দুটি প্রজাপতি পরস্পরকে খুব ভালবাসত। তারা একদিন ভাবল তাদের ভেতর কে কাকে বেশি ভালবাসে। এর কোন উপায় না খুঁজে পেয়ে ২য় প্রজাপতিটি বলল, ‘ঐ ফুলটি সকালে ফুটলে তাতে প্রথমে যে এসে বসবে তার ভালবাসা সবচেয়ে বেশি প্রমান হবে’।
দ্বিতীয় প্রজাপতিটি সকালের অপেক্ষা করল না, সে সারারাত সেই ফুলের কাছে বসে রইল। সকাল হবার সময় যখন ফুলটি ফুটলো সে দেখল প্রথম প্রজাপতিটি তার ভেতর দম বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। দ্বিতীয় প্রজাপতিটি আসার আগেই ১ম প্রজাপতিটি ফুলের পাপড়ি ভেদ করে তার ভেতর বসে ছিল।
সেদিন শর্ত অনুসারে প্রমান হল, ১ম প্রজাপতিটি তাকে বেশি ভালবাসে। কারন ১ম জনের কাছে সেই বাজি যেটাই সবকিছু ছিল, তাতে তার প্রাণ যাক না কেন।
১ম প্রজাপতিটির পাখনা চিড়ে গেছে, পায়ে আঘাত লেগেছে, ভালোভাবে নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে এই অবস্হায় তাকে দেখে ২য় জন সেখান থেকে তাকে তুলে নিয়ে গেল, অনেক দিন ধরে তার শ্রুশুয়া করল, তার মুখে খাবার তুলে দিল, নতুন করে তার পাখনা গজানো অবধি সবসময় তার কাছ থেকে তাকে আত্মরক্ষা করল। তবে দ্বিতীয়জন সেই বাজী হেরে গেছে। সবাই ভাবল প্রথম জন দ্বিতীয় জনকে বেশি ভালবাসে।
সেই প্রজাপতি দুটির মত আমরা আমাদের জীবনকেও তেমন করে তুলেছি, সবাই সেই বাজী জিততে চাই। একজন মানুষের জন্য আমরা কত দূর করতে পারি, কতকিছু করতে পারি, কতদুর করি তা দেখাতে চাই। সংসারে কে কার জন্য বেশি কাজ করে তার হিসাব করে শুধু সেই বাজি জিততে চাই।
‘আমি বেশি কাজ করি, প্রতিবার আমিই মানিয়ে নেই, প্রতিবার আমি সঝ্য করি’ এই সব কথা মনে করে নিজের কাছে শুধু এটাই প্রমান করার চেষ্টা করি, ‘আমি তাকে বেশি ভালবাসি’। কিন্তু সেই ভালবাসা কি তার কাছে গিয়ে পৌচ্ছায় ?
ভালবাসা শুধু কর্মের বিনিময় নয়, শুধু জিনিসের বিনিময় নয়, ভালবাসা হল সেই কাজ করার সময়, সেই জিনিস দেবার সময় ভাবের বিনিময়।
একজনের জন্য কোন ভাল কাজ করার সময় তার সম্পর্কে কোন ভাল কিছু চিন্তা না করাও সম্ভব। যেমন ১ম প্রজাপতি যখন তাকে সেই ফুলের মধ্যে বন্ধি করে নিয়েছিল তখন সে তার বাজি জেতার কথা ভেবেছিল, তাদের দুজনের ভালবাসার কথা ভাবেনি।
দুজনের ভেতর একজন ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে চাই আর এক জনের তাতে মন নেই। তবে সে অন্যের খুশির জন্য সেই কাজ করে সারাক্ষন ভাবতে থাকে, ‘ তার জন্য আমাকে এখনে ভোগ করতে হচ্ছে’। অন্য একজনের জন্য হাসি মুখে অনেক কাজ করি তবে হাসি মনে করি না।
যে অন্যের জন্য কাজ করে সে সবসময় ভাবে সে বেশি ভালবাসে, সবার কাছ থেকে সে এই খেতাব পায় সে এই সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি কাজ করছে। সে সেই বাজীতে জয়ী হয়। এই টুকু গল্পের প্রথম পর্ব।
১ম প্রজাপতিটিকে সেই অবস্হায় দেখে ২য় প্রজাপতিটি যে কাজ করেছে, কতদিন ধরে তার শ্রুশুয়া করেছে, তার জন্য খাবার এনে দেছে, সে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাওয়া অবদি তার সাথে থেকেছে। এই সব কিছু করার সময় সে ভাবেনি সে অন্যের জন্য কিছু করছে, সে ভেবেছে যে তার ভালোবাসাকে বাচাতে নিজের জন্য করছে।
তার অসুস্হ বন্ধুকে বাচাতে তাকে কেউ বলেনি, সে তার নিজের ইচ্ছায় করছে তাতে তার কষ্ট হলেও, সে তার বন্ধুর মঙ্গলকামনা করেছে, সে তখন কোন বাজী জেতার কথা ভাবেনি। তখন সে যে কাজ করেছে সেটাই তার ভালবাসা, সে তার ভালবাসার কোন প্রমান চায় না, সে ভালোবেসে সুখী, তাকে সবাই পরাজিত বললেও সে সেসব কিছু দেখে না। তাই সেটিই প্রকৃত ভালবাসা। এইটি গল্পের দ্বিতীয় পর্ব।
তার অসুস্হ বন্ধুকে বাচাতে তাকে কেউ বলেনি, সে তার নিজের ইচ্ছায় করছে তাতে তার কষ্ট হলেও, সে তার বন্ধুর মঙ্গলকামনা করেছে, সে তখন কোন বাজী জেতার কথা ভাবেনি। তখন সে যে কাজ করেছে সেটাই তার ভালবাসা, সে তার ভালবাসার কোন প্রমান চায় না, সে ভালোবেসে সুখী, তাকে সবাই পরাজিত বললেও সে সেসব কিছু দেখে না। তাই সেটিই প্রকৃত ভালবাসা। এইটি গল্পের দ্বিতীয় পর্ব।
আমাদের ভেতর অনেকে সেই প্রথম পর্বের মত ভালবাসে, নিজে জেতার জন্য, নিজের মন সন্তুষ্ট করার জন্য সে তার জন্য কাজ করে, বরং তাকে ভালবাসার জন্য, তাকে কিছু দেবার জন্য নয়। ভালবাসা একটি অনুভব যা পরস্পরের প্রতি দায়িত্ববোধ, কৃতজ্ঞতাস্বীকার, অন্যের জন্য কাজ করা অন্যকে উপহার দেওয়া, ইত্যাদি কাজের মধ্যে দিয়ে তাকে বোঝা যায়। তবে ভালবাসা সেই কাজগুলি না, সেই উপহার না, ভালবাসা উপহার দেবার সময়ের অনুভুতি।
কাউকে আরও বেশি ভালবাসতে চাইলে হয়ত তাকে আরও বেশি উপহার দেবার দরকার হয় না, আরও বেশি সময় দিতে হয় না বরং কোন উপহার দেবার সময় মনে সেই অনুভুতি রাখতে হয়। যতটা সময়ই তার সাথে থাক তাকে পুরোপুরি সঙ্গ দিতে হয়।
সকলে চায় আমরা শুধু ভালো মানুষদের সাথে থাকতে চাই, ভাল লোকের সাথে ওঠা, বসা করতে চাই, তাদের সবাইকে ভালবাসতে চাই, তাদের থেকেও সেই ভালবাসা ফিরে পেতে চাই। এই টুকু প্রত্যাশা আমাদের সকলে করে থাকে। ভালবাসা কী? ভালবাসার পরে প্রশ্ন আসে আরও ভালবাসার। ভালবাসা শুধু কী উপহার? শুধু কী সম্পর্ক? শুধু কী দায়িত্ববোধ?
( ক ) ভালবাসা হল কাউকে নিঃশর্তে স্বীকৃতি দেওয়া
ভালবাসা কাউকে নিঃশর্তে গ্রহন করা বা স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষমতাকে প্রকাশ করে। আমরা যখন কাউকে ভালবাসি তাকে তার মত গ্রহন করতে পারি, যখন সে আমার অপছন্দের কিছু করছে তখন যদি তাকে গ্রহন না করি তাহলে শুধু তখন তাকে ভালবাসি না।
যেমন, মা তার সন্তানকে ভালবাসে, যদি সেই ছোট ছেলেটি স্লেটে লিখতে গিয়ে পেনসিল নিয়ে স্লেটে টিক টিক শব্দ করে, এই শব্দ যদি তার মার অপছন্দ হয়, সে তাকে শব্দ করতে বারন করে তাহলে সেই মা তার ছেলেকে তার মত গ্রহন করছে না, তাকে তার কাজের সাথে অস্বিকার করছে। তবে ছেলেটির সেই শব্দে কোন অসুবিধা নেই, তার সেই শব্দ ভালো লাগছে।
যেমন, মা তার সন্তানকে ভালবাসে, যদি সেই ছোট ছেলেটি স্লেটে লিখতে গিয়ে পেনসিল নিয়ে স্লেটে টিক টিক শব্দ করে, এই শব্দ যদি তার মার অপছন্দ হয়, সে তাকে শব্দ করতে বারন করে তাহলে সেই মা তার ছেলেকে তার মত গ্রহন করছে না, তাকে তার কাজের সাথে অস্বিকার করছে। তবে ছেলেটির সেই শব্দে কোন অসুবিধা নেই, তার সেই শব্দ ভালো লাগছে।
এই যেই সময়গুলি আমরা কাউকে পছন্দ করি না সেই সময় তাদেরকে অস্বিকার করি। তখন আমাদের মন থেকে তাদের প্রতি ভালবাসা যায় না, আমাদের দুজনের মনের মধ্যে এইটি অসচ্ছ দেবাল তৈরী হয়। আবার যখন তাকে গ্রহন করি দুজনের মনের মধ্যে সবকিছু দূর হয়ে ভালবাসার সহজে আদান প্রদান হতে থাকে।
আমার সামনে যে খেতে বসেছে সে আমার মত খাচ্ছে না, থালার চারিদিকে ভাত ছিটিয়ে পরছে, রাক্ষসের মত খাচ্ছে, আঙুল চেটে-পুটে খাচ্ছে, খাবার শেষে খাবার থালাতিকেও চাটতে বাকি রাখল না। এই সব কিছু দেখে আমার খুব অসস্হি, তখন আমি তাকে বললাম নিজেকে পাল্টাও, তাকে এই তাকে এই আদেশ তার জন্য করলাম না, করলাম নিজের মনের শান্তির জন্য, যদি সে চেঞ্জ হয় তাহলে আমি শান্তি পাব। তখন আমি তাকে তার মত গ্রহন করি না তাই আমি তাকে ভালবাসি না।
তাহলে ভালবাসার মানে কি সবাইকে তার মত ছেড়ে দেওয়া? সবাইকে ছন্ন ছাড়া জীবন কাটাতে দেওয়া? কাউর উপর নিজের আদেশ না অনুরোধ, বা ইচ্ছা না রাখা?
কাউকে আঙুল চেটে খেতে দেখলে যদি আমার ঘৃনা লাগে, তাহলে তাকে চেঞ্জ হতে না বলে যদি বলি ‘ তুমি আঙুল চেটে, থালা চেটে খেও না তাতে তোমাকে দেখতে খারাপ লাগে, তুমি এই ভাবে খাও যাতে তোমাকে দেখতে ভালো লাগবে’।
তার কাছে এই ইচ্ছা আমি নিজের জন্য করলাম না, তার জন্য করলাম।
তেমনি মা যদি তার ছেলেকে বলে ‘সোনা পেনসিল নিয়ে টিক টিক শব্দ করো না তাতে তোমার পেনসিল ভেঙে যাবে, ভালো ছেলেরা কখনো তাদের জিনিস নষ্ট করে না’। তার মার এই ইচ্ছাটা সে তার নিজের জন্য করেনি, তার সন্তানের জন্য করেছে।
আমরা যদি আমদের স্বভাবের কোন জিনিস বদলাবার প্রয়োজন বোধ না করি, আমরা কখনো আমাদের স্বভাব পাল্টাই না। তা অন্যের অসুবিধার কারন হলেও তা যদি আমাদের অসুবিধার কারন না হয় তাহলে নিজেকে চেঞ্জ করার কোন প্রয়োজন বোধই করি না। যখন আমাদে স্বভাব পাল্টে আমাদের কোন ভাল হয়, তখন তা করার কথা ভাবি।
তেমনি সে যদি মনে করে এই ভাবে খাওয়া দাওয়া করলে তাকে দেখতে ভালো লাগে না সে নিজেকে বদলাবার কথা ভাববে।
ছোট বাচ্চাদের ভালোছেলে হবার খুব সখ থাকে, সে যদি ভাবে টিক টিক শব্দ বন্দ করলে সে ভাল ছেলে হতে পারবে, তারপর সে আর টিক টিক শব্দ করতে চাইবে না।
তখন তাকে গ্রহন করা আমাদের কাছে কঠিন হয়ে দাড়ায় কারন আমরা তাদের কাজের সাথে তাকে মিশিয়ে ফেলি, তাকে তার কাজের থেকে তাকে আলাদা করে দেখতে পারি না। তখন তার স্বভাবের কোন কিছু চেঞ্জ করা যায় না। সে যে কাজ করছে আমি সেই কাজ পছন্দ করছি না, সেই কাজকে ভালবাসছি না, তবে আমি তো তাকে পছন্দ করি তাকে ভালবাসি।
তার কাজ ও তাকে মিশিয়ে ফেললে যদি তার কাজকে পছন্দ না করি, তাকেও পছন্দ করি না। তার কাজ ও তাকে যদি আলাদা করে দেখতে পারি তাহলে তার কাজকে পছন্দ না হলেও, তাকে পছন্দ হবে। কিভাবে সে তার স্বভাবকে দূর করবে তা নিয়ে পরে ভাবা যাবে, তার স্বভাব দূর করার জন্য প্রথমে তাকে গ্রহন করা উচিত।
তার কাজ ও তাকে মিশিয়ে ফেললে যদি তার কাজকে পছন্দ না করি, তাকেও পছন্দ করি না। তার কাজ ও তাকে যদি আলাদা করে দেখতে পারি তাহলে তার কাজকে পছন্দ না হলেও, তাকে পছন্দ হবে। কিভাবে সে তার স্বভাবকে দূর করবে তা নিয়ে পরে ভাবা যাবে, তার স্বভাব দূর করার জন্য প্রথমে তাকে গ্রহন করা উচিত।
আমরা ভাবি এসব কিছু সম্ভব না, কাউকে তার মত গ্রহন করতে আমরা পারি না। ভাবলে এটা অনেক কিছু, না ভাবলে কিছুই না। সকালে উঠে প্রার্থনাতে বসলে বাড়ির পাশের কোন রাস্তায় কোন হকারের শব্দে আমাদের শব্দে কোন অসুবিধা হয় না, তবে রান্না ঘরের কোন বাসন কোসনের আওয়াজে আমদের বিরক্তি হয়ে ওঠে। কারন আমার ঘরে কোন আওয়াজ হলে আমি বারন করতে পারব, তবে রাস্তার কোন আওয়াজ ঘরে আসলে আমি তাকে বারন করতে পারব না।
যাদের বাড়ি রেলওয়ে স্টেশন বা এয়ারপোর্টের খুব কাছে তাদের সবসময় রেলের ও প্লেনের আওয়াজ শুনতে হয়। তাতে তাদের কোন অসুবিধা হয় না। কারন তারা রেললাইনের কাছের বাড়িতে থেকে সেই বাড়ির সাথে সেই আওয়াজকেও গ্রহন করেছে।
অনেক বাড়িতে disabled child থাকে, তারা ভালোভাবে হাটতে পারে না , কথা বলতে পারে না, স্বাভাবিক মানুষদের মত নয়। তখ তাদের মা বাবার কাছে শুধু মাত্র দুটি পথ থাকে তাদের গ্রহন করা অথবা অস্বিকার করা। বাবা মা তাদেরকে গ্রহন করে তাদের সেই সব স্বভাবের সাথে। কারন তারা জানে তারা তাদের বদলাতে পারবে না, সে জন্ম থেকে ওরকম।
ঠিক তেমন যাদের স্বভাব আমদের পছন্দ হয় না, অথচ যে স্বভাব বদলানো যায় না, যদি সেই স্বভাব তার কোন ক্ষতি না করে, তখন আমদের কাছে দুটোই পথ থাকে, হয় তাকে গ্রহন করা নয় অস্বিকার করা।
সে আমার প্রিয়তম, আমার সন্তান বা খুব কাছের মানুষ হতে পারে তাকে এইভাবে অস্বিকার করা যায় না। তখন তাকে গ্রহন করে, যদি ভাবি তার জন্য আমার এই কষ্ট, তাহলে তাকে মন থেকে গ্রহন করেনি। তার সেই স্বভাবের সাথেই আমি আমার জীবনকে পছন্দ করেছি, তাই আমার মনে যদি সে রকম কোন অসস্হি না থাকে, তখন আমি তাকে ভালবাসছি। তাই মন থেকে তাকে স্বীকার কর, নতুবা নিজের ভাগ্য, নিজের কপাল ও ভাগবানের উপর সারাজীবন দোষারোপ করতে থাকবে।
ভালবাসা কোন সম্পর্ক না, সেই সম্পর্কের অনুভুতি, তাই তার কাজের সাথে কোন সম্পর্ক নেই, অনুভুতির সাথে সম্পর্ক। কাউর জন্য কোন কাজ করা নয় সেই কাজ করার সময় ভালো অনুভব করা।
কাউকে বেশি ভালবাসতে চাইলে তার জন্যে আরও বেশি কাজ না করে, কোন কাজ করার সময় আরও বেশি অনুভব করতে হয়। যেন সেই কাজের সাথে সেই মনের ভাব তার কাছে গিয়ে পৌচ্ছায়। কাউকে কোন উপহার ভালভাবে দিলে সে তার গ্রহন করে, তবে সেই উপহার তার প্রতি ছুড়ে দিলে সে সেই উপহারের দিকে ফিরেও তাকাবে না। সে তখন বলবে, ‘ আমি তোমাকে তবুও তুমি সুখী নও’ আর একজন বলবে ‘তুমি কিভাবে দিয়েছ দেখো’।
কাউকে বেশি ভালবাসতে চাইলে তার জন্যে আরও বেশি কাজ না করে, কোন কাজ করার সময় আরও বেশি অনুভব করতে হয়। যেন সেই কাজের সাথে সেই মনের ভাব তার কাছে গিয়ে পৌচ্ছায়। কাউকে কোন উপহার ভালভাবে দিলে সে তার গ্রহন করে, তবে সেই উপহার তার প্রতি ছুড়ে দিলে সে সেই উপহারের দিকে ফিরেও তাকাবে না। সে তখন বলবে, ‘ আমি তোমাকে তবুও তুমি সুখী নও’ আর একজন বলবে ‘তুমি কিভাবে দিয়েছ দেখো’।
ভালবাসা কোন কাজ নয়, ভালবাসা সেই কাজ করার অনুভব। তাই কাউকে ভালবাসতে সেই অনুভবকেই বাড়িয়ে তুলতে হয়, কাজের পরিমানকে নয়। যখন কাউকে কোন শর্ত ছাড়া গ্রহন করছি তখন তার প্রতি আমার ভালবাসা আছে, যখন গ্রহন করি না শুধু সেই সময় ভালবাসা থাকে না। বেশি ভালবাসা সেই সময়ও তাকে ভালবাসতে শেখায় ও ভালবাসায় ধারাবাহিকতা রাখতে বলে।
কখনো তাকে গ্রহন করি কখনো তার পছন্দকে অস্বিকার করি। কাউকে ভালোবাসলে তাকে অস্বিকার করার সময়ও তাকে গ্রহন করি। কাউকে আরও বেশি ভালবাসা যায় না, তবে যে সময় আমার থেকে তার প্রতি সেই মনভাব শেষ হয়ে যায়, সেই সময় দুজনের মনের ভেতরের সেই মনভাব দূর করতে পারি। তাহলেই কাউর প্রতি আমাদের ভালবাসার ধারাবাহিকতা থাকে।
কখনো ভালবাসা কখনো অভিমান জীবন এইটাকে মনে করি। এখানে ভালবাসা থাকলেও তাতে মাঝে মাঝে অভিমান এসে পড়ে, সেই ধারাবাহিকতা থাকে না। যদি অভিমানকে কম করে আনা যায় যদি সেখানে শুধু ভালোবাসাকে রাখা যায় তাহলেই তাতে ধারাবাহিকতা থাকে।
আরও বেশি ভালবাসা বলতে ভালবাসার পরিমানকে বোঝায় না, তার ধারাবাহিকতা বোঝায়। কিভাবে সেই অনুভব বেড়ে যাবে সেই কথা না ভেবে, কিভাবে সেই অনুভব বজায় থাকবে তার উপর গুরুত্ব দেই। ভালবাসতে সবসময় মনের মধ্যে সেই অনুভব বজায় রাখতে চেষ্টা করি, বিশেষ কোন সময় নিরপেক্ষ সেই অনুভব রাখি না।
ভালবাসা হল এক অনুভব যা সবসময় বজায় থাকে, সেই অনুভবের ধারাবাহিকতা থাকে, মাঝে মাঝে সেই অনুভব হারিয়ে যায় না, তার ধারাবাহিকতা বিগ্নিত হয় না। যদি ভালবাসায় শুধু সেই ধারাবাহিকতা রাখতে পারি, জীবনের অন্যসব খুটি নাটি বিষয়কে কমিয়ে তাহলে আমরা কাউকে আরও ভালোবাসছি। এই ধারাবাহিকতা থাকার নামই আরও ভালবাসা আরও প্রেম, আরও প্রীতি।
কাউকে আরও বেশি ভালবাসা যায় না কারন ভালবাসার কোন পরিমান হয় না। যদি কেউ বলে তার অনেক রাগ আছে, তার রাগ নেই তার মানে এটা বলতে পারব না সে বেশি ভালবাসে, সে বেশি ভালবাসে না। রাগের সম্পর্ক মানসিক উত্তেজনার সাথে, উত্তেজনা বাড়লে বলি তার রাগ বেড়ে গেছে, উত্তেজনা কমলে বলি তার রাগ কমে গেছে। তবে ভালবাসা উত্তেজনা নয় যা কমবে বাড়বে, ভালবাসা কাউক প্রতি তার ব্যবহার, কাউর প্রতি তার অনুভব, সেখানে উত্তেজনার জায়গা নেই।
‘আমি তোমাকে ভালবাসি’, ‘আমি তোমাকে ভালবাসি না’, যদি কথাটার সম্পর্ক উত্তেজনার সাথে হয় তাহলে তার একটিও ঠিক নয়। আমরা শুধু তার প্রতি যতটুকু অনুভব করি, তার ধারাবাহিকতা রাখি তবে তা আমাদের কাছে কখনো বেশি বা কম হয় না। তাই তারা কখনো একথা বলে না আমি বেশি ভালবাসি বা কম ভালবাসি। কারন তাদের অনুভব একটি নির্দিষ্ট তরঙ্গে চলে, কখনো কম বা বেশি হয় না।
যে বলে আমি বেশি ভালবাসি, সে কালকে কম ভালবাসবে, কিন্তু যে বলে আমি আমার ভালবাসার ধারাবাহিকতা রাখি। সে ভালবাসার বেশি বা কম বোঝে না। সে বোঝে কিভাবে সেই অনুভবকে প্রতিদিন একই রকম রাখা যায়। তাই কাউকে বেশি বা কম ভালবাসা যায় না।
যে বলে আমি বেশি ভালবাসি, সে কালকে কম ভালবাসবে, কিন্তু যে বলে আমি আমার ভালবাসার ধারাবাহিকতা রাখি। সে ভালবাসার বেশি বা কম বোঝে না। সে বোঝে কিভাবে সেই অনুভবকে প্রতিদিন একই রকম রাখা যায়। তাই কাউকে বেশি বা কম ভালবাসা যায় না।
তারা কখনো তার সঙ্গীকে বেশি বা কম ভালবাসতে পারবে না। তারা শুধু তার সঙ্গীর প্রতি সেই অনুভবের ধারাবাহিকতা রাখতে পারবে। যে বলে, ‘আমি তোমাকে ভালবাসি’ সে সবসময় সেই বেশি ভালবাসা বজায় রাখতে পারবে না কারন তার কাছে তা বেশি। যদি সেই অনুভবকে সে তার স্বাভাবিকতা না করে তোলে তবে তাতে তার ধারাবাহিকতা থাকবে না।
যা আমাদের স্বাভাবিকতা তার সাথে আমরা সবসময় থাকতে পারি। তবে যা আমরা নই, তার সাথে সবসময় থাকি না। যদি আমার খুব বেশি রাগ হয় তাহলে সবসময় আমি গরম মেজাজে থাকি না কারন বেশি রাগ আমার স্বাভাবিকতা নয়। বেশিরভাগ সময় আমি শান্ত থাকি তাই শান্তিই আমার স্বাভাবিকতা। তেমনি কেউ যদি বলে আমি বেশি ভালবাসি সব সময় তার বেশি ভালবাসা থাকে না কারন তা তার স্বাভাবিকতা নয়। যদি তা তার স্বাভাবিকতা হয় সে তাকে বেশি বা কম নাম দিত না।
জীবনে মানুষের জোয়ার ভাটা অনেক আসে, তবে নিজের মনের জোয়ার ভাটা শুধু আমরা নিয়ে আসি। ভালবাসা নদীর জলের মত প্রবাহিত হয়। একই রকম ভাবে তার গতিপথের ধারাবাহিকতা থাকে, কখনো তার গতিপথের পরিবর্তন হয় না, জোয়ারের সময় যে বেগে জল যায় ভাটার সময়ও সেই বেগে জল যায়। তেমনি জীবনের জোয়ার ভাটার সময়ও কারোর প্রতি একই রকম অনুভবের ধারাবাহিকতা সম্ভব।
কাউকে যদি বেশি ভালবাসতে চাও, শুধু এই অনুভবের লালন কর। তাকে তার স্বভাবের থেকে আলাদা করে দেখতে পারলে, তার স্বভাব ভালো না লাগলেও তাকে ভালো লাগবে। তখন তার প্রতি ভালবাসা থাকবে, যা সহজে শেষ হবে না ও যা শেষ হবার কোন কারনও থাকবে না।
তাদের দিন-রাত, সকাল, বিকেল একই রকম হবে। সে সব কিছু তাদের কাছে কোন বড় কিছু না, খুব স্বাভাবিক। তাদের মন সবসময় ভালো থাকে, তাদের জীবন স্বর্গে বাসা বাধে।কিন্তু সেই সুখের কিছুই তারা বোঝে না কারন তাদের কাছে তা স্বাভাবিক। এই ভাবে তারা নিজেদেরকে প্রতিদিন আরও বেশি ভালোবেসে যায় যা কখনো কম বা বেশি হয় না।
তাদের দিন-রাত, সকাল, বিকেল একই রকম হবে। সে সব কিছু তাদের কাছে কোন বড় কিছু না, খুব স্বাভাবিক। তাদের মন সবসময় ভালো থাকে, তাদের জীবন স্বর্গে বাসা বাধে।কিন্তু সেই সুখের কিছুই তারা বোঝে না কারন তাদের কাছে তা স্বাভাবিক। এই ভাবে তারা নিজেদেরকে প্রতিদিন আরও বেশি ভালোবেসে যায় যা কখনো কম বা বেশি হয় না।
Sir after reading this post. All my confusions have gone away. I am so benefited by visiting your site. Thanks sir share this information.He has really sweet responses to basically all of these- Thank you very much.
উত্তরমুছুনSad Dp
fonts copy and paste
অনলাইন ইনকাম