শনিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৫

ভালবাসার ভূত ও ভবিষ্যত নিয়ে একটি বাস্তব ধারনা

ভালবাসার ভূত ও ভবিষ্যত নিয়ে একটি বাস্তব ধারনা

কোন কিছু পাওয়া ভালবাসা নয়, বরং তা পেয়ে আমাদের জীবন যতটা সুন্দর হয় ভালবাসা সেখানে। সেরকম আমাদের যাদের ভালোলাগে, আমরা যাদের ভালবাসি তাকে পেয়ে আমরা সফল হয়ে যাই না, বরং তার সাথে আমরা আমাদের পরবর্তী জীবনকে যতটা সুন্দর করে গড়ে তুলতে পারি সেইখানে তার সফলতা থাকে। 
কাউকে পাওয়া সফল হওয়া নয় বরং সেই পথের শুরু। আমরা যদি এখন কলকাতা থেকে দার্জিলিং যাই, টিকিটের গায়ে লেখা থাকবে "শুভ যাত্রা” , কিন্তু তখন কেউ ট্রেনে ওঠার জন্য শুভেচ্ছা জানায় না। আমরা সকলে চেষ্টা করি আমাদের সেই যাত্রাটা যেন শুভ হয়, আমরা যেন ভালোভাবে সেখানে পৌচ্ছাতে পারি। 

শুক্রবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৫

ভালবাসা ও ভাললাগার মধ্যে কী পার্থক্য? ( যা আগে কখনো শুনেনি )

ভালবাসা ও ভালোলাগার মধ্যে কী পার্থক্য

কোন কিছুর প্রতি প্রচন্ড আকর্ষনকে কখনও ভালবাসা নাম দেওয়া ঠিক নয়। ভালবাসা আমাদের মনকে শান্তি দেয়, হৃদয়কে শীতল করে, ভালবাসা কখনো মনকে অস্হির করে না, ভালবাসায় মন চঞ্চল হয় না। 
অস্হিরতা, চঞ্চলতা হয় আকর্ষনে, আমরা কোন কিছুর প্রতি আকর্ষিত হলে আমাদের মন আর স্হির থাকে না, সে বার বার সেই আকর্ষনের কথা চিন্তা করে, সে সেই জিনিসটি পাবার জন্য চঞ্চল হয়ে ওঠে। 
যদি আমরা কোন ফুল ভালবাসি তাহলে আমরা সবসময় চাইব যে সেটি গাছেই ফুটে থাক, কারন তখন সেই ফুলের সৌন্দর্য আমাদের অস্হির করে না, আমাদের মন চঞ্চলতাবোধ করে না। তবে আমরা যদি কোন ফুলের প্রতি আকর্ষিত হই তবে সেই ফুলটিকে গাছের থেকে ছিড়ে নিয়ে আসি। 
কারন, তখন আমাদের অস্বস্হি দূর করতে সেই ফুলটিকেই একমাত্র সাধন মনে করি। তাই তাকে চিরে নিয়ে এসে নিজের শান্তি ফিরে পাবার চেষ্টা করি। 

বৃহস্পতিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৫

কেউ আমাদেরকে সারাজীবন ভালবাসুক! যদি আমরা চাই..

কেউ আমাদের ভালোবাসুক

   যদি তুমি কারোর দুঃখের কারন না হও তাহলে তুমি তোমার নিজের জীবনে নিজের স্বাধীন মত বেচে থাক। আমরা ভাবি অন্যের জন্য বেচে থাকার নামই জীবন। তাই অন্য আর একজনকে সুখী করতে, আমাদের থেকে তাদের আশাকে পূর্ণ করতেই আমরা আমাদের জীবন কাটিয়ে দেই। নিজের সুখের কথা না ভেবে শুধু অন্যের জন্য কাজ করতে করতে আমরা হাপিয়ে যাই, তখন আমাদের মনে শান্তি থাকে না। আর সেই অশান্তির জন্য যখন আমরা তাকে দায়ী করি, তখন তার প্রতি ভালোবাসাও শেষ হয়ে যায়।

মঙ্গলবার, ১২ মে, ২০১৫

কিভাবে তারা সারাজীবন একসাথে থাকে?

আমি যখন পড়াশুনা করি বারবার পৃষ্টা উল্টে দেখি আরও কতটা পড়া বাকি আছে।  এর মানে কী ?  এর মানে আমি আমার বর্তমানে সুখী নই, ভবিষ্যতে আমাকে এখনো কতখানি যেতে হবে আমি তার হিসাব করছি। যদি আমি সুখী হতাম তাহলে দেখতাম না আর কতখানি আমাকে যেতে হবে। আমাদের চলার পথে সুখ না খুঁজে আমরা আমাদের গন্তব্য স্থানে সুখ আছে মনে করি। তাই সেই রাস্তা দিয়ে যাবার সময় আমরা বারবার দেখি এখনো আর কতখানি পথ যেতে বাকি আছে। ঠিক তেমনি আমাদের জীবনেও আমরা যদি বারবার আমাদের ভবিষ্যতের কথা ভাবি তাহলে আমরা আমাদের বতর্মান হারিয়ে ফেলি এবং বতর্মানে সুখী নই। যদি সুখী হতাম তাহলে দেখতাম না এখনো আর কতটা পথ যেতে বাকি আছে।
ভালবাসার ক্ষেত্রেও একই রকম আমরা আমাদের আজকের দিনগুলি ভোগ না করে ভবি আমাদের জীবনের বাকি দিন গুলিতে একসাথে থাকব তো ! জীবনের শেষদিনেও একসাথে থাকার জন্য সেই সম্পর্কটি প্রথম থেকে মজবুত হয়ে গড়ে তোলা উচিত ছিল কিন্তু প্রথমদিকের সময়গুলি আমরা নিজেদেরকে না দিয়ে যদি ভবিষ্যতের চিন্তা করি, তাকে হারিয়ে ফেলার ভয় করি তবে সেই চিন্তা ও ভয়ের মাঝখানে কখনো ভালবাসা থাকতে পারে না এবং ভালবাসা না থাকলে সে সম্পর্ক মজবুত হয় না। বতর্মানে যদি ভালবাসা না থাকে তবে সেই সম্পর্ক কী তাদের দুজনকে একসাথে রাখবে। যদি আমরা কাউর সাথে সারাজীবন থাকতে চাই তবে তার সাথে আমাদের ভবিষ্যতের কথা না ভেবে বরং আজকের দিনে আর একটু বেশি ভালোবাসলেই সারাজীবন একসাথে থাকব। দুজনের ভবিষ্যত ভালো করতে ভবিষ্যতের চিন্তা করার দরকার নেই বরং সেই সম্পর্কের ভীত যা বতর্মান তা সুন্দর করলেই দুজনের ভবিষ্যত সুন্দর হবে।

আমাদের জীবনের লক্ষ আমাদের গন্তব্য স্থান নয়, বরং সেই গন্তব্য স্থানে পৌচ্ছাতে আমরা যে লক্ষ খুঁজে পাই , সেটাই আমাদের লক্ষ। যেমন সারাজীবন একসাথে থাকা যদি আমাদের গন্তব্য স্থান হয় তবে সারাজীবন একসাথে থাকার জন্য আমাদের প্রতিদিন নিজেদের ভালবাসার যে লক্ষ খুঁজে পাই, সেটাই আমাদের জীবনের লক্ষ। তাই সেই লক্ষকে সার্থক করার জন্য আমাদের সকলকে কাজ করতে হবে।যদি আমি পড়াশুনা করার সময় বারবার পৃষ্টা উল্টে না দেখি এখনো কতখানি পরা বিকি আছে তাহলে আমি ভাবব আমি বতর্মানে সুখী আছি। দুজনে একসাথে থাকার সময় যদি আমার আর একজনকে হারিয়ে ফেলার ভয় না হয়, তাহলে মনে করব আমরা দুজন ভবিষ্যতেও একসাথে থাকব।
আমরা যদি আমাদের মন দিয়ে পুরোপুরি আজকের কথা ভাবি তাহলে প্রতিদিন একটু বেশি বোঝা, একটু বেশি জানা , আরও একটু বেশি ভালবাসতে পারব এবং আজকে আমরা যদি নিজেদেরকে আরও ভালো করে বুঝতে পারি, জানতে পারি তাহলে ভবিষ্যতেও আমাদের ভেতর ভালবাসা থাকবে। তবে আজকে যদি নিজেদেরকে চিনতে ও বুঝতে সময় না দেই তবে সেখানে ভালোবাসাও জন্মাবে না এবং ভালবাসা না থাকলে সারাজীবন একসাথে থাকতে চাইলেও একসাথে থাকা যায় না।  
আমরা যদি আমাদের জীবনে সবসময় ভবিষ্যতের কথা ভাবি তবে সেই ভবিষ্যতে পৌচ্ছে গিয়েও আমি তার পরের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করতে থাকব। পাঁচ বছর একসাথে থাকার পর ভাবব আরও পাঁচ বছর একসাথে থাকব তো। আমার কখনই আমাদের জীবনকে উপভোগ করতে পারব না। আমরা আমাদের জীবনে যাই কিছু চাই না কেন, সেই সবকিছুর পর আমরা আমাদের জীবনে সুখ চাই, আমরা সবাই আসলে সেই একটি জিনিসের পিছনেই ঘুরে বেড়াচ্ছি। তাই আমি কি চাই, সে কথা না ভেবে আমরা সবাই এ কথা বিশ্বাস করি যে আমরা সবাই সুখী হতে চাই। যখন আমরা যুঝতে পারব আমরা সবাই সুখী হতে চাই তখন সারাজীবনের কথা না ভেবে বতর্মানে নিজেদের সুখ খুঁজে দেখব। তখন আমাদের জীবন আরও উপভোগ্য হয়ে উঠবে। কারন আমরা সুখ শান্তিকে চাইছি, বর্তমানের যে দিনগুলি আমাদেরকে সুখী করে সেই দিনগুলিকে ভোগ করছি।
অনেক সময় দেখা যায় আমরা আমাদের দূর ভবিষ্যতে কেমন থাকব সে কথা ভেবে আমরা আমাদের বর্তমানকে হারিয়ে ফেলি। দুবছর পরেও একসাথে থাকব নাকি তাকে হারিয়ে ফেলব সে কথা ভেবে এখন যে সবকিছু আমাদের ভালোলাগে যাতে আমরা সুখী হই সে সবকিছু ভুলিয়ে দেই। আমরা আমাদের বর্তমানে নষ্ট করে আমাদের ভবিষ্যত গড়ার চেষ্টা করি। আমাদের ভবিষ্যত শুধু তখনি ভালো হবে যখন আমরা বর্তমানে সুখে থাকব।
অনেকে ভাবে যদি আমাদের মনে কিছু চাইবার বা পাবার ইচ্ছা না থাকে তবে তা আমাদের জীবনে কখনো আসে না। কিন্তু যদি সারাজীবন একসাথে থাকার ইচ্ছা না করে আজকে একসাথে থাকি তবে না চাইলেও সারাজীবন একসাথে থাকা যায়। বর্তমানে আমাদের জীবনে যে সুখ আছে তা না হারিয়ে সুখে থাকলে ভবিষ্যতেও আমরা সেই সুখ ভোগ করতে পারি।

যদি আমরা সুখে থাকি তবেই দুজনের ভবিষ্যত ভালো হবে, যদি আমরা সুখে থাকি তবেই ভবিষ্যতে সেই সম্পর্ক আরও সুন্দর হবে। বর্তমানে আমরা যাকে ভালবাসি তার সাথে থাকলেই ভবিষ্যতে তার সাথে থাকতে পারব। সম্পর্কের ভবিষ্যত সুন্দর করার জন্য ভবিষ্যতের চিন্তা করার দরকার হয় না, দরকার হয় বর্তমানে আরও ভালবাসার।

বৃহস্পতিবার, ৭ মে, ২০১৫

আমরা কেন কাউকে ভালবাসি? যখন এই প্রশ্নের কোন উত্তর খুঁজে না পাওয়া যায়

আমরা আমাদের জীবনে অনেকেরই সংস্পর্শে আসি এবং অনেকেই আমাদের ভালোলাগে। তাদের ভেতর কাউকে আবার বিশেষভাবে ভালোলাগে তখন আমরা অবাক হই কেন আমাদের তাদের এত ভালোলাগে। তার কারন আমরা যেমন আমরা যখন ঠিক নিজেদের মত মানুষের সাথে দেখা করি, যখন তার গুনগুলি আমাদের গুনগুলি মিলে যায় তখন আমাদের ভালোলাগে, তখন আমরা নিজেদের সম্পুন্ন অনুভব করি অথবা আমাদের স্বভাবে যদি কিছু বাকি থাকে সেটি যদি আমরা তার কাছে পাই তখনো আমাদের নিজেদের সন্তুষ্ট মনে হয়। যেমন কোন ঠান্ডা জিনিসের সাথে যদি কোন ঠান্ডা জিনিস রাখা হয়, তাহলে সেদুটি ভালো থাকে, তাদের ভেতর কোন সংঘর্ষ হয় না। কিন্তু কোন ঠান্ডা জিনিসের সাথে যদি কোন গরম জিনিস রাখা হয় তাহলে তাদের মধ্যে ততক্ষন পর্যন্ত সংঘর্ষ হতে থাকবে যতক্ষন না পর্যন্ত তাদের ভেতরের একটির ধর্ম সম্পুন্ন লোপ পায়। যেমন দুটি বরফ যদি পাশাপাশি রাখা হয় তবে তারা একসাথে জুড়ে যাবে, তবে যদি একটি বরফের সাথে একটি উষ্ণ বস্তু রাখা হয় তাহলে হয় বরফটি উষ্ণ হয়ে যাবে নয়ত উষ্ণ বস্তুটি শীতল হয়ে যাবে। ঠিক তেমনি আমাদের মত মানুষ খুঁজে পেলে আমরা মন থেকে তার সাথে জুড়ে যাই ,তবে যদি  আমাদের সাথে তাদের কোন মিল না থাকে তাহলে তাদের সাথেও আমাদের সংঘর্ষ বেধে যায় এবং তা  ততক্ষন পর্যন্ত চলতে থাকে যতক্ষন না অবধি আমাদের দুজনের একজনের স্বভাব মুছে গিয়ে আমরা অন্যের মত হই।
যারা তাদের জীবনে তাদের মত মানুষ খুঁজে পেয়েছে তারা সুখী এবং যারা পায়নি তাদের ভেতর ছোটখাট সংঘর্ষে তার একে অন্যের সামান হবার চেষ্টা করে। যতক্ষন না অবধি তাদের ভেতরের সেই গুনগুলি মিলে যাচ্ছে ততক্ষন অবধি তাদের ভেতর সেই সংঘর্ষ চলতে থাকে।


অনেক সময় আমরা দেখি আমাদের একাধিক মানুষকে ভালোলাগে। তবে যদি আমরা ভালো করে লক্ষ করি তাহলে বুঝতে পারব সেই সকল মানুষের মধ্যে একই রকম গুন বতর্মান। আমরা সেই সকল মানুষের ভেতর থেকে সেই একটি আকর্ষনেই তাদের ভালবাসি। তখন আমাদের কাছে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে যায় যে আমারা যাকে ভালবাসি বা যাকে ভালবাসব তার ভেতর কী গুন থাকবে। তখন আমরা নিজেদেরকেও চিনতে পারি যে আমাদের মন কি ভালবাসে, আমরা কেমন তা আমরা আমাদের পছন্দ থেকেই চিনতে পারি। তাই নিজের ভালোলাগার মানুষের সংখ্যা যদি বেশি হয় তবে আমাদের বিচলিত হতে হয় না যে আমরা তাদের ভেতর কাকে ভালবাসি এবং আত্মসংশয়ে ভুগি না কেন আমাদের মন ভালোবাসার ব্যাপারে এত বিচলিত। আমাদের মনে থাকে যে আমরা সেই রকম ব্যক্তিত্বকে ভালবাসি, সেইরকম স্বভাবকে ভালবাসি এবং আমরা যাকে ভালবাসব তার ভেতর সেই গুনগুলিই থাকবে। সেই সকল মানুষের ভেতর আমরা সেই গুন্গুলিকেই অনুভব করি। তাই সেই সকলকে নিজের জীবনসাথীর জায়গায় ভেবেও আমাদের কোন ভুল হয় না।

মঙ্গলবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৫

ছোটগল্প : তুমিই আমার ভালবাসা ছিলে

সূর্য আকাশের শেষ কোনে লাল হয়ে জ্বলছে, টিমটিম করা কোন প্রদীপের মত  তার আলো আকাশে সুমুদ্রের কোন থেকে বিদায় নিচ্ছে। পুরীর সুমুদ্রের জল আজ যেন একটু শান্ত, দূর থেকে ওঠা ঢেউ গুলি যেন খুব শান্ত  হয়ে তীরের দিকে  আসছে। বাতাসে শুধু ঢেউ এর শব্দ আর সুমুদ্রতীরের একটি শান্ত ও শীতল অনুভুতি। কয়েকজন নব দম্পতি যারা পুরী  ঘুরতে এসেছে তাদের কয়েকজনকে সুমুদ্রের ধারে দেখা যাচ্ছে। একদিকে এক বিশাল সুমুদ্র চলে গেছে আর একদিকে ঘনবসতি পূর্ণ হোটেল, রেস্তরা, বাড়িঘরগুলি দেখে যেন মনে হচ্ছে এই সুমুদ্রকুল দুটি দুই রকম পৃথিবীর মাঝখানের  একটি সীমারেখা।
একটি পৃথিবী যেখানে সাগরের সুর, জলের শীতল ছোয়া, শান্তির পরশ আর একটি পৃথিবী যেখানে কোলাহল, বেচে থাকার যুদ্ধ, যেখানে নিত্যই প্রতিযোগিতার অশেষ দৌড়।  এমনই একটি পৃথিবী আমাদের থাকার জায়গা। এই কমক্রিটের পৃথিবীতে বাস করে বোধ হয় আমাদের মনও বালি আর সিমেন্ট দিয়ে তৈরী হয়ে উঠেছে।  যেখানে আর ভালবাসার জায়গা থাকছে না, যেখানে অনুভবের জায়গা থাকছে না। যেখানে টাকা  পয়সা দ্বারা গঠিত আমাদের বাইরের রূপটাই সব, আমাদের ভেতরের জায়গাটা ছোট হয়ে এসেছে। এই কমক্রিটের পৃথিবীর সাথে এই সাগরের তুলনা করে  মানব তার জীবনকে  খুব ক্ষুদ্র বলে মনে করল।   


               ‘মানব  বন্দোপাধ্যায়’ কলকাতার একজন বস্ত্র ব্যবসায়ী। তার পিতার মৃত্যুর পর সে খুব একা হয়ে পরে এবং তার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়ে তার পিতার ব্যবসা সামলাতে শুরু করে।  তার জীবনে সবকিছু থাকা  সত্বেও  সে কখনো তার জীবনে সুখী হতে পারত না, সবসময় একটা জিনিস তার মনের ভেতর বিধছিল, যে সে এই পৃথিবীতে একা, তার সুখ ভাগ করে নেবার মত কেউ তার কাছে ছিল না।  যে সকল ব্যবসাহিক বন্দু ছিল  তার শুধু তার ব্যাবসা  পর্যন্তই সীমিত ছিল।  
               মানব তারপর বিবাহ করবে বলে স্থির করে। নানান বনেদী  পরিবার থেকে তার জন্য সন্মন্ধ আসত।  তবে তার সাথে কোন রকম সম্পর্কই তৈরী হয় নি।  বনেদী পরিবারের একমাত্র একা ছেলের নামে যে সন্মন্ধ আসত সেগুলি যতখানি নয় ভালবাসার কারনে তার চেয়ে সেই পাত্রী পরিবারের সাথে তার ব্যবসাহিক সাফল্যে। কোন দুষ্প্রাপ্র পাথরের মত সকলে তাকে দেখত যেন সেই ছেলেটি হাতে পেলে কেউ কোন রত্ন পেয়ে যাবে, যাতে করে সেই পরিবার ও তাদের ব্যবসার উন্নতি ঘটবে। তবে মানব কোন রত্ন হতে চাইত না, সে তার জীবনে কোন রত্ন  খুঁজে পেতে চাইত। মাস দশেক দেখা-দেখি চলল তারপর মানব এ সবকিছুতে আর বিশ্বাস করল না।  সে দেখা-শোনার কাজ বন্দ করে আবার ব্যবসার দিকে মন দিল।  তার মানসিক অবসাদ কাটাতে কিছুদিন কাজ করার পরে সে পুরীতে ঘুরতে আসল।


              ব্যবসা থেকে একটু সময় বার করে সে পুরীর সুমুদ্রে তার মনে একটু শান্তির জন্য এসেছিল।  কলকাতার জনবহুল লোকসমাজের দুরে সুমুদ্রের নিকট এসে অনেকদিন পরে সে যেন আবার শীতলতার ছোয়া পেল।  যে শীতলতা গ্রীষ্মের দুপুরে বটতলায় কোন পথিককে শান্তি দেয়, যে শীতলতা যুদ্ধের থেকে ফিরে কোন যোদ্ধা তার মায়ের কোলে পায়।  ঠিক এমনি রকম শান্তির ছোয়া লেগেছিল তার গায়ে। যতই বনেদী পরিবারের ছেলে হোক না কেন পুরীর সুমুদ্রের সাথে তার এই প্রথম পরিচয়। এই সুমুদ্র তার কছে তার মার মত শীতল আচলের ছায়া নিয়ে এসেছিল। যেন সুমুদ্র তার মা আর সেই সুমুদ্রের তীরের কাছে এসে সে তার মায়ের কাছে এসে পৌচ্ছেছে।
               
               জীবনের মাত্র বেশ কয়েকটি দিন মানবের তার মার সাথে কেটেছিল। সাত বছর বয়সে সে  তার মা কে হারায় এবং  বাকি বয়সটা তার বোর্ডিং স্কুলে কাটে। তার ভবিষ্যতের নিরাপত্তার জন্য তার পিতা তাকে বোর্ডিং স্কুল পাঠিয়ে দেবাই উচিত ভেবেছিল। আজ এই সুমুদ্রের কাছে এসে তার ছোটবেলার দিনগুলি তার কাছে আবার তাজা হয়ে উঠল।  সে সুমুদ্রতীরে বসে দূর থেকে ওঠা ঢেউগুলির দিকে তাকিয়ে তার জীবনের কথা ভাবছিল।  


                সন্ধ্যা হতে  চলেছে  আর একটু বাদে সূর্যের আলো  সম্পুন্ন নিভে যাবে, আকাশে ফুটবে তারা আর চাদের আলো সূর্যের কাজ করবে।  জীবনে পিতার উপহার বলতে তার টাকা পয়সা এবং মাতার উপহার বলতে শুধু তার স্মৃতি।  মার কাছ থেকে আর যে একটি উপহার নেওয়া তার বাকি ছিল সেটি সে হয়ত সুমুদ্র তীরে বসে  তার কাছ থেকে নিয়ে নিতে চাইছিল। সে হয়ত তার মার কাছ থেকে তার রুক্ষ, শুস্ক জীবনে শ্রবন নিয়ে আসতে চাইছিল। সে সুমুদ্রের কাছে বসে বিধাতার কী ইচ্ছা জানতে চাইছিল। সে চাইত যদি রূপকথার মত কেউ তার কাছে এসে তার জীবনসঙ্গীর পরিচয় দিয়ে যায়, তার নাম বলে যায়, তার ছবি দেখিয়ে যায়। আজ সুমুদ্রের কাছে বসে বিধাতা হয় তাকে তার সাথে পরিচয় করে দেবে অথবা আজই সে নিজে এই সুমুদ্রমায়ের হাত ধরে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করবে।  ঠিক এমনি একটি ইচ্ছা সে করল ও সেখানেই বসে রইল।


                 সুমুদ্র তো আর কথা বলে না আর রূপকথার কোন গল্পও সত্যি হয় না।  মানব বহুক্ষন পারে বসে রইল তখন সূর্য ডুবে গেছে, আকাশে কোন মেঘ নেই আর তারাগুলি মিটমিট করে জ্বলছে, কুমড়োর ফালির মত একটি চাদ সারা আকাশে শোভা দান করেছে। চাদের আলো যেন সূর্যের আলোর মতই উজ্বল, যার দ্বারা রাতের পরিবেশ পুরো দেখা যাচ্ছে। এমনি এক সুন্দর রাতে মানব একা ফিরে যেতে চাইত না, সে সুমুদ্রের দিকে এগিয়ে গেল এবং দৃঢ়প্রতিঙ্গ  হল আজ বিধাতার ইচ্ছা ও তার ভেতর যেকোনে একজনই বেচে থাকবে।  


                 চাদের আলো আর তারাদের এই পৃথিবীতে কোন মায়ের সন্তানকেই হয়ত বিধাতা ফিরিয়ে দিতে চাইত না। সেই বিধাতার ইচ্ছা যদি মানবকে তার সঙ্গীর সাথে দেখা করাতে না চায় তবে কোন উপায়ে যেন সে তার কাছে তার পরিচয় দিয়ে যায়।  
                একটি ঢেউ মানবের পায়ে এসে পড়ল, মানবের মনে হল যেন  কোন সামুদ্রিক প্রাণী তার পা জড়িয়ে ধরেছে। ঢেউটি ফিরে গেলে সে দেখল তার পায়ের কাছে একটি জিনিস চাদের আলোয় চকমক করছে। সে সেটিকে হাতে নিয়ে দেখল একটি নুপুর। সে ভাবল বিধাতাই হয়ত সেই মেয়েটির নুপুর তার কাছে এনে দিয়েছে। সে এই নুপুরের আর একটি সন্ধান করে তার সাথে তার জীবন কাটাবে, যাকে বিধাতা তার কাছে এনে দিয়েছে।


( ২ )


“ ‘মন’ তুমি যাবে না, এখানে এসে যদি এই সুমুদ্রের জলে ভিজতেই না পারলাম তাহলে তুমি আমাকে এখানে নিয়ে এসেছিলে কেন ?” ‘মন’ তবুও বসে রইল বলল, “পুরিতে দেখার ও ঘরবার আরও জায়গা আছে, আমরা চল সেখানে যাই, তুমি কেন সুমুদ্রের কাছে যেতে চাইছ। আবহাওয়া ভালো নয়, এই সময় সুমুদ্রের ধরে যাওয়া নিরাপদ হবে না। চলো আমি তমাকে অন্য কথাও ঘুরতে নিয়ে যাচ্ছি।” আবহাওয়া সে ‘মনে’র সুমুদ্রের ধারে না যাবার কারন নয়  সে কথা ‘মহুয়া ‘ ভালোভাবে বুঝতে পেরেছিল। সুমুদ্রের ধরে যাবার অসম্মতির কারন ‘মহুয়া’ জানত না, তবে মনের দিকে তাকিয়ে সে চুপ করে গেল।  


                 ‘মানব  বন্দোপাধ্যায়’ এখন বিবাহিত, তাকে তার স্ত্রী ‘মন’বলে ডাকে।  তারা বিয়ের পর প্রথমবার এখানে বেড়াতে এসেছে। ‘মন’ পুরীতে আসতে চাইনি কারন এই জায়গা সম্পর্কে তার স্মৃতি তাকে কষ্ট দিত।


                 মানব তার স্ত্রী মহুয়াকে পুরীর অন্যান্য জায়গায় ঘুরতে নিয়ে গেল।  শহরের কয়েকটি বড় মন্দির ঘুরবার পর একটি পাচ তারা হোটেলে ‘লাঞ্চ’  তারপর একটি থিয়েটার, স্মৃতিসৌধ , সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তবে সেই সবকিছুর মধ্যে মহুয়া অলস হয়ে ছিল, ‘মনের’ কাছে তার অবস্হা আর লুকানো থাকল না। যখন বিকাল হতে যায় তারা তাদের হোটেলে ফিরে এলো।


                 দুজনে থাকবার জন্য মন যে ঘরটি বুক করেছিল সেটি ছিল সুমুদ্রের বেশ কাছে। ঘর থেকে সুমুদ্রে ওঠা প্রতিটি ঢেউ এর শব্দ শোনা যায়। ব্যালকনিতে এসে দাড়ালে সুমুদ্রের ওই  দৃশ্য চোখের সামনে পরিষ্কার ভেসে ওঠে। দুজনে থাকবার জন্য একটি বেড, ওয়াশরুম ও ঘরের প্রয়োজনিয় সমস্ত জিনিস সেই ঘরে ছিল।


                 ঘরে এসে মহুয়া ওয়াশরুমে গেল এবং মন চেয়ারে বসে বিশ্রাম করছিল। দুরের সুমুদ্র থেকে ওঠা প্রতিটি ঢেউ এর শব্দ শুনে মানব চোখ বন্দ করে প্রতিটি ভেউকে নিজের বুকের ভেতর অনুভব করছে। তার মন অবাধে সেই সুমুদ্রের দিকে চলে যাচ্ছে, তার মনের উপর তার কোন আয়ত্ব নেই, সে তার মনের স্বরূপ দর্শনে  ব্যালকনির সামনে এসে  দাড়াল। সে সেই সুমুদ্রের প্রতি চেয়ে থাকল এবং ভাবল এই সুমুদ্রই প্রথম  একদিন সপ্ন দেখিয়েছিল, এই সুমুদ্রের কাছে এসেই সে অজানা অচেনা কাউকে ভালবেসেছিল। এই সুমুদ্রকে সে তার মা বলে ডেকেছিল, এই সুমুদ্রের পাশেই সে তার প্রিয়তমার নুপুর খুঁজে পেয়েছিল। সেইসব কথা এখন যেন শুধু তার কল্পকথা বলেই মনে হল। সেইসব কথা সেই একটি ছোট বয়সের ছেলের ছেলেমানসী। ‘মন’ ব্যালকনির সামনে কাঠের মূর্তি হয়েই দাড়িয়ে থাকল। হঠাত্‍ আওয়াজ এল -- “‘মন’ আমার কাপড়টা দাও না ! ” ‘মন’ হুস ফিরে পেয়ে সে ঘরে এসে বিছানার নিচের ব্যাগ থেকে একটি কাপড় বার করে মহুয়াকে দিয়ে দিল, মহুয়া দরজা থেকে হাত বার করে তার কাপড় নিয়ে সে দরজা বন্দ করে দিল।\


               ‘মন’ বিছানার নিচে থেকে ব্যাগটা বিছানার উপরে তুলে ব্যাগের চেন  আটকে দিতে গিয়ে দেখল ব্যাগের পাশের একটি ছোট জায়গায় কি একটা যেন ছনছন করছে। ব্যাগের পাশের সেই চেনটা খুলে দেখল সেখানে একটি নুপুর। ‘মন’ বুঝতে পারল এটি সম্ভবত মহুয়ার নুপুর, সে স্নান করতে যাবার আগে এখানে রেখে দিয়ে গেছে। মহুয়ার পায়ের সেই নুপুরটি মানবকে সুমুদ্রের পারে পাওয়া আর একটি নুপুরের কথা মনে করিয়ে দিল। মানব যখন আগে পুরিতে এসেছিল ঠিক এমনি একটি নুপুর খুঁজে পেয়েছিল যা সে আজও খুব যত্ন করে তার কছে গুছিয়ে রেখেদেছে। মানব ডায়রি লেখে, সে তার ডায়রি কাউকে দেখতে দেয় না, যে খানেই যায় না কেন তার ডায়রি সে সবসময় তার সাথে রাখে।  আজও সে এখানে তার ডায়রি নিয়ে এসেছে, সে তার ব্যাগ থেকে তার ডায়রিটা বার করে তার ভেতর থেকে  সেই নুপূরটি বার করল।সেত এখনো তার কাছে নতুন হয়ে আছে, ডায়রির ভেতরে থেকে ডায়রির উপরে দাগ হয়ে গেছে তবে নুপূরটি কোন ভাবে নোংরা হয়নি। ‘মন’ সেই নুপুরটিকে আনেকদিন ধরে সবার চোখের আড়াল করে তার কাছে লুকিয়ে রেখেছিল। আজ সে নুপুরটিকে বার করে হাতে নিয়ে তার দিকে রইল। ঠিক এইসময় ওয়াসরুমের দরজার শব্দ হল, মানব জবুথবু হয়ে নুপুরটিকে তার ডায়রির ভেতর ঢুকিয়ে তার ব্যাগের ভেতর পুরে দিল। মহুয়া ওয়াসরাম থেকে বেরিয়ে তার ভেজা চুলে একটা তোয়ালে জড়িয়ে মানবকে জিজ্ঞাসা করল, “‘মন’ তুমি কী করছ” ? মানব বলল ,  “ কিছু না।”


( ৩ )


বিকাল হল সূর্যের আলো হেলে পরেছে, ব্যালকনীর পর্দার আড়াল থেকে সূর্যের আলো মানবের মুখে বারে বারে এসে পরছে। হওয়ার পর্দা উড়ে গিয়ে বারে বারে সূর্যের আলো মানবের চখে এসে পরছে ও সুমুদ্রের  হওয়া মাঝে মাঝে ঘরের ভেতর এত ঝর তুলছে যেন সবকিছু উড়িয়ে নিয়ে যাবার মত।


                পাচ তার  হোটেল থেকে ঘুরে আসার পর মানব ও মহুয়া তাদের ভাড়া করা হোটেলের ঘরে এসে বিশ্রাম করছিল। পুরী  সম্পর্কে মহুয়ার সবচেয়ে বর আকর্ষন ছিল এই সুমুদ্র, সে এই সুমুদ্র দেখতে চাইত। তবে মানবের অসম্মতিতে মহুয়া সেখানে আর যেতে পারেনি। শহর ঘুরবার সময় সে সেসব কোন কিছুকেই অনুভব করেনি , কোনকিছুকে না পাবার শোক সবসময় তার মনের ভেতর চেপে রেখেছিল। হোটেলে ফিরে আসার পর সে খুব চুপ চাপ ছিল।


               মানবের চোখের ওপর  রোদ এসে মানবের ঘুম  ভাঙিয়ে দিল। মানব ঘুম থেকে উঠে  ব্যালকনির সামনের দরজাটা বন্দ করে যখন তার বিছানার দিকে তাকাল, দেখল মহুয়া সেখানে নেই। ওয়াশরুমের দরজাও বাইরে থেকে আটকানো আছে। মানব ভাবল, তাকে জিজ্ঞাসা না করে মহুয়া কথাও যায় না। মানব গায়ে একটা জামা পরে  ঘর থেকে বিরিয়ে তাকে খুজতে বেরল, রিসেপশন, ইনক্রারী সেকশনে জিজ্ঞাসা করায় কেউ মহুয়াকে চিনতে পেল না। মানব হোটেলের বাইরে আসল মহুয়াকে খোজার জন্য, তবে হোটেলে ও হোটেলের চারপাশে কথাও তাকে দেখতে পেল না।


               মানব যেন একটু অস্হির হয়ে উঠল। মহুয়া তার মোবাইল ফোনটিকেও  হোটেলের ঘরে ফেলে রেখে গেছে।  মানব ভাবল মহুয়া তো কোন ছেলে মানুষ নয় যে হারিয়ে যাবে, তবে সে এই সময় কোথায় গেছে। মানব হোটেলের সামনে একটি পার্কে চুপ করে বসে রইল।
              “বাবা  আমি ওখানে যাব”, কোথায় , “ঐ সুমুদ্রের ধরে”, এখন ?  “হ্যা”। মানবের সামনে একটি ছোট বাচ্চা মেয়ে তার বাবার সাথে সুমুদ্রের ধরে যাবার জন্য বায়না করছে। তাদের দেখে মানবের মহুয়ার কথা মনে পড়ল যে আজ সকালে মহুয়াও ঠিক এমনি রকম বায়না করছিল। তবে মানব তাকে সুমুদ্রের ধরে যেতে দেয়নি বরং আবহাওয়া ভালো না থাকার অজুহাত দিয়েছে।


                 মানব পার্কের বেঞ্চ থেকে উঠে সুমুদ্রের দিকে সেই বাবা ও  তার মেয়ের পিছন পিছন গেল। মানবের মনে হয়েছে মহুয়া বোধ হয় সুমুদ্রের কাছে গেছে। কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে মানব দেখল মহুয়া একজায়গায়  দাড়িয়ে সুমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। মানব মহুয়ার কাছে এসে তার কাধে হাত দিল, মহুয়া ঘুরে মানবের দিকে তাকাল। মানব তাকে জিজ্ঞাসা করল, “তুমি এখানে দাড়িয়ে আছ কেন ? আমি তোমাকে কত জায়গায় খুজছিলাম, কাউকে কিছু না বলে এভাবে কথাও যেতে আছে ? তুমি কী যান না তোমার জন্য কেউ চিন্তা করবে” ? মহুয়া বলল, “‘সরি’ ভুল হয়ে গেছে, আমি আর এমন করব না”।এই বলে মহুয়া মানবের হাত ধরে তাদের হোটেলের দিকে যেতে চাইল। তার দুজন আবার যখন হোটেলে ফিরে আসছিল, মানব মহুয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝল সে এখনে এসে সুখী নয়।  তার মুখে তার মনের কথা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে তার মন ভালো নেই। মানব কখনো মহুয়াকে এভাবে দেখতে চায় না, মানব খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারল তার মন ভালো না থাকার কারন। বিয়ের পর প্রথম ঘুরতে এসে মানব তার  মহুয়াকে এই উপহার দিতে চাইত না।


                 হোটেলের কাছাকাছি এসে মানব  দাড়িয়ে পরল। মহুয়া জিজ্ঞাসা করল , “কী হয়েছে ?  দিড়িয়ে গেলে কেন” ? মানব কোন কথা না বলে তার হাত ধরে আবার থাকে সুমুদ্রের দিকে নিয়ে গেল। মহুয়া জিজ্ঞাসা করল, “তুমি কোথায় যাচ্ছ”, মানব বলল, “চলো না”।


                  তারা দুইজন সুমুদ্রের কাছে এসে দাড়াল।  মানব দেখল , সেই ছোট্ট  মেয়েটি যে তার বাবার সাথে সুমুদ্রের কাছে আসতে চাইছিল সে সেখনে মাটি নিয়ে খেলা করছে, তার জামা কাপড়ে কাদা লাগাচ্ছে, আর তার বাবা তার মত ছোট হয়ে তার সাথে খেলা করছে। মানব মহুয়াকে বলল, “দেখছ মহুয়া ওদেরকে, ঐ বাবা আর মেয়েকে। আমি যখন হোটেলে ছিলাম দেখছিলাম ঐ বাচ্ছা মেয়েটি সুমুদ্রের ধরে যাবার জন্য তার বাবার কাছে বায়না করছিল। তার বাবা তাই তাকে এখানে নিয়ে এসেছে, তার সাথে খেলা করছে, জামা-কাপড়ে কাদা মাটি লাগাচ্ছে। জামা-কাপড়  নোংরা করার জন্য হয়ত ঘরে গিয়ে সে তার মার কাছে বকা খাবে এবং তার পিতাও অনেক কথা শুনবে। সেই পিতা সেই সবকিছু মানিয়ে নিয়েছে শুধু তার মেয়ের খুশির জন্য। তবে আমি কি তোমার জন্য একটু মানিয়ে নিতে পারি না” ?  মানব বলল, “আমি জানি তুমিও সুমুদ্রের ধারে যেতে চাইছিলে, তবে আমি তোমার কোন কথা শোনেনি। যখন আমার শহর ঘুরতে বেরিয়ে ছিলাম তখন তোমার মন ভালো ছিল না, হোটেলে ফিরে এসেও তুমি ভালো থাকতে পারোনি।  তাই এখন তুমি সুমুদ্রের সামনে দাড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে ছিলে। তবে এখন আর তোমার মনকে বেধে রেখ না সে যেখানে যেতে চায় তাকে সেখান যেতে দাও”।


                 মানব ও মহুয়া দুজনে সুমুদ্রের সামনে এসে বসল, মাঝে মাঝে কয়েকটি বর ঢেউ এসে তাদের পা ভিজিয়ে  দিয়ে যাচ্ছে। সেই ছোট্ট মেয়ে ও তার বাবা সুমুদ্রের জলে গা হাত পা ধুয়ে তারা তাদের হোটেলের দিকে ফিরে গেল। সন্ধ্যা প্রায় ঘনিয়ে এসেছে, সুমুদ্রের তীরে বেশি লোক নেই, দু একটি লোকের দুরে দেখা যাচ্ছে। শান্ত নিলিবিলি জায়গায় বসে তারা দুজন তাদের মনের কথা বলছে, যেন সেই সুমুদের সাক্ষী রেখে তারা দুজন মন থেকে পরস্পরকে আরও ভালো করে চিনছে।


                  মনব বলল, “মহুয়া জান , এই সুমুদ্রের সাথে আমার  একটি স্মৃতি জড়িয়ে আছে, আমি ছোটবেলায় আমার মাকে হারিয়েছি, বাবা ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকত। তাই মা মারা যাবার পর আমি বোর্ডিং স্কুলে মানুষ হই।  আমার পড়াশুনা শেষ করার পর বাবাও এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়।  আর আমার জন্য তার ব্যবসা ও সম্পত্তি রেখে যায়। আমার ছোটবেলার কোন দিনই আমি আমার বাবার সাথে খেলা করেনি। আমার ছোটবেলার দিনগুলিতে নিজের বলতে আমি শুধু নিজেই ছিলাম। বাবার ব্যবসা আমার হাতে আসার পর আমি কয়েকটি মুহূর্ত নিজেকে শান্তি  দিতে পুরীতে ঘুরতে এসেছিলাম। তখন ঠিক এমনি একটি দিনে সুমুদ্রের ধরে আমি একাএকা আমি বসেছিলাম”।
মহুয়া মানবের দিকে তাকিয়ে আছে, সে বলল, “তারপর কী” ?
মানব। “আমি এখানে এসে খুব শান্তি পেয়েছিলাম, সুমুদ্রের প্রতিটি ভেউ যেন আমার বুকের উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল।আমি সেই শান্তি শুধু আমার মায়ের কোলেই অনুভব করতাম। সেইদিন সুমুদ্র আমার কাছে আমার মা হয়ে এসেছিল। সন্তান যতই ক্লান্ত হোক না কেন তার মার কোল যেমন তার কাছে শীতল ছায়া তেমনি আমার জীবনে এই প্রথমবার এই সুমুদ্র আমার মাথার ওপর ছায়া করে আমাকে জীবনের দুঃখ, যন্ত্রনা ও ক্লান্তি থেকে বাচিয়ে  ছিল”।
মহুয়া বলল, “তোমার সুমুদ্রের কাছে আসতে এত ভালোলাগে তবে তুমি কেন এখানে আসতে চাওনি”।
মানব বলল, “আমি আমার জীবনে একা বেচে থাকার যন্ত্রনা সবসময় অনুভব করেছি, কিন্তু সেই দিন মার ভালোবাসাকে এই সুমুদ্রের কাছে অনুভব করে আমি আর একা থাকতে চাইনি। আমি বিধাতার  কাছে বলেছিলাম আজকে তুমি আমাকে আমার জীবন সঙ্গীর সাথে পরিচয় করে দাও তা না হলে এই সুমুদ্রে আমি ডুব দিয়ে মার সাথেই এই পৃথিবী থেকে বিদায় নেব”।
মহুয়া। “তারপর”।
মানব। “যখন আমি মরবার জন্য সুমুদ্রের দিকে একটু একটু করে পা বাড়াচ্ছি, ঠিক তখনি একটি ঢেউ এসে আমার পায়ের উপর একটি জিনিস এসে পরল। আমি সেটি হাতে নিয়ে দেখলাম সেটি একটি নুপুর। আমি ভেবেছিলাম বিধাতা হয়ত বলতে চেয়েছিল যে এই নুপূর্তি যার পায়ের সেই তোমার জীবনসঙ্গিনী। সেইদিন থেকে আমি সেই অজানা মেয়েটিকে ভালবাসি, সেই নুপুরটি আজও আমি গুছিয়ে রেখেছি, তবে অনেক চেষ্টা করার পরেও আমি সেই নুপুরের আর এক জোড়া আমি খুঁজে পায়নি। তাই তোমার এই সুমুদ্র আমার আঘাত করেছে, বিশ্বাস রাখেনি, তাই আমি কখনো সুমুদ্রের কাছে আসতে চাইনি”। মহুয়ার চোখ দিয়ে জল পড়ছে। সে চুপ করে রইল, কোন কথা বলল না। মানব সুমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে।মহুয়া চোখের জল মুছে মানবের দিকে তাকাল। ইতিমধ্যে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। সূর্য বিদায় দিয়ে আকাশে অনেক তারা ফুটিয়ে দিয়েছে এবং পূর্নিমার চাদের আলোতে তারা তাদের মুখ দেখছে।


                
( ৪ )


সন্ধ্যার পর তারা তাদের হোটেলে ফিরে এল। ব্যালকনির সামনে দাড়িয়ে মহুয়া মানবের মুখের কথাগুলি ভাবছিল। যদি মানব সেই অচেনা অজানা কাউকে ভালবাসে তবে সে কেন তাকে বিয়ে করেছে। মানবের জন্য হয়ত সে নয় , মানবের ভাগ্য বিধাতা হয়ত অন্য কাউর সাথে লিখেছিল। মানবের জীবনে মহুয়া হয়ত ভুলবসত চলে এসেছে। মহুয়া সে সবকথা চিন্তা করতে থাকল এবং ভাবল মানব সারাজীবন একা থেকে মানুষ হয়েছে তার জন্য বিধাতা যাকে ঠিক করে রেখেছে মানবকে তার কাছেই থাকা উচিত। মহুয়া ভাবল সে যে কোন জায়গা থেকে সেই নুপুরের মেয়েটিকে খুঁজে বার করবে। এই কথা ভেবে সে ব্যালকনি থেকে তাদের ঘরের ভেতর প্রবেশ করল, ইতিমধ্যে মানবও ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসেছে। মহুয়া মানবকে জিজ্ঞাসা করল, “‘মন’ তুমি ওই নুপুরটিকে কোথায় গুছিয়ে রেখেছ” ? মানব হা করে তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল, বলল, “তুমি হাত পা ধুয়ে আস এখন আবার ঐসব কেন” ?  মানব জোর করায়  মহুয়া  ওয়াশরুম থেকে ফিরে এল। তবে তার পরেও মানবকে একই কথা জিজ্ঞাসা করল, “‘মন’ঐ নুপুরটি কোথায়” ? অনেকবার প্রশ্ন করার পর চারবারের বার মানব বলল, “আমার ঐ ডায়রির ভেতর সেটি রাখা আছে” ? মহুয়া জিজ্ঞাসা করল, “তোমার ডায়রি কোথায়” ? ‘মন’ তার ব্যাগ থেকে ডায়রিটা বার করে মহুয়াকে দিয়ে এবং সে ব্যালকনির সামনে এসে দাড়াল।


               মহুয়া ডায়রির ভেতর থেকে নুপুরটিকে হাতে নিয়ে তাকে চিনতে পেরেছিল।  তার মনে পড়ল  একবছর আগে সে যখন পুরীতে এসেছিল, তার পায়ের ঠিক এমনি একটি নুপুর হারিয়ে গিয়েছিল। ‘মন’ তার নুপুরটিকেই খুঁজে পেয়েছে। মহুয়া নুপুরটিকে হাতে নিয়ে গুমরে গুমরে কাদছে। মহুয়ার গলার আওয়াজ শুনে মানব ব্যালকনি থেকে মহুয়ার কাছে এসে তাকে জিজ্ঞাসা করল, “‘মহু’ কাদছ কেন ? কী হয়েছে ? বস এখানে বস”। মানব মহুয়াকে বিছানার উপর বসিয়ে তার কাছে হাটু ভাজ করে দাড়াল। “‘সোনা’ কী হয়েছে ? কাদছ কেন ? না, ভালো মেয়ে কাদে না”। মানব কিছুক্ষন পরে তার কান্না থামিয়ে তাকে বলল, “এবার বল কি হয়েছে”। মহুয়া বলল, “ আমি যখন প্রথম এখনে এসেছিলাম আমি এই নুপুরটিকে হারিয়ে ফেলেছিলাম তখন আমি খুব কেদেছি। এই নুপুরটি আমার জন্মদিনে আমার বাবা আমাকে দিয়েছিল, আজকে তোমার কাছ থেকে তাকে খুঁজে পেয়েছি।
          মানব মহুয়াকে কাছে টেনে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরল। রাত শান্ত, বিবাহের পর প্রথম  তারা  পরস্পরকে আরও নতুন করে কাছে পেল। আকাশে পূর্নিমার চাদ আর ঘরে আর এক ভালবাসার পূর্নিমা তাদের জীবনে তারা অনুভব করল। “তুমিই আমার ভালবাসা ছিলে, তোমাকেই ভালোবেসেছি তবে তোমাকেই চিনতে পারেনি”।

বৃহস্পতিবার, ৯ এপ্রিল, ২০১৫

প্রকৃতির কবিতা : বাতাসের সুর

সুর, তাল, ছন্দের সাথে যার জীবন, তাকে সুর খুঁজে পেতে কষ্ট করতে হয় না। যে কিনা গান লিখবে বলে সুর খুজতে চায়, সে সব কিছুতেই সুর খুঁজে পায়। সকালে উঠে বাতাসের ভেতর পাখিদের যে সুর ভেসে আসে, বেলা বয়ে গেলে সেখানে জনমানবের কক্কোল, প্রখর দুপুরে রোদের সোনালী মেলায়, আবার সন্ধ্যা রানী এসে যখন সেখানে সন্ধ্যা নামায়, সেই সব কিছুর ভেতর থেকে সেই ব্যক্তি গানের উপাদান খুঁজে পায়। সে সব কিছু থেকেই তার গানের সুর খুঁজে পায়।


আকাশের কোনে আলোর আভাস দেখে
জেগে ওঠে আলো পাখির বাসাতে।
কন্ঠ ছেড়ে ডাক দিয়ে তোলে
রাতের মাদারী নেশা মানুষের বাসাতে।


সকালের আলোতে চোখ মুছে দিয়ে
দিয়ে যাও সুর পাখির কন্ঠ পুরে।
বাতাসের গায়ে লেগে থাকে সুর
বেজে ওঠে তাতে কবির গানের নুপুর।


বেলা বয়ে গিয়ে পায় সে দুপুর
বাতাসে খেলা করা সোনালী রোদ্দুর।
সন্ধ্যারানী ঢেকে দেয় সন্ধ্যার আচল
তার সাথে বেজে ওঠে কবির গানের কাকন।


কত রূপে সজ্জা তোমার মাথা
পাই যদি একটু সুরের জায়গা।
মানুষ কিবা পক্ষীর কন্ঠের ভালবাসা
বেধে দিয়ে যাও আমার সুরের বীনা।


আনন্দের ফুলঝুড়ি বাতাসের সুর
পাখির কিচির মিচির, কোলাহলের দুপুর।
চাতকের মত চেয়ে থাকি তোমার ওপর
শ্রবণে শুধু তোমায় শুনি আমার ভেতর।


তোমারি সুর থাকে হৃদয়ের প্রতি ঝঙ্কারে
প্রকৃতির উ ত্‍সব আমার হৃদয় মন্দিরে।
আমার কবিতার জীবন
শুধু তোমার শুধু ফসল।


বাতাসের সুর হৃদয়ের নুপুর
পাখির কির কির শ্রবণে মধুর।
জীবনের সুর এই উ ত্‍সবের পুর

সেই সুরের গান লেখা হয়েছে প্রচুর।

বুধবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১৫

প্রকৃতির কবিতা : পৃথিবীতে প্রথম সকাল

পৃথিবীতে প্রথম যে দিন সকাল হয়েছিল, প্রথম যে দিন উষা এসেছিল সেই দিনটি হয়ত শীতকাল হবে। শীত মানুষের কাছে, পৃথিবীর কাছে সবুজ বিপ্লব নিয়ে আসে, মাঠে ঘটে ফসলে ভরিয়ে দিয়ে কৃষকের মনে সুখ নিয়ে আসে। শীত বাজারে শাক, সজ্বি ভরিয়ে তোলে, শীত সকালবেলায় এই প্রকৃতিকে ঠিক এতটাই সাজিয়ে তোলে, যাতে মনে হয় সে বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের নক্ষত্রের আলোকে তার কাছে আসতে বলছে, ঠিক সেই জন্য কোন নক্ষত্রের আলো পৃথিবীতে হয়ত প্রথম শীতকালেই এসেছিল। শীতে প্রকৃতি রানী যেভাবে সাজে তার যৌবন যেভাবে ভরে ওঠে তাতে যেন বিশ্বব্রহ্মান্ডের সকলে দেখতে তার কাছে আসে। তাদের মধ্যে একজন হয়ত উষা হয়ে এই পৃথিবীতে এসেছিল। পৃথিবীর প্রথম সকাল হয়ত শীতকালই ছিল। 


পৃথিবীরপ্রথম সকাল তুমিই এনেছ
তুমিইপ্রকৃতিকে কত সাজিয়েছ   
কুয়াসারচাদরে,    
ফুল ফলের ভুষন দিয়ে
প্রকৃতিরানীরশৃঙ্গার করেছ
তুমি বিশ্বের আলোকে ডাক দিয়েছ
পৃথিবীরপ্রথম সকাল তুমিই এনেছ


তাকে দেখতে এসেছ সবনক্ষত্র আলো
তাদেরতুমি তোমার কুয়াসায় ডাক
হাজারপথ দুরে, থেকে
জলকন্যারভুষন পড়ে
 তোমার স্বয়ম্বরে আসতেবল
তুমি বিশ্বের আলোকে নিমন্ত্রন কর
পৃথিবীরপ্রথম সকাল তুমিই এনেছ


ধরনী উষার মিলনশুধু তোমার আয়োজন
তুমিইকরেছ পৃথিবীর সাথে এই মিলনবন্ধন 
তাকে লালন করে   
তার বক্ষ দিয়েছে ভরে
সন্ধিক্ষনেতাকে এনেছ স্বয়ম্বরে 
তুমি পৃথিবীর বুকে তার বিবাহেরলগন      
পৃথিবীরপ্রথম সকাল তোমার হাতেআগমন


পৃথিবীরপ্রথম মিলন তুমিই করেছ
শীতেরপ্রতাপে তাদের কাছে এনেছ
বিবাহেরশুভ লগ্ন আসে
তোমার দিনগুলিতে
এক বন্ধনে বাধতে তাদেরদুজনাকে
তুমি পৃথিবীর সাথে উষার মিলনকরেছ
পৃথিবীরপ্রথম সকাল তুমিই এনেছ      


বিজ্ঞান আমাদেরকে বলে পৃথিবী একটি জলন্ত আগুনের পিন্ড থেকে কোটি কোটি বছর ধরে ঠান্ডা হয়ে পৃথিবীতে পিরনত হয়েছে। নবজাতক সন্তানের ন্যায় পৃথিবী কোমল হল, তার ওপর ঋতুর বৈচিত্র শুরু হল, গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত, বসন্ত প্রভৃতির প্রভাবে পৃথিবীর গায়ে নতুন আবরনের সৃষ্টি হল, সবুজের সৃষ্টি হল, তার কোলে একদিন মানুষের জন্ম হল, তবে সে সব কিছু যেন শীত ও তার সোহাগেই প্রথমে শুরু হয়েছিল। যেমন শীতে পৃথিবীর কোল ভরে ওঠে, সেই কোলেই হয়ত মানুষের জন্ম হয়েছে, সেখানেই হয়ত পৃথিবীর প্রথম কুয়াসা এসেছে। শীতেই বিবাহ হয়, শীতেই নতুন জীবনের শুরু হয়, শীতই আমাদের কাছে আসতে শেখায়। যেমন শীতে বিবাহে মানুষের জীবন শুরু হয়েছে তেমনি হয়ত শীতে প্রথম সকাল শুরু হয়ে পৃথিবীতে দিনের শুরু হয়েছে। 

মঙ্গলবার, ৬ জানুয়ারী, ২০১৫

শীতের কবিতা : শীতের কুয়াসা



শীতে কুয়াসা বাতাস ডেকে দেয়, আমাদের চোখে তা আমাদের কুয়াসা দেখায়। কুয়াসা যখন জলকানা হয়ে কচু পাতায় জমে যায় আলো এসে  তাকে উজ্বল করে যেন মুক্ত রেখে যায়। কুয়াসা শীতে প্রকৃতি রানীকে সাজায় তার ভেজা চাদরে, বেলা হয়ে গেলে সে চাদর খুলে যায়। মানুষ যেমন শীতের প্রতাপে চাদর মুড়ি দেয়, প্রকৃতি রানী তেমনি শীতের সকালে কুয়াসার চাদর গায়ে জরায়। মানুষ যেমন বেলা হলে চাদর খুলে নেয়, প্রকৃতি রানীও বেলা পোহালে সূর্য যখন তার শিখরে উঠতে চায় সে তার কুয়াসার চাদর খুলে নেয়।  


শীতে তুমি আস ঝাপসা তোমার আচল নিয়ে
কুয়াসা  সে নাম তোমায় বলে ।
তুমি আস প্রকৃতির গায়ের চাদর হয়ে
জলকন্যার পুথি দিয়ে ভরে।
ঝাপসা হয়ে আস স্বচ্ছ এ বাতাসে
পৃথিবীর কাপড় ভিজিয়ে দিয়ে।
পথ, ঘাট, দূর সমীরন পায়নি দেখিতে
শীতে তুমি আস ঝাপসা মায়ার আচল নিয়ে।


শীতে তুমি আস সবার চোখের বালি হয়ে
ধরনীর সাথে উষার মিলনতিথিতে।
উষার আলো তোমায় ভেদ করে বেলা পোহাতে
তোমার ঝাপসা ছবিতে এই মাটি ভালবাসে।
তোমার আদলে মিলনবন্ধনে বাধে তারা দুজনে
পৃথিবীর বুকে সৃজনতা ভরিয়ে দিয়ে।
কুয়াসার চোখের বালিতে উষা আসে তার বিশ্বাসে
শীতে তুমিই দাও উষাকে পৃথিবীর হাতে তুলে।


শীতে তুমি আস জন মানবের সুখ হয়ে
সবাই ওঠে তোমার দেখা পেতে।
তুমি আসবে জল কন্যার ভার নিয়ে
দিগন্তকোন, পথের সন্মুখে।
বুঝবে সবাই শীত এসেছে তোমার পালকি করে
পৃথিবীর সাথে মিলন সঙ্গমে।
কুয়াসার ঝপসা বাতাসে আসতে হয় আরও কাছে
শীতে তুমিই বল দুজনকে আরও কাছে আসতে।


শীতের কুয়াসা আমাদেরকে দূরকে স্পষ্ট দেখতে দেয় না, আমাদের তাকে দেখতে তার কাছে আসতে হয়। কুয়াসা আমাদের চোখের বালি হয়ে, আমাদেরকে ঝপসা দেখায়, আমরা তার কাছে হেরে দূরকে বিশ্বাস করি। দূরে যা আছে ভালো আছে মনে করি, এই কুয়াসায় দূরকে বিশ্বাস করতে শিখিয়েছে। এই কুয়াসাই আমাদের কাছে আসতে শেখায়, কোন জিনিসের কিংবা কোন মানুষের, দূর থেকে যাকে মলিন মনে হয় তার কাছে এসে আরও ভালো করে চিনে নিতে শেখায়। প্রকৃতির এই রূপ মানুষকে কত না দান দেয়, মানুষের জীবনকে কত কিছু শেখায়। হয়ত মনের কোন কুয়াসার জন্য তাকে চিনতে পারেনি ও ভালোবাসেনি তবে তার কাছে এসে যদি তাকে চিনতে পারি মনের সেই মলিনতা দূর হয়ে যাবে।

শনিবার, ৩ জানুয়ারী, ২০১৫

প্রকৃতির কবিতা: উষার বিবাহমঙ্গল



বিবাহে পিতা তার পুত্রীর কন্যাদান করেন তবে পৃথিবীর কাছে কে সকালের দান করেন ? সে আকাশের চাদ; ঘুম পারানির গানে যার পরমাদ, প্রভাতের আলোয় যে মিশে যায়, পৃথিবীকে সাজিয়ে যেন তার কন্যাকে রেখে যায়। কচু পাতায় মুক্তমনি, ঘাসে, ঘাসে জল দেবীকার পুঁথি, আকাশের ললাটে আকা চাদের ছবি, বাতাসে ছড়ানো তার ঘুঙুর গুলি বলছে যেন এ ঐ চাদের কন্যার আগমনী।


           ওগো চাদের মেয়ে !
শান্ত পৃথিবী নয়ন মেলে তোমা পানে চেয়ে আছে।
        চপল চরনে এস ধরনীতে,
        চাইছে পৃথিবী তোমার দেখা পেতে;
সকলে চোখ মুছে তোমায় দেখতে চায়,
বাপের হাত ধরে পৃথিবী জগাতে এস আমার গায়।

         ওগো চাদের মেয়ে !
দিগন্তের ঘোমটা তুলে এসো চোখের পড়ে।
       তারার আকাশ বিদায় দিয়ে,
       তোমার আকাশ আন পাখির গানে;
পলক চেপে ঘুমঘোরে আছে সব্বাই,
ফুলের কুড়ি পাপড়ি হতে তোমার অপেক্ষায়।


        ওগো চাদের মেয়ে !
তোমার পিতার হাত থেকে পাব তোমায় কন্যাদানে।
       তোমার সাথে শুভদৃষ্টি বেধে,
       আমার সৃজনরহস্য ফুটবে পুষ্পটিয়ে;
উষার আমেজী বরমাল্য দিয়ে বরন কর আমাকে,
পুষ্পের ভান্ডারে সাজবে ভরে আমাদের সংসারে।


        ওগো চাদের মেয়ে !
পিতার আয়ু ফুরিয়ে এলে আস পিতার আলো হয়ে।
      পিতাকে কপাল কোলে রেখে,
      তার সাথে আস এই বন্ধনে;
পিতার ছায়া একে রাখ তোমার ললাটে,
হাজার ফুলের গন্ধ পেয়েও তুমি নও আপন অহংকারে।


        ওগো চাদের মেয়ে !
চাদ দিয়েছে তোমায় আমার হাতে তুলে,
       তোমার পিতার কন্যাদানে,
       ভরতে এ ধরাতল সৃজন শৃঙ্গারে;
চাদমামা নামে তোমার পিতা পূজিত হন,
তোমার কাছে এসে পিতা কন্যায় মিলে যান।


       ওগো চাদের মেয়ে !
পৃথিবী ভরে তুলতে বিশেষ অলংকারে;
      তুমি আস তার গায়ে পড়ে,
      ফুলে, ফুলে, ঘাসে, ঘাসে, ভূষন জড়িয়ে;
তোমার পিতা তোমায় দিয়ে আপন ভুলতে চান
সৃজন রহস্যে পিতার এই পরম কন্যা দান।