মঙ্গলবার, ১২ মে, ২০১৫

কিভাবে তারা সারাজীবন একসাথে থাকে?

আমি যখন পড়াশুনা করি বারবার পৃষ্টা উল্টে দেখি আরও কতটা পড়া বাকি আছে।  এর মানে কী ?  এর মানে আমি আমার বর্তমানে সুখী নই, ভবিষ্যতে আমাকে এখনো কতখানি যেতে হবে আমি তার হিসাব করছি। যদি আমি সুখী হতাম তাহলে দেখতাম না আর কতখানি আমাকে যেতে হবে। আমাদের চলার পথে সুখ না খুঁজে আমরা আমাদের গন্তব্য স্থানে সুখ আছে মনে করি। তাই সেই রাস্তা দিয়ে যাবার সময় আমরা বারবার দেখি এখনো আর কতখানি পথ যেতে বাকি আছে। ঠিক তেমনি আমাদের জীবনেও আমরা যদি বারবার আমাদের ভবিষ্যতের কথা ভাবি তাহলে আমরা আমাদের বতর্মান হারিয়ে ফেলি এবং বতর্মানে সুখী নই। যদি সুখী হতাম তাহলে দেখতাম না এখনো আর কতটা পথ যেতে বাকি আছে।
ভালবাসার ক্ষেত্রেও একই রকম আমরা আমাদের আজকের দিনগুলি ভোগ না করে ভবি আমাদের জীবনের বাকি দিন গুলিতে একসাথে থাকব তো ! জীবনের শেষদিনেও একসাথে থাকার জন্য সেই সম্পর্কটি প্রথম থেকে মজবুত হয়ে গড়ে তোলা উচিত ছিল কিন্তু প্রথমদিকের সময়গুলি আমরা নিজেদেরকে না দিয়ে যদি ভবিষ্যতের চিন্তা করি, তাকে হারিয়ে ফেলার ভয় করি তবে সেই চিন্তা ও ভয়ের মাঝখানে কখনো ভালবাসা থাকতে পারে না এবং ভালবাসা না থাকলে সে সম্পর্ক মজবুত হয় না। বতর্মানে যদি ভালবাসা না থাকে তবে সেই সম্পর্ক কী তাদের দুজনকে একসাথে রাখবে। যদি আমরা কাউর সাথে সারাজীবন থাকতে চাই তবে তার সাথে আমাদের ভবিষ্যতের কথা না ভেবে বরং আজকের দিনে আর একটু বেশি ভালোবাসলেই সারাজীবন একসাথে থাকব। দুজনের ভবিষ্যত ভালো করতে ভবিষ্যতের চিন্তা করার দরকার নেই বরং সেই সম্পর্কের ভীত যা বতর্মান তা সুন্দর করলেই দুজনের ভবিষ্যত সুন্দর হবে।

আমাদের জীবনের লক্ষ আমাদের গন্তব্য স্থান নয়, বরং সেই গন্তব্য স্থানে পৌচ্ছাতে আমরা যে লক্ষ খুঁজে পাই , সেটাই আমাদের লক্ষ। যেমন সারাজীবন একসাথে থাকা যদি আমাদের গন্তব্য স্থান হয় তবে সারাজীবন একসাথে থাকার জন্য আমাদের প্রতিদিন নিজেদের ভালবাসার যে লক্ষ খুঁজে পাই, সেটাই আমাদের জীবনের লক্ষ। তাই সেই লক্ষকে সার্থক করার জন্য আমাদের সকলকে কাজ করতে হবে।যদি আমি পড়াশুনা করার সময় বারবার পৃষ্টা উল্টে না দেখি এখনো কতখানি পরা বিকি আছে তাহলে আমি ভাবব আমি বতর্মানে সুখী আছি। দুজনে একসাথে থাকার সময় যদি আমার আর একজনকে হারিয়ে ফেলার ভয় না হয়, তাহলে মনে করব আমরা দুজন ভবিষ্যতেও একসাথে থাকব।
আমরা যদি আমাদের মন দিয়ে পুরোপুরি আজকের কথা ভাবি তাহলে প্রতিদিন একটু বেশি বোঝা, একটু বেশি জানা , আরও একটু বেশি ভালবাসতে পারব এবং আজকে আমরা যদি নিজেদেরকে আরও ভালো করে বুঝতে পারি, জানতে পারি তাহলে ভবিষ্যতেও আমাদের ভেতর ভালবাসা থাকবে। তবে আজকে যদি নিজেদেরকে চিনতে ও বুঝতে সময় না দেই তবে সেখানে ভালোবাসাও জন্মাবে না এবং ভালবাসা না থাকলে সারাজীবন একসাথে থাকতে চাইলেও একসাথে থাকা যায় না।  
আমরা যদি আমাদের জীবনে সবসময় ভবিষ্যতের কথা ভাবি তবে সেই ভবিষ্যতে পৌচ্ছে গিয়েও আমি তার পরের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করতে থাকব। পাঁচ বছর একসাথে থাকার পর ভাবব আরও পাঁচ বছর একসাথে থাকব তো। আমার কখনই আমাদের জীবনকে উপভোগ করতে পারব না। আমরা আমাদের জীবনে যাই কিছু চাই না কেন, সেই সবকিছুর পর আমরা আমাদের জীবনে সুখ চাই, আমরা সবাই আসলে সেই একটি জিনিসের পিছনেই ঘুরে বেড়াচ্ছি। তাই আমি কি চাই, সে কথা না ভেবে আমরা সবাই এ কথা বিশ্বাস করি যে আমরা সবাই সুখী হতে চাই। যখন আমরা যুঝতে পারব আমরা সবাই সুখী হতে চাই তখন সারাজীবনের কথা না ভেবে বতর্মানে নিজেদের সুখ খুঁজে দেখব। তখন আমাদের জীবন আরও উপভোগ্য হয়ে উঠবে। কারন আমরা সুখ শান্তিকে চাইছি, বর্তমানের যে দিনগুলি আমাদেরকে সুখী করে সেই দিনগুলিকে ভোগ করছি।
অনেক সময় দেখা যায় আমরা আমাদের দূর ভবিষ্যতে কেমন থাকব সে কথা ভেবে আমরা আমাদের বর্তমানকে হারিয়ে ফেলি। দুবছর পরেও একসাথে থাকব নাকি তাকে হারিয়ে ফেলব সে কথা ভেবে এখন যে সবকিছু আমাদের ভালোলাগে যাতে আমরা সুখী হই সে সবকিছু ভুলিয়ে দেই। আমরা আমাদের বর্তমানে নষ্ট করে আমাদের ভবিষ্যত গড়ার চেষ্টা করি। আমাদের ভবিষ্যত শুধু তখনি ভালো হবে যখন আমরা বর্তমানে সুখে থাকব।
অনেকে ভাবে যদি আমাদের মনে কিছু চাইবার বা পাবার ইচ্ছা না থাকে তবে তা আমাদের জীবনে কখনো আসে না। কিন্তু যদি সারাজীবন একসাথে থাকার ইচ্ছা না করে আজকে একসাথে থাকি তবে না চাইলেও সারাজীবন একসাথে থাকা যায়। বর্তমানে আমাদের জীবনে যে সুখ আছে তা না হারিয়ে সুখে থাকলে ভবিষ্যতেও আমরা সেই সুখ ভোগ করতে পারি।

যদি আমরা সুখে থাকি তবেই দুজনের ভবিষ্যত ভালো হবে, যদি আমরা সুখে থাকি তবেই ভবিষ্যতে সেই সম্পর্ক আরও সুন্দর হবে। বর্তমানে আমরা যাকে ভালবাসি তার সাথে থাকলেই ভবিষ্যতে তার সাথে থাকতে পারব। সম্পর্কের ভবিষ্যত সুন্দর করার জন্য ভবিষ্যতের চিন্তা করার দরকার হয় না, দরকার হয় বর্তমানে আরও ভালবাসার।

বৃহস্পতিবার, ৭ মে, ২০১৫

আমরা কেন কাউকে ভালবাসি? যখন এই প্রশ্নের কোন উত্তর খুঁজে না পাওয়া যায়

আমরা আমাদের জীবনে অনেকেরই সংস্পর্শে আসি এবং অনেকেই আমাদের ভালোলাগে। তাদের ভেতর কাউকে আবার বিশেষভাবে ভালোলাগে তখন আমরা অবাক হই কেন আমাদের তাদের এত ভালোলাগে। তার কারন আমরা যেমন আমরা যখন ঠিক নিজেদের মত মানুষের সাথে দেখা করি, যখন তার গুনগুলি আমাদের গুনগুলি মিলে যায় তখন আমাদের ভালোলাগে, তখন আমরা নিজেদের সম্পুন্ন অনুভব করি অথবা আমাদের স্বভাবে যদি কিছু বাকি থাকে সেটি যদি আমরা তার কাছে পাই তখনো আমাদের নিজেদের সন্তুষ্ট মনে হয়। যেমন কোন ঠান্ডা জিনিসের সাথে যদি কোন ঠান্ডা জিনিস রাখা হয়, তাহলে সেদুটি ভালো থাকে, তাদের ভেতর কোন সংঘর্ষ হয় না। কিন্তু কোন ঠান্ডা জিনিসের সাথে যদি কোন গরম জিনিস রাখা হয় তাহলে তাদের মধ্যে ততক্ষন পর্যন্ত সংঘর্ষ হতে থাকবে যতক্ষন না পর্যন্ত তাদের ভেতরের একটির ধর্ম সম্পুন্ন লোপ পায়। যেমন দুটি বরফ যদি পাশাপাশি রাখা হয় তবে তারা একসাথে জুড়ে যাবে, তবে যদি একটি বরফের সাথে একটি উষ্ণ বস্তু রাখা হয় তাহলে হয় বরফটি উষ্ণ হয়ে যাবে নয়ত উষ্ণ বস্তুটি শীতল হয়ে যাবে। ঠিক তেমনি আমাদের মত মানুষ খুঁজে পেলে আমরা মন থেকে তার সাথে জুড়ে যাই ,তবে যদি  আমাদের সাথে তাদের কোন মিল না থাকে তাহলে তাদের সাথেও আমাদের সংঘর্ষ বেধে যায় এবং তা  ততক্ষন পর্যন্ত চলতে থাকে যতক্ষন না অবধি আমাদের দুজনের একজনের স্বভাব মুছে গিয়ে আমরা অন্যের মত হই।
যারা তাদের জীবনে তাদের মত মানুষ খুঁজে পেয়েছে তারা সুখী এবং যারা পায়নি তাদের ভেতর ছোটখাট সংঘর্ষে তার একে অন্যের সামান হবার চেষ্টা করে। যতক্ষন না অবধি তাদের ভেতরের সেই গুনগুলি মিলে যাচ্ছে ততক্ষন অবধি তাদের ভেতর সেই সংঘর্ষ চলতে থাকে।


অনেক সময় আমরা দেখি আমাদের একাধিক মানুষকে ভালোলাগে। তবে যদি আমরা ভালো করে লক্ষ করি তাহলে বুঝতে পারব সেই সকল মানুষের মধ্যে একই রকম গুন বতর্মান। আমরা সেই সকল মানুষের ভেতর থেকে সেই একটি আকর্ষনেই তাদের ভালবাসি। তখন আমাদের কাছে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে যায় যে আমারা যাকে ভালবাসি বা যাকে ভালবাসব তার ভেতর কী গুন থাকবে। তখন আমরা নিজেদেরকেও চিনতে পারি যে আমাদের মন কি ভালবাসে, আমরা কেমন তা আমরা আমাদের পছন্দ থেকেই চিনতে পারি। তাই নিজের ভালোলাগার মানুষের সংখ্যা যদি বেশি হয় তবে আমাদের বিচলিত হতে হয় না যে আমরা তাদের ভেতর কাকে ভালবাসি এবং আত্মসংশয়ে ভুগি না কেন আমাদের মন ভালোবাসার ব্যাপারে এত বিচলিত। আমাদের মনে থাকে যে আমরা সেই রকম ব্যক্তিত্বকে ভালবাসি, সেইরকম স্বভাবকে ভালবাসি এবং আমরা যাকে ভালবাসব তার ভেতর সেই গুনগুলিই থাকবে। সেই সকল মানুষের ভেতর আমরা সেই গুন্গুলিকেই অনুভব করি। তাই সেই সকলকে নিজের জীবনসাথীর জায়গায় ভেবেও আমাদের কোন ভুল হয় না।