শুক্রবার, ১ জানুয়ারী, ২০১৬

পারস্পরিক সহযোগিতা কিভাবে আমাদের জীবনকে ঈশ্বরের আশির্বাদ ধন্য করে তোলে?

কিভাবে ভালবাসা আমদের জীবনে আশির্বাদ হয়ে ওঠে

    আমরা সবাই চাই আমাদের সাথে যার সম্পর্ক তৈরী হোক না কেন, তার সাথে আমাদের জীবন যেন খুব সুন্দর হয়। ভালবাসা আমাদের কাছে আশির্বাদ হয়ে ওঠে।
     কখনো আমরা এমন কোন সম্পর্ক দেখি যারা সবসময় একসাথে থাকে, তাদের মধ্যে কখনো ঝগড়া হয় না, রাগ অভিমান হয় না। নিজের পাড়ায়, আত্বীয় স্বজন বা অন্য কোথাও মাঝে মাঝে সেইরকম সম্পর্কের উদাহরন দেখতে পাওয়া যায়। 
বিয়ে থেকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত কখনো তাদের ভেতর অশান্তি হয় না। সারাজীবন একসাথে থেকেও তারা তাদের পরের জনমও একসাথে কাটাতে চায়। সেই রকম ভালবাসার প্রত্যাশা আমরা সকলে করি। যাকে পেলে মনে হয় আমার খোজ শেষ হয়েছে।

যাকে পেলে মনে হয় তাকে খুব চেনা লাগছে আমি যেন আগেও তাকে কোথাও দেখেছি, যেন আমরা আগেও কোথাও একসাথে ছিলাম। সেরকম ভালবাসা আজ আমাদের কাছে অবাস্তব হয়ে দাড়িয়েছে? তা কী কোন বই, নোবেল বা কোন রূপ কথার গল্পের মধ্যেই পরে থাকে? সেই সমস্ত গল্পের সাথে আমাদের বাস্তবের কী কোন সম্পর্ক নেই?
    এই পৃথিবীতে সবকিছু দুইবার তৈরী হয়, প্রথমে আমাদের মনের মধ্যে তারপর পৃথিবীতে। যে তাজমহল তৈরী করেছে সে প্রথমে তার মনের  মধ্যে তা তৈরী করার কথা ভেবেছে। সে যদি কল্পনা করতে না পারত সে তা বাস্তবাহিত করতে পারত না।
আমরা যদি কখনো ভাবতেও না পারি, চাইতেও না পারি, তাহলে তা বাস্তবাহিত কখনো হতে পারে না। কোনকিছু পাওয়ার আগে তাকে চাইতে হয়।
ক্যাপ্টেন যা বলবে ক্রু তা মানতে বাধ্য, ঠিক তেমন আমাদের মন যা বলবে, আমরা তা করতে বাধ্য। আজকে আমরা ঠিক করি আমরা কী চাই তখন আমাদের অবচেতন মন তাকে পাবার জন্য সমস্ত উপায় খুঁজে বার করবে এবং সমস্ত কাজ করবে যা আমাকে তা পেতে সাহায্য করবে।
    সেই রকম ভালোবাসাকে আমরা চাই, তা একটু কঠিন মনে হলেও আমরা তাকে সত্যি করবার স্বপ্ন দেখি। তাকে সত্যি করবার জন্য যা করা উচিত তা করতে চাই। কী আমাদের সেই স্বপ্নকে সত্যি করতে সাহায্য করবে তা জানতে চাই।

          
প্রানীজগতে একটি বৈশিষ্ট খুঁজে পাওয়া যায়-- পরিবর্তনশীল পরিবেশে উদ্ভিদ ও প্রাণীর গঠনগত শারীরবৃত্তিক, আচরনগত পরিবর্তন দ্বারা নিজেকে খাপ খায়িয়ে নেয়ার প্রক্রিয়াকে অভিযোজন বলে। 
জীব খাদ্য সংগ্রহ, আত্বরক্ষা, বংশবিস্তার, নিরাপদ বাসস্থান ইত্যাদির প্রয়োজনে তার গঠনগত, আচরনগত, বিবিধ পরিবর্তন ঘটায়।
যেমন, পাখির ডানা আকাশে ওড়ার জন্য, মাছের ফুলকা জলে শ্বাসকার্য চালানোর জন্য, কুমড়োর আকর্শ আরহন দ্বারা সূর্যের আলো পাবার জন্য। 

 ঠিক তেমনি মানুষ এই পরিবেশে নিজেকে খাপ খায়িয়ে ভালোভাবে বেচে থাকার জন্য তার ভেতর ভালবাসার জন্ম হয়েছে। যার দ্বারা সে সবাইকে ভালবাসবে, সঙ্গবদ্ধ হয়ে একজায়গায় থাকবে। যা মানুষকে এইসাথে বিপদ থেকে সঙ্গবদ্ধ প্রতিরোধ  গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। 
তার কাছে যা কিছু আছে তা অন্যের সাথে শেয়ার করে তার জীবনকে আরও সুন্দর করতে পারবে। তাই ভালবাসা আমাদের জীবনে আছে।তাই আমরা পরিবার গড়ে তুলেছি। 
তবে সেই পরিবারের কিছু ছোটখাটো ব্যাপার, খুটিনাটি বিষয় আমাদের কাছে যখন এই সত্যিটাকে প্রমাণিত করে না তখন সে ভালবাসা আমাদের কাছে অভিশাপ হয়ে দাড়ায়। সম্পর্ক যা আমাদের জীবনের সবচেয়ে বেশি জায়গা জুড়ে থাকে সেই সম্পর্কই আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় বোঝা হয়ে যায়।
    ভালো জীবন পাবার জন্য আমরা ভালোবাসাকে সবার উপরে রাখি কিন্তু আমরা যদি সুখে থাকতে চাই, কোন কিছু পেতে চাই তাহলে সেই জিনিসটার প্রতি মন দেবার কোন দরকার হয় না। মনযোগ দেওয়া উচিত নিজের উপর। শুধু সেই ইচ্ছা আমাদের তার কাছে গিয়ে পৌচ্ছে দেবে না। তাকে পাওয়ার জন্যে আমদের যা করা উচিত তার উপর মনোযোগ দিতে হবে
যদি আমরা ভালোবাসা চাই, সুন্দর একটি সম্পর্ক চাই তবে আমার কী কাজ করতে হবে তার প্রতি মন দেওয়া উচিত।

    কেউ যখন সাঝে তখনি তাকে দেখতে ভালো লাগে। আর সাজাবার অন্যতম কারন হয় নিজেকে সুন্দর করা। তেমনি আমাদের জীবনও সাজে আমাদের স্বভাব ও চরিত্র দিয়ে। কাউকে সাহায্য করার প্রবনতা, শুভ মনভাব আমাদের ব্যক্তিত্বকে সাজিয়ে দেয়। 
আমরা যখন আমাদের জীবনকে সাজাব তখনি আমাদের দেখতে ভালো লাগে। তখনই সকলে আমাদের প্রতি আকর্ষিত হয়।
    যখন আমাদের জীবনে কোনকিছুর অভাব থাকে না, যখন আমাদের কাছে জীবনের চাহিদার সমস্ত কিছু পরিমিত রূপে বজায় থাকে তখন একজন মানুষ সুস্থ, আর সুস্হতায় সে তার সঙ্গীর সাথে, তার পরিবারের লোকজনদের সাথে, আত্বীয় স্বজনদের সাথে, পারা প্রতিবেশীদের সাথে যেই ব্যবহার করে সেইটাই তার আসল প্রকৃতি।
    অর্থ মানুষের প্রকৃত পরিচয় দেয়। আমাদের স্বাধীনতা ,আমাদের অর্থ,  কোনরকম ক্ষমতা সবসময় আমাদের প্রকৃত স্বভাবকে, আমাদের ভেতরের প্রকৃত মানুষকে বাইরে বার করে। 
তুমি যদি খারাপ হও, তবে যখন তোমার কাছে টাকা, পয়সা আসবে তখন তুমি আরও খারাপ হবে। তুমি যদি সৎ হও, তবে টাকা, পয়সা তোমাকে আরও ভালো মানুষ করে তুলবে। অর্থ আমাদের আসল পরিচয় দিয়ে যায়, আমাদের ভেতরের আসল মানুষটিকে বের করে দেয়, অর্থ আমাদেরকে আরও বেশি কিছু তৈরী করে। 
তুমি যদি এখন খুব ভালো না হও তবে টাকা, পয়সা পেয়ে ভালো হবার সুযোগ পাবে, তুমি যদি ভালো হও তবে অর্থ তোমাকে আরও ভালো মানুষ তৈরী করবে। আজ আমাদের সমাজে যত অশান্তি তার কারন অভাব, তেমনি সম্পর্কে আমরা যে খুটি নাটি ঝগড়া, ঝাটির কথা শুনি তার বেশির ভাগ কারন হয় অর্থের জন্যে।
   আমরা ভালবাসার উপর মন দিই, তবে সেই ভালোবাসাকে পেয়ে পরবর্তী জীবনটা সুন্দর করার জন্য আমাকে যে কাজ করতে হবে তার উপর ততটা মন দিই না। 
তাই অনেকে নিজের পায়ে দাড়াবার আগেই বিয়ে করার সিদ্ধান্তকে ভালো মনে হয়, বাস্তবের মাটিতে পা না দিয়ে তার সাথে জীবনের একটা দিন নষ্ট করতে চায় না বলে বিয়ের সিন্ধান্তকে ভালো সিদ্ধন্ত মনে করি। যখন আমাদের জীবনে নিজেদের সব চাহিদা ছাড়াও অন্যের চাহিদা পূরন করার  ক্ষমতা থাকবে তখনি আমাদের জীবন সুন্দর হবে।

    আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় অসুখ অভাব ও দারিদ্রতা। অসুস্হ মানুষের কাছ থেকে আমরা কেউ ভালো ব্যবহার প্রত্যাশা করি না, কিন্তু যখন কোন মানুষ দারিদ্রতার অভাবে পরে তখন তার কাছ থেকেও আমরা ভালবাসা প্রত্যাশা করতে পারি না। 
কিন্তু তখনই সমাজ আমাদের কানে এসে বলে মানুষের পরিচয় নাকি এই অভাবের সময় পাওয়া যায়। এই প্রবাদ শুনে তার কাছ থেকে খারাপ ব্যবহার পেয়ে, আমরা তাকে দোষারোপ করি, দোষারোপ করি আমাদের ভালোবাসাকে, দোষারোপ করি সমাজকে।
   আমার কাছে যদি তার প্রতি ভালবাসা থাকত তবে আমার প্রতি তার সেই ব্যবহারের কারনকে বোঝার চেষ্টা করতাম। দুজনে মিলে একসাথে তাকে দূর করার চেষ্টা করতাম। তবে তার কাছ থেকে খারাপ ব্যবহার পেয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, নিজেদের সম্পর্ককে অপমান, বা  নিজের সিদ্ধান্তকে ভুল বলে দায়ী করতাম না। 
যদি সে খারাপ হত তাহলে সে ভালো সময়েও তার সঙ্গীর সাথে খারাপ ব্যবহার করত। যদি সে ভালো সময়ে ভালো থাকে এবং খারাপ সময়ে পাল্টে যায় তবে তার জন্য অভাব দায়ী। আর, তার সাথে যে থাকে তার দায়িত্ব হওয়া উচিত সে যাতে সে অসুখে নিজেকে না জড়িয়ে তার বা তাদের সমস্যাকে দূর করতে পারে।
   এই নীতি অনুসরন করে আমরা যদি কাউকে চিনতে পারি, খারাপ সময় কাউর কাছ থেকে খারাপ ব্যবহার পেলেও তার বিরুদ্ধে কিছু করার চেয়ে তাকে বোঝার চেষ্টা করে সেই সমস্যাকে দূর করার চেষ্টা করব তাহলে ভালবাসা আমাদের কাছে আশির্বাদ হয়েই থাকবে।
    একজন আসুস্হ মানুষকে দেখে আমরা তার প্রতি আমাদের দায়িত্বকে ঠিক করে নেই। কেউ যদি মানুষিক অসুস্হতায় পরে, কেউ যদি এই দারিদ্রতার অসুস্হতায় পরে তখন আমরা তার অসুস্হতাকে দেখি না, মনে করি সেটাই হয়ত তার আসল পরিচয়। 
অসুস্হতায় কোন মানুষের কী আসল পরিচয় পাওয়া যায়? আমি যদি নিজের পরিচয় দিতে চাই তাহলে আমি সুস্হ হয়েই কাউর সাথে দেখা করব। কিন্তু অসুস্হ শরীরে কখনো কাউর সাথে দেখা করব না।
    তাহলে খারাপ সময়ে কিভাবে আমাদের পরিচয়  পাওয়া যাবে? আমাদের আসল পরিচয় শুধু তখনি পাওয়া যায় যখন আমাদের কোন রকম চাহিদা, কোন রকম অভাব থাকবে না আমাদের জীবনে সব কিছু বজায় থাকবে। সেই জীবনে যদি আমাদের কাছে কেউ আসে তখনি সে ভালোবাসা আর নিরাপত্তা পায়

    তখন সবাই ভালবাসতে পারে যখন তা সহজ, তখন ভালবাসতে পারে না যখন তা কঠিন। যখন কারোর ভালবাসা সবচেয়ে বেশি প্রাপ্য তখন তাকে ভালবাসতে পারি, তখন পারি না যখন তা তার কম প্রাপ্য হয়। কিন্তু আসলে তখনি তা তার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয়
   তিন রকমের দান আছে তামসিক, রাজসিক, সাত্বিক। তামসিক দান যা ঝোকের মাথায় করা হয়। সবসময় তা ভ্রমপূর্ণ, দাতা তার দান করবার ঝোক ছাড়া আর কিছুই দেখেন না। 
নাম যশের জন্য যে দান করা হয় তাকে বলা হয় রাজসিক দান। 
আর, সাত্বিক দান যা দেশ কাল পাত্র বিচার করে করা হয়। এই তিনটি দানের মধ্যে সাত্বিক দানকেই মহৎ  বলে মনে করা হয়, যা নাকি দেশ কাল পত্র বিচার করে দেওয়া হয়।
    এ শাস্ত্রের কথা।
     তাহলে যখন আমার ঘরের কেউ আমার সাথে সেই ব্যবহার করবে তখন আমার মনে পরবে আমার তো ভালোবাসা নিয়ে দেশ, কাল, পাত্র, বিচার করা উচিত। সে যখন আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করছে আমার তাকে ভালবাসা উচিত না। তাতে আমি তার প্রতি কোন ভালবাসার কোন ভালবাসা রাখছি না। কারন আমরা সেরকম শিখেছি।
     কারোর কথা মানতে আমরা বব্ধ পরিকর নই, আমরা আমাদের পছন্দ সই কাজ করি। তার কাছ থেকে খারাপ ব্যবহার পেলে যখন সে আমার ভালবাসার সবচেয়ে কম প্রাপ্য। মনে করবে তখনি তোমার ভালবাসা তার সবচেয়ে বেশি দরকার। 
কারন, তোমার প্রতি তার ব্যবহারের কারনকে খোজার জন্য, সেই কারনকে দূর করার জন্য তাকে বোঝার দরকার হবে, তা তখনি বুঝতে পারবে যখন তার প্রতি তোমার ভালবাসা থাকবে। তখনই সে এসে তোমার কাছে তার সমস্যা খুলে বলবে।
    আমরা যদি তার ব্যবহারের প্রতি বেশি নজর না দিয়ে কোন কারন তার মানসিকতাকে বিগ্নিত করছে, কিসের ফলে সে এরম ব্যবহার করছে তা জানার চেষ্টা করি তবে তার প্রতি ভালবাসা থাকবে। কেউ ভালবাসার যত কম প্রাপ্য হোক না কেন তখন তার ভালবাসার সবচেয়ে বেশি দরকার হয়।
     কেউ যখন কোন ভুল করে তখন তাকে শাস্তি দেওয়াকে আমরা আমাদের গুরু দায়িত্ব বলে মনে করি। কিন্তু সেই ভুলটা যাতে তার দ্বিতীয়বার না হয়, তার জন্য চেষ্টা করি না। সেই ভুল যাতে সে দ্বিতীয় বার না করে তার জন্য তার যে শক্তি দরকার সে শক্তিকে তাকে শাস্তি দিয়ে নষ্ট করে ফেলি।
     ভালবাসার অর্থ নিঃশর্তে গ্রহন করার ক্ষমতা। সে যদি আমার প্রতি খারাপ ব্যবহার করে তখন তাকে তার মত গ্রহন করলে তার প্রতি সেই ভালবাসা বজায় থাকে। তার মনে তখন যদি কোন ভালবাসা না থাকে তবে নিজের থেকে তাকে তা দেবার চেষ্টা করতে পারি। 
আমরা যদি কাউকে তার মত গ্রহন করতে পারি তাহলে আমরা তাকে সবচেয়ে বেশি তখন গ্রহন করব যখন তা তার সবচেয়ে বেশি দরকার হবে। ভালবাসা যখন তার সবচেয়ে কম প্রাপ্য হয় তখনি তার গ্রহনযোগত্যা সবচেয়ে বেশি দরকার হয়।  
    পৃথিবীতে এমন কোনো মানুষ নেই যার দ্বারা কোনো ভুল হয় না, যদি কেউ থাকে তাহলে তাকে সবাই ভগবান বলে। মানুষের মনের উপর পরিস্থিতির প্রভাব, সমস্যার প্রভাব পরে তখন তার মানসিক পরিস্থিতি বিগ্নিত হয়। তখন তার কাছ থেকে সেরকম ব্যবহার আসা করা যায় না যা আমি আগে তার কাছ থেকে আসা করতাম।
এখন যদি কেউ তার সঙ্গীকে খুব ভালো মনে করে, মনে করে সে সমসময় তার প্রতি একই রকম ব্যবহার করবে তবে আমরা কোন মানুষকে খুব বড় জায়গায় বসিয়ে তার কাছ থেকে সবসময় ভালো ব্যবহার পাবার আসা করছি। তখন আমরা আসলে তাকে ভালবাসছি না, বরং আমরা তার সেই ভালো ব্যবহারকেই ভালোবাসছি। কিন্তু তার উৎস সেই ব্যক্তিকে ভালবাসছি না।  
    কোন জিনেসের প্রতি সঠিক জ্ঞান যেমন সেই  কাজে  আমাদের সাফল্য নির্ধারন করে। তেমনি কাউর প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও ভালোবাসাকে বুঝতে পারলে সেখানে আমাদের সাফল্য আসবে। তাই, কোন সম্পর্ক শুরু হবার আগেই তাকে বাচাবার চেষ্টা করা উচিত।
    জীবনের অন্যান্য জায়গায় আমি যদি সফল হতে পারি তবে এই জায়গায়ও সফল হতে পারব। তবে জীবনে সফল হওয়া ও এই জায়গায় সফল হবার ভেতর একটু পার্থক্য আছে। 
যদি আমি ভাবি আমি আমার কর্মে সফলতা চাই তাহলে আমি নিজেকে দেখি, নিজের কাজকে দেখি, কিভাবে আরও উন্নতি করতে পারব তার প্রতি মন দিই। কিন্তু যখন আমরা সম্পর্কের কথা ভাবি তখন আমরা কখনো নিজেকে দেখি না। সবসময় অন্য একজনকে দেখি-- তাকে আমাদের  সাথে কেমন ব্যবহার করতে হবে, তাকে আমাদেরকে কী বলতে হবে, সে আমাদেরকে কতটা সময় হবে ইত্যাদি।
      সেসব কিছু যখন ভালো সময়ে তাদের কাছে থেকে পাই তখন আমরা তাদের ভালবাসি। কিন্তু খারাপ সময়ে যখন তারা তাদের মানসিক স্থিতি হারিযে ফেলে, তখন আমরা সেই সম্পর্কের দোষ দেই, তার সাথে আমার জীবন কাটানোর সিদ্ধান্তকে দোষ দেই। 
তখন তাকে বুঝি না, তাকে স্বীকার করি না, তার সেই ব্যবহারের কারনকে খুঁজে দেখার কথা ভাবি না, তাকে আবার আগের জায়গায় ফিরিযে নিয়ে যাবার চেষ্টা করি না। অভিযোগ করে আমরা আমাদের শুধু না তাকে ভালবাসি, বরং অভিযোগ করে সেই অবস্থাকে আরও খারাপ জায়্গায় নিয়ে যাই।
     আমার এলাকার কল খারাপ হয়ে গেলে পৌরসভায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করে হয়ত এক সপ্তাহ বাদে আমাদের এলাকার কল ঠিক করে দিতে পারে। কিন্তু এইখানে দুজনের সম্পর্কের ভেতরের সমস্যার অভিযোগ জানাতে কোন তৃতীয় ব্যক্তির কাছে যেতে পারব না। আমার এলাকায় কোন সমস্যা হলে তার জন্য পৌরসভা আছে., তবে আমার বাড়ির কোন নালায় যদি দুর্গন্ধ হয় তবে সেই নালাকে পরিষ্কার করার জন্য পৌরসভার লোক আসবে না
ঠিক তেমন আমারদের দুজনের ভেতরের কোন সমস্যাকে অভিযোগের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব নয়। তা দূর করতে হলে শুধু দরকার হয় নিজেদেরকে গ্রহন করা। যে সব কিছু সেই সম্পর্কের সমস্যা হয়ে দাড়াচ্ছে তাকে দূর করা।  
    আমাদের জীবন সেটা যা আমরা নিজেদের হাতে তৈরী করি। জীবন কোন জর বস্তু নয়, যার রূপের কোন পরিবর্তন হতে পারে না, জীবন হচ্ছে জীবিত। আমরা আমাদের রূপ দিয়ে, গুন দিয়ে সেই জীবনকে আমাদের মত তৈরী করতে পারি। সেই কারনে আমাদের শ্বাস প্রশ্বাস চলছে। তার জন্য আমরা কথা বলতে পারি, তার জন্য আমরা মত প্রকাশ করতে পরি। 
তবে যার জীবন জীবিত নয়, সে মনে করে তার জীবন অন্য কেউ লিখে রেখেছে। যদি অন্য কেউ আমাদের জীবন লিখত তাহলে সে আমদের জন্য খুব সুন্দর একটা গল্প লিখত। যদি কোন পিতা তার সম্তানের জন্য ভাগ্য লিখত তবে সে তার জন্য সবচেয়ে সুন্দর ভাগ্য লিখত। আমরা জন্মসুত্রে যে জীবন পেয়ে থাকি সেই জীবনকে সুন্দর করার ক্ষমতা শুধু আমাদের হাতে থাকে।
    একটা বাচ্চা জন্মাবার পর যেমন থাকে সে বড় হবার পর সেই রকম থাকে না। তার খাওয়া দাওয়া, পুষ্টি , তার আদর যত্নে সে সে বাচ্চা মানুষ থেকে একটি বড় সুন্দর মানুষে পরিনত হয়। ঠিক তেমন এখন আমাদের জীবন যতই  খারাপ হোক না কেন তা আমাদের পরিনত রূপ নয়, আমরা আমাদের বুদ্ধি দিয়ে, আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত দিয়ে, আমাদের জীবনকে একটা সুন্দর জীবন গড়ে তুলতে পারি। 
যদি সেই জীবন আমাদের কাছে জীবিত হয়। আমরা কি আমাদের জীবনকে জীবিত মনে করি? নাকি তাকে মৃত মনে হয়? যতদিন আমাদের প্রাণে অক্সিজেন চলছে ততদিন আমরা জীবিত, ততদিন আমাদের কাছে পছন্দ আছে। আমরা আমাদের জীবনকে কোন রঙে, কোন রূপে সাজাবো, আর, কিভাবে আমার জীবনকে অন্যের প্রেরনা করে তুলব।

     অনেক সময় এমন দেখা যায়, খারাপ সময়ে যাদের সম্পর্ক আরও সুন্দর হয়েছে, খারাপ সময় তাদেরকে পরস্পরের আরও কাছে এনেছে। আবার অনেক সময় আমরা এমন উদাহরন দেখি যেখনে খারাপ সময়ে তাদের সম্পর্ক ভেঙে গেছে। 
কারন, ভালো সময়ে আমরা সুস্থ, খারাপ সময়ে আমরা অসুস্থ। একজন অসুস্থ হলে তার সঙ্গীই তার সেবা করে। কিন্তু এই  মানসিক অসুস্হতা সম্পর্কে আমরা কিছু জানি না, জানলে হয়ত তার প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য গুলি পালন করতাম।
    তখন তার মানসিক অসুস্থতায় তার মনকে আমার মন দিয়ে যে মানসিক সেবা করতে হয়, সেই সেবা করার জন্য আমরা প্রস্তুত হই না। সেই দান করতে না পারার জন্য তাদের সম্পর্ক ভেঙে যায় বা না ভেঙে গেলেও সেই অসুস্থতা আমাদের জীবনে খুব একটা খারাপ অনুভুতি হয়ে রয়ে যায়। 
এই সময় যারা একে অন্যেকে বোঝে, তার প্রতি মানসিক দান বা সেবা করতে প্রস্তুত, খারাপ সময়ে অন্যের থেকে খারাপ ব্যবহার পেলেও তারা তাদের প্রতি সমান ভালবাস বজায় রাখে, যখন তারা বোঝে তার সঙ্গীর তার সঙ্গ ও তার ভালবাসা সবচেয়ে বেশি প্রয়জন। 
তখন তারা সেই অসুস্থতা বা জীবনের প্রতিকুলতা সহজে কাটিয়ে উঠে কারন একজনের থেকে দুজনের শক্তি সবসময় বেশি। তখন  সে সমস্যা তাদের জীবনে অভিশাপ হয় না, বরং তাদের জীবনে আশির্বাদ হয়। যা এসে সবসময়  তাদের সম্পর্কে আরও বেশি শক্তিশালী, তাদের দুজনকে আরও বেশি কাছে, আর তাদের ভালোবাসাকে আরও বেশি গভীর করে তোলে।
    কারোর ভালবাসায় কোন  সমস্যা না থাকার নাম সে সম্পর্কের সাফল্য নয়, বরং সমস্ত সমস্যা থাকা সত্বেও  যদি তাদের সম্পর্ক ভালো হয় সেখানে তাদের সাফল্য। 
একজন ভালো স্বাস্থের অধিকারী সে নয় যে রোগের ভয়ে সবসময় বৃষ্টির থেকে দুরে থাকে, কাদা মাটি থেকে দুরে, সবসময় ঘরে বসে থাকে। স্বাস্থ তার যে সবকিছু সঝ্য করা সত্বেও তার শরীরের ভেতর সেই প্রতি রোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। 
কিভাবে জীবনের সমস্যা থেকে বেচে থাকব, সমস্যা থেকে দুরে থাকব, তার থেকে পালিয়ে যাব, আমরা কখনো সে কথা শিখি না। আমরা শিখি সে সমস্যাকে গ্রহন করে, কিভাবে নিজেদের মধ্যে তাকে প্রতিহত করার ক্ষমতা গড়ে তুলব।
    আমরা শিখেছি কিভাবে সমস্যা থেকে পালিয়ে না গিয়ে তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলব। যখন কারোর ভালবাসা বা সম্পর্কে কোন সমস্যা এসে দাড়ায়, তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তার থেকে পালিয়ে গিয়ে পাওয়া যায় না।
বরং, সে সমস্যাকে দেখে তাকে দূর করার মানসিকতায় তার সাফল্য থাকে এবং তাকে দূর করার মানসিকতা তখন জন্ম হয় যখন আর একজনকে বোঝার চেষ্টা করি এবং নিজের সম্পর্কে সুন্দর হবার সুযোগ দিই। সেই সমস্যা তাদের জীবনে তাদের আশির্বাদ হয়ে আসে।
    আমরা যদি একবার কোন সমস্যা থেকে পালিয়ে যাবার উপায় খুঁজে পাই, তাহলে আমরা বারবার সেই সমস্যা থেকে পালিয়ে যাবার উপায় খুঁজতে চাইব। 
সমস্যা দূর হয়ে গেলেও ভয় পাব যদি কোন সমস্যা আবার আসে। ভয়ের মাঝখানে সেখানে সুখ, শান্তি, ভালবাসা কখনো থাকবে না কিন্তু যদি সমস্যার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলি তারপর ভাবব এর পরে যতই সমস্যা হোক না কেন আমরা এই ভাবেই সমস্ত সমস্যাকে দূর করতে পারব। তখনি জীবনে শান্তি থাকবে কারন তখন ক্ষমতা পরিস্হিতির উপর না, তখন ক্ষমতা আমাদের দুজনের হাতে থাকে।

    ভালবাসা কিভাবে আশির্বাদ হয়ে ওঠে এই প্রশ্নের উত্তর না খুঁজে ভালবাসাকে কিভাবে জীবনের আশির্বাদ করে তুলি তার উপর আমাদের গুরুত্ব দেওয়া উচিত। দুজন সবসময় একসাথে থাকলে তারা ভগবানের আশির্বাদ ধন্য হয় না, বরং তারা তাদের জীবনকে ভালোবাসায় ভরে তুলে ভগবানের আশীর্বাদের জগ্য হয়।
    তাদের মধ্যে কি আছে যা তাদের দুজনকে চিরদিন একসাথে রেখেছে। সেগুলি ভগবানের থেকে পাওয়া আশির্বাদ নয়, তা হল তাদের মন থেকে পাওয়া তাদের একে অপরের প্রতি দায়িত্বের অনুভব, যার ফলে তারা তাদের জীবনকে ভালবাসার আশির্বাদ তৈরী করতে পেরেছে।
    কাউকে দেখে যদি মনে করি তারা কত সুখী তার অর্থ এটা নয় তারা সারাজীবন একই রকম ছিল, তাদের জীবনে কোন সমস্যা হয়নি, বরং তাদের জীবনেও অনেক জোয়ার ভাটা এসেছে, তারা অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে কিন্তু তারা সে সব কিছু সঝ্য করে তাদের দুজনকে সবার কাছে ভালবাসার উদাহরন রূপে প্রমান করছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন