ভালবাসা চাইবার অঙ্গভঙ্গি হল ভালবাসা। কাউকে ভালোবেসেই আমরা তার কাছে ভালবাসা চাই, কাউকে ভালো না বেসে তার কাছ থেকে ভালবাসা চাইবার কোন উপায় আমাদের নেই। আমরা কাউকে ভালবাসি এই আসা নিয়ে যে সেও আমাকে ভালবাসবে। তবে সেই ভালোবাসাকে ফিরে পেতে বা তার কাছ থেকে ভালবাসা চাইতে প্রথমে আমরা ভালোবাসি। কারন তার কাছ থেকে ভালবাসা চাইবার উপায় হল তাকে ভালবাসা।
আমরা আমাদের সম্ভবনাকে কখনো বুঝি না বা বুঝতে চাই না। কোন কাজ সফল হবার সম্ভবনা আমাদের কাছে কতখনি তা আমরা কখনো ভেবে দেখি না। কাউর কাছ থেকে ভালবাসা ফিরে পাবার সম্ভবনা যদি আমরা না দেখি তখন সেখানে আর চেষ্টাও করি না। তাই আমরা সেই সম্ভবনাকে না দেখে ব্যর্থ হবার ভয় করি। আমাদের মধ্যে কি আছে, আমরা কতটা কাজ করতে পারি, আমাদের ক্ষমতা তখন শুধু আমাদের ভেতরেই অন্তর্নিহিত থেকে যায়। যেমন, একজন গায়ক প্রথম যে দিন গান গেয়েছিল সে দিন হয়ত তার গান শুনতে দুই জন লোক এসেছিল, সেই দুইজন লোককে দেখে যদি সে গান গাওয়া ছেড়ে দেয় তবে সে তার ভেতরে লুকিয়ে থাকা শিল্পীকেও মেরে ফেলে। শুধু তাই নয় একজন সুন্দর গায়কও এই পৃথিবী হারিয়ে ফেলে। সভায় মাত্র দুইজন লোক দেখে সে যদি তার গায়ক হবার সম্ভবনাকে না দেখে গান গাওয়া ছেড়ে দেয় তবে সে তার ভেতরে থাকা শক্তিকেও অপ্রকাশিত করে রাখে।
যদি কাউকে ভালোবেসে তার কাছ থেকে ভালবাসা ফিরে পাবার সম্ভবনা না দেখি তবে আমাদের কী কোন ক্ষতি হবে ? যদি কোন গায়ক গান করেও তার শ্রতাদের মনের পছন্দ হতে পারল না, তবে কী গান করে তার কোন ক্ষতি হয়েছে ? না, বরং সে গান করে আরও ভালো সঙ্গীতজ্ঞ হয়েছে, সে তার ক্ষমতাকে আরও বৃদ্ধি করেছে। তার গান যে পছন্দ করে তাকে শুধু তাদের সংস্পর্শে যেতে হবে। ঠিক তেমনি কাউকে ভালোবাসলেও আমাদের মনে ভালবাসার গুনটি বৃদ্ধি পাবে, ভালবাসার আরও ক্ষমতা জন্মাবে। যার মনে এত ভালবাসা থাকবে সে তো এমনই সুখী হবে, কাউর কাছে থেকে আর একটু ভালবাসা পাবার আসা তার থাকবে না। তখন তাকে শুধু তার ভালবাসার উপযুক্ত পাত্র খুজতে হবে। সেই সময় উপযুক্ত ব্যক্তির কাছে গিয়ে তুমি তাকে আরও বেশি ভালবাসতে পারবে, কারণ তুমি আগে থেকে আরও বেশি ভালবাসা নিয়ে এসেছ। তখন তোমার প্রিয়জন তোমার কাছ থেকে আরও বেশি ভালবাসা পাবে। সেটা আমাদের জন্য সুখের নয় যে আগের সম্ভবনা ব্যর্থ হবার ফলেই এই সম্ভবনাতে আরও বেশি ভালবাসতে পেরেছি।
আমরা আমাদের আসে পাশে যদি দেখি কাউর সম্পর্ক ভেঙ্গে গেছে তবে তাতে আমাদের কত খারাপ লাগে। তাহলে তাদের কত খারাপ লাগে যাদের জীবনে সত্যি এই ঘটনা ঘটেছে। আমরা মনে করি জীবনের লক্ষ সুখের সন্ধান করা, আমাদের যা আছে তাতে সুখ খোজা নয়। যদি তাই হয় তাহলে আমরা এটাও নিশ্চয় ভাবব জীবনের লক্ষ ভালোবাসাকে সন্ধান করা, ঠিক নিজের মত মানুষকে খুঁজে বেড়ান, যে পাশে আছে তার সাথে নিজের মনকে মিলিয়ে দেখা নয়।
আমাদের সকলেই খুব শিক্ষিত তবে আমরা কখনো একথা জানি না যে দুজন মানুষ কখনও একরকম হতে পারি না। তাদের ভেতর বৈষম্য থাকবেই এবং আমাদের জীবনের এই বিভিন্নতাই আমাদের জীবনের সবচেয়ে বর সৌন্দর্য। একজন মা বাবার সাথে তার সন্তানের অনেক মিল থাকে, কেউ বলে তার চোখদুটি তার মার মত, তার নাকটি বাবার মত তবে সেই সন্তানের তার মা বাবার সাথে কিছু বৈষম্য থাকে। ঠিক তেমনি আমরা যতই খুজী না কেন আমরা আমাদের মত মানুষকে কখনো নিজের জীবনসঙ্গী রূপে পাই না। তার সাথে আমার কিছু গুনের মিল হতে পারে কিন্তু আমাদের স্বভাবে আমাদের অভিব্যক্তি বজায় থাকবে। তাই ভালোবাসাকে না খুঁজে আমরা যদি নিজেদের বিভিন্নতাকে সম্মান করি তবে আমরা ভালোবাসাকে অনুভব করব। আমরা ভালোবাসাকে না খুঁজে তখন আমরা ভালোবাসাকে ভোগ করি। যদি আমরা বুঝি জীবনে ভালবাসা সন্ধান করা নয় বরং তাকে অনুভব করা তাহলে এটাও বুঝব জীবনে সুখের সন্ধান নয় বরং সুখে থাকা।
এই পৃথিবীতে যা কিছু সুন্দর তা অনেক সময় ধরে সৃষ্টি হয়েছে। এই পৃথিবীতে সে তার জায়গা তৈরী করতে সে খুব কষ্ট করেছে। এখানে কেউ খুব সহজে তার জায়গা খুঁজে পায়নি। একটি হীরা কয়লার খনিতে কত বছর চাপা পরে থেকেই সে হীরা হয়। একজন মানুষ কত কষ্ট সয়ে নিয়েই সে সমাজে তার প্রতিষ্টা পায়। একজন বিখ্যাত মানুষকে দেখে মনে করি তার কত গুন, কত ভাগ্য তবে তার পেছনে লুকিয়ে থাকা পরিশ্রম ও অধ্যাবসায় আমরা দেখি না। তেমনি আমরা যখন একটি ভালো ও সুন্দর সম্পর্কের উদাহরন দেখি আমরা ভাবি তারা কত সুখী, কত ভাগ্যবান তবে তাদের সেই সম্পর্কের পেছনে লুকিয়ে থাকা তাদের ত্যাগ ও সংকল্পনাকে কখনো দেখি না। তাদের সম্পর্কেও অনেক জোয়ার ভাটা এসেছে, তাদেরকেও তাদের নিজেদের বিভিন্নতার সাথে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। তাই তারা আজকে তাদের সম্পর্ক সুন্দর করতে পেরেছে।
কয়দিন আগে নেপালে ভূমিকম্প হল, ভূমিকম্প কেন হয় ? শিলাস্তর যদি কোন জায়গায় সুবিন্যস্ত না থাকে তবে সেই প্লেট দুটি পরস্পরের সঙ্গে সংর্ষের মধ্যে দিয়ে নিজেদের সুবিন্যস্ত করার চেষ্টা করে। আর এই সংঘর্ষ ততদিন চলতে থাকবে যতদিন তারা সুবিন্যস্ত হচ্ছে। নবীন ভঙ্গিল পর্বতের শিলাস্তর এখনো সুবিন্যস্ত হয়নি তাই এইসব এলাকায় প্রায়ই ভূমিকম্প হয়। যখন সেই শিলাস্তর গুলি মিলিত হয়ে সুবিন্যস্ত হবে তখন তাদের মধ্যে আর সংঘর্ষ হবে না। অনেক সময় পরে তারা সুবিন্যস্ত হয়। তেমনি একজন মানুষের সাথে আর একজনের সংঘর্ষ ততদিন চলতে থাকে যতদিন তাদের পরস্পরের মিল না হয়। তাদের মিল হয়ে গেলে একজনের গুন, দোষ আর একজনের সাথে মাইল মিশে যদি তারা তাদের জীবনের সাথে মিশে যায় তখন তাদের সংঘর্ষ বন্দ হয়ে যায়। তবে তার জন্য তাদের পরস্পরকে সময় দিতে হয়।
এই পৃথিবীও নিজেকে সুন্দর করতে অনেক বছর অপেক্ষা করেছে, তার প্রকৃতি এখনও সুন্দর হতে নিজেকে সময় দিচ্ছে, তবে মনুষ কেন তার সম্পর্ক সুন্দর করতে সময় দেবে না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন