকে উপভোগ করার জন্য আমরা আমাদের জন্য সবচেয়ে ভালো জায়গাকে খুজতে চাই, ভালো জায়গায় থাকতে চাই, অথবা নিজের জায়গাকে নিজের জন্য ভালো করে নেই। তবে সেই জায়গা যদি নিজের জন্য ভালো না হয় তবে ভালো জায়গা খোজাই আমাদের কর্তব্য।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন