মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৪

শীতের কবিতা: শীতের সকাল

বাংলায় মোট ছটি ঋতূ গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরত, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত। তবে আমরা এখন বছরের প্রতিটি ঋতূকে অনুভব করতে পারি না।  শীতের সময় ভাবি আমার কাছে গ্রীষ্মই ভালো, গ্রীষ্মের সময় ভাবি আমার কাছে শীত ভালো। আমরা অতীত ও আজানা ভবিষ্যতকে ভালোবাসি, বর্তমানে আমরা সুখী হতে পারি না। তাই আমাদের জীবনে সেই সময়টুকুর গুরুত্ব ও সৌন্দর্য থেকে আমরা বঞ্চিত হই।  শীত আমাদের পরিবেশকে যা দান করে, তা আর কোন ঋতূ করে না।  গ্রীষ্ম আমাদের পরিবেশকে যা দান করে তা শীত দিতে পারে না।  তারা প্রত্যেকে নিজের বৈশিষ্টে ও বৈচিত্রে সুন্দর। অন্য কাউর সাথে তার তুলনায় সে নিজের শোভা দান করেও পৃথিবীর মানুষে তাকে গ্রহন করে না, পৃথিবীর কাছে সহনীয় কোন ঋতূই হয়েই থাকে। তাকে পৃথিবীকে ততদিন সইতে হবে যতদিন সে থাকবে। নিজের চোখের ময়লা দূর করে মনের জড়তা দূর করে আমরা যদি নতুনভাবে তাকে দেখি তবে শীতকে ভালোলাগবে, গ্রীষ্মকে ভালবাসবে, সব ঋতূর শোভাকে তুমি অনুভব করবে। প্রকৃতির কোলে তাদের প্রত্যেকের পরমদানকে তুমি খুঁজে পাবে।

তুমি আস দুটি মাসের পায়ে করে 
            পৌষ, মাঘ যারে বলে 
       সকালের সোহাগে কুয়াসার চাদর মুড়ে 
      সূর্যকে নিয়ে এনে 

                                                  পাখিদের কলতানে তোমায় ভরাও, 
                                                  কবির খাতায় তুমিই গান লেখাও, 
                                             শীতের ছবির অমৃত দান দাও, 
                                                               তুমি সবার অপমান লও।  

                                                     ঘরের দোয়ারে শুধু তোমায় ভত্সনা 
                                                           শীত আর কেও সে না 


তুমি আস বৃত্তির ও বৃদ্ধির বার্তা নিয়ে 
 প্রকৃতির কোলে। 
মাঠে, ঘটে কৃষকের হাতে ভরে          
       ধরনীর ফসল দিয়ে। 

                                              কত ফুল, ফল, ফসল তুমি ফলাও 
                                                   পৌষ পার্বনে পিঠে পুলি তুমিই গড়াও 
                                                   নলীন গুড়ে খেজুর রসের স্বাদ পাঠাও 
                                                               তুমি পৃথিবীর স্তন্য ভরাও। 

                                            প্রকৃতির বুকে শুধু তোমার সাধনা 
                                                               মানুষ তবে তোমায় চিনল না।  



যার সাথে এই প্রকৃতির সম্পর্ক জুড়ে থাকে, সে সেই প্রকৃতির সুখকে অনুভব করে। যদি কাউর সাথে সেই সম্পর্ক না থাকে তবে তাকে নিয়ে লেখা কোন কিছু সে পড়তে পারবে তবে তাকে অনুভব করতে পারবে না।  জীবনের কোন এক সময় আমরা যার সাথে থাকি তার সাথে আমাদের জীবনের সেই স্মৃতিটুকু জরিয়ে যায়।  তারপর আমরা সেই স্মৃতিটুকু মনে করে, তার সাথে আবার বেচে থাকি। আমার শীতের সকাল আমাকে আমার ছোটবেলাতে নিয়ে যায়, শীতের সকাল মানে আমি আমাকে সেই ছোটবেলাতে দেখতে পারি। শীতের সঙ্গে আমার সেই ছোটবেলার স্মৃতি জড়িয়ে আছে , যাকে আমি কখনো ভুলতে পারব না। তবে এখন বড় হয়ে শহরে সেই শীতকে দেখতে পারি না, ভিজে, ভিজে ঘাসে ঢাকা মাঠকে দেখতে পারি না, কচু পাতার ওপর সেই জলের মুক্ত দেখতে পারি না, খেজুর গাছে খেজুর রসের ভার ঝোলান থাকা গাছ দেখতে পাই না, তার স্মৃতি শুধু আমার ছোটবেলার সাথে জড়ান আছে। এখন শীতের কবিতা আমাকে সেই দিনগুলিতে নিয়ে যায়, তাই সেই কবিতা আমি অন্তর দিয়ে অনুভব করি। 
মানুষ যদি তার জড়তা দূর করে পৃথিবীকে ভালবাসতে প্রকৃতির কাছে আসে, তার সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে তবে তার এই প্রকৃতিকে নিয়ে লেখা কবিতা ভালো লাগতে শুরু করবে। যাদের সাথে এই প্রকৃতির সম্পর্ক আছে বা কখনো ছিল সেই কবিতা তাদেরকে সেই স্মৃতি অনুভব করতে সাহায্য করে। 

মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৪

শীতের কবিতা : শীতের পরিবেশ

শীত, শীত, কত শীত পরেছে;
নিশ্চুপ, নিঝুম, সকলেই ঘরেতে।
রাস্তা ঘাট, চুপ চাপ, ভিজে আছে কুয়াসে;
পথ হাট,বাজার ঘাট, শুন্য তোমার কাধেতে।
ছোট খোকা, ছোট খুকী, দুষ্টুমি ভুলেছে;
বধূয়া, কন্যারা, শীতের রান্না রোচেছে।


চাই চাই, নিরুপায়, তারা দুজনে;
কোথা পাই, যদি ঠাই, শীতের পোশাকে।
ভালবাসা, কাছে আসা, আছে কোন বাসরে;
বধূয়া, অপ্সরা, আজ শীতের আদরে।
আজ কেন, চাদে চাদে,মন কেন নাহি বসে; 

ঘরে তার, পালাবার, অঙ্ক সে কষে।
চুপ চাপ, জন সমাজ, শীতের প্রতাপে;
ঘরের কাজ, বধুর সাজ, শীতঘুমে লুকিয়ে।
ফুল কলি, দিয়ে ভরি, কত ঘর সাজে রে;
নব বধূ, নিয়ে মধু, আসে শীত ঋতুতে।
কত শীত, তবু গীত, সে খুব শুনেছে;
ঝি ঝি পোকা, দিয়ে সারা, শোরগোল ধরেছে।
অবলা, দূর্বলা, কাপে শীতের কাতরে;
যদি দেয়, আশ্রয়, কেউ আপন বসনে।
ত্‍পাত, পরমাদ, আর কেহ সহে না।
ঘরের দুয়ারে, শীত পায় ভত্‍সনা 

ভালবাসার কবিতা : আমরা ভালবাসতে জানি ?

কাউকে কিভাবে ভালোবসতে হয়, কিভাবে করুনা করতে হয়, কিভাবে আশির্বাদ দিতে হয় সে কথা তো আমরা জানিই না। যে মানুষ ডুবে যাচ্ছে তার কাছে তার কাপড়ের কোন মান আছে ? পৃথিবীতে এসে কৃত্রিম সুখ সংগ্রহ করে তাতে ডুবে গেলে তার দেহটিকে বাঁচিয়ে তাকে বাচানো যায় না।  আমরা আমাদের আত্ম পরিচয় পেয়ে যখন আত্ম গর্ভে বড় হব এবং জাগতিক সুখ, শোক, আর চোখের জলের কালিমালিপ্ত দেহকে না বাঁচিয়ে তখন আমরা নিজেদের বাচাতে পারব। যখন কৃত্রিমকে না ভালোবেসে প্রকৃতকে ভালবাসব, যখন মূর্তিকে না  ভালোবেসে অমূর্ত প্রতিমাকে ভালবাসব, যখন রূপকে না ভালোবেসে সৌন্দর্যকে ভালবাসব, যখন দেহকে  না ভালোবেসে আত্ম পরিচয়কে ভালবাসব, তখনই আমাদের মধ্যে পরিব্যাপ্ত সেই সত্যকে ভালবাসতে পারব, করুনা করতে পারব, আশির্বাদ করতে পারব।

সুখ, শোক, চোখের জল,
প্রকৃত সত্যের অজ্ঞানতার অন্ধকার।
প্রকৃত আত্ম উপলব্ধি
শাশ্বত সত্যের মধুকর।


ও অজ্ঞানতার দান
প্রেম হয়নি কখনো পতিত পাবন।
ভালবাসার করুন কর
হয়নি কখনো প্রদর্শন।


ভালবাসতে জানিই না
প্রকৃত ভালবাসার সার।
প্রকৃত ভালবাসতে
মুছে যায় শোকের চোখের জল।

যদি কেউ ডুবে যায়
তার কাছে তার কাপড়ের কী মান !
কাপড়ের সম্মান দিয়ে
পায় না সে তার আপন সম্মান।

মানুষের কী তা শোভা পায়
মানুষ যেন আত্ম গর্ভে বড় হয়।
যে তা বোঝে না
তার শোখ নিরঅর্থের পরিচয়।







রবিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৪

প্রকৃতির কবিতা : ওগো চাদের মেয়ে!

বিবাহে পিতা তার পুত্রীর কন্যাদান করেন তবে পৃথিবীর কাছে কে সকালের দান করেন ? সে আকাশের চাদ; ঘুম পারানির গানে যার পরমাদ, প্রভাতের আলোয় যে মিশে যায়, পৃথিবীকে সাজিয়ে যেন তার কন্যাকে রেখে যায়। কচু পাতায় মুক্তমনি, ঘাসে, ঘাসে জল দেবীকার পুঁথি, আকাশের ললাটে আকা চাদের ছবি, বাতাসে ছড়ানো তার ঘুঙুর গুলি বলছে যেন এ ঐ চাদের কন্যার আগমনী।


            ওগো চাদের মেয়ে !
শান্ত পৃথিবী নয়ন মেলে তোমা পানে চেয়ে আছে।
         চপল চরনে এস ধরনীতে,
         চাইছে পৃথিবী তোমার দেখা পেতে;
সকলে চোখ মুছে তোমায় দেখতে চায়, 
বাপের হাত ধরে পৃথিবী জগাতে এস আমার গায়।

          ওগো চাদের মেয়ে !
দিগন্তের ঘোমটা তুলে এসো চোখের পড়ে।
        তারার আকাশ বিদায় দিয়ে, 
        তোমার আকাশ আন পাখির গানে;
পলক চেপে ঘুমঘোরে আছে সব্বাই, 
ফুলের কুড়ি পাপড়ি হতে তোমার অপেক্ষায়।

         ওগো চাদের মেয়ে !
তোমার পিতার হাত থেকে পাব তোমায় কন্যাদানে।
        তোমার সাথে শুভদৃষ্টি বেধে,
        আমার সৃজনরহস্য ফুটবে পুষ্পটিয়ে;
উষার আমেজী বরমাল্য দিয়ে বরন কর আমাকে,
পুষ্পের ভান্ডারে সাজবে ভরে আমাদের সংসারে।

         ওগো চাদের মেয়ে !
পিতার আয়ু ফুরিয়ে এলে আস পিতার আলো হয়ে।
       পিতাকে কপাল কোলে রেখে, 
       তার সাথে আস এই বন্ধনে;
পিতার ছায়া একে রাখ তোমার ললাটে, 
হাজার ফুলের গন্ধ পেয়েও তুমি নও আপন অহংকারে।

         ওগো চাদের মেয়ে !
চাদ দিয়েছে তোমায় আমার হাতে তুলে,
        তোমার পিতার কন্যাদানে, 
        ভরতে এ ধরাতল সৃজন শৃঙ্গারে;
চাদমামা নামে তোমার পিতা পূজিত হন, 
 তোমার কাছে এসে পিতা কন্যায় মিলে যান।

        ওগো চাদের মেয়ে !
পৃথিবী ভরে তুলতে বিশেষ অলংকারে;
       তুমি আস তার গায়ে পড়ে,
       ফুলে, ফুলে, ঘাসে, ঘাসে, ভূষন জড়িয়ে;
তোমার পিতা তোমায় দিয়ে আপন ভুলতে চান 
সৃজন রহস্যে পিতার এই পরম কন্যা দান।

__ নিত্য কিশোর চন্দ্র

শনিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৪

সুপ্রভাত কবিতা : তোমাকে দেখব বলে, এসেছি,


তোমাকেদেখব বলে, এসেছি,

তোমারকাছে,

ঘুমেরআচল ছেড়ে,
তোমারসাজবেলাতে,
রাতেরমায়া ভুলে, উঠেছি

তোমারদিবাকরে, নমামী,
ভিজে ঘাসে পড়িয়ে জলদেবীকারপুঁথি,
কচু পাতায় রেখে মুক্তামনি,
নববধূসাজের এই প্রতিমাটি,
পূর্ণপ্রাণপুঞ্জে নমন করি


তোমারকাছে এসে, ছুয়েছি,
তোমারগায়ে,
তোমারসাজের পুঁথিগুলি চুমে,
তোমারআলোয় ভরে,
দুই নয়ন ধুয়ে, উঠেছি

তোমারকাছে এসে, বুঝেছি,
সকাল সোহাগে তুমিই উর্বশী,
এনেছ চোখের পাতায় আমারউষশী,
তোমায়দান করে বিদায় নিলচাদেরহাসি,
প্রমেরবরনডালা আনি করি তোমায়আরতি

দেখব বলে তোমার সবুজ, তরুগুলি,
স্বপ্নলোকেআড়ি দিয়ে,
নিদ্রাদেবীরআচল ছেড়ে,
বিছানারমায়া ভুলে,
এক পূর্ণ বিরতী নিয়ে, ফুটছে ইচ্ছেকুড়ি

আজ তো শুধু তোমাকে, দেখেছি,
আমার মনে শুধু তোমারঅঞ্জলি,
এনে খাতার পাতায় সাজিয়েঅক্ষরগুলি,
আমি তোমায় বন্ধনা করিওগো উর্বশী,
তোমারজন্যে নয়নে কত প্রেমলিখেছি


দেশের কবিতা: ভারত মাতৃভূমি

ভারতের সম্পর্কে শুনেছি তার ঐশ্বর্যে তার মাথায় চুরামনি তবে যদি তার বৈচিত্রকে দেখি তার প্রকৃতই তার মাথার মুকুট আর মনি, তার ললাট ভুষিত, যেন  সে সম্পুর্ন জ্যাতির্মন্ডলী, যেন সত্যিই তার অলংকার তার গর্ভে গড়ে ওঠা সভ্যতা সংস্কৃতি



যখন কল্পজগতে তোমাকে দেখি
দেখি তোমার মাথায় যেন একটি চুরামনি
ভারত মাতৃভূমি

হিমালয় পবর্ত তোমার প্রহরী
চিরতুষারে ঢাকা হিম রোদের আলো
আমার কল্পজগতে তুমি তার মুক্তামনি
ভারত মাতৃভূমি

তোমার তিনদিকেই জলভূমি
মনের বাগিচে তারা তোমার চরন ধুতে দেখি
ভারত মাতৃভূমি


দেখি তোমার মাথায় চুরামনি,
জলে তোমার কোমল চরনদুটি
হেআমার ভারত মাতৃভূমি

তোমার রূপে কত রং, তুমি কত নির্মল
তোমার সিথি থেকে তোমার চরন
কতলোক, কত সংস্কৃতি
কাশ্মির হতে কন্যাকুমারী
হেআমার ভারত মাতৃভূমি

সংস্কৃতি তোমারি শৃঙ্গার
যেন তোমার অঙ্গে এই সভ্যতা অলংকার
ভারত মাতৃভূমি নমস্কার


শুধু না লোকসংস্কৃতি, শুধু না বিচিত্রবিহারী
তুমি আছ কোথাও সুউচ্চ পর্বত হয়ে,
কথাও মালভূমি, কোথাও বা সমভূমি

তুমি অনেক সংস্কৃতির মিলন মিশ্রন
তাই তুমি পেয়েছ উপমহাদেশের নাম
এইমাটিও কত বৈচিত্রময়
কোথাও পলল, রেগুর, কোথাও লোহিত তার নাম

এইমাটিতে জন্ম দিয়ে আমায় লালন করা
বিশ্বরানীর কোলে এসে এই জগত্দেখা
তব বৈচিত্র, তব ভুষন ভারতমাতা


ভারতের উত্তরে অবস্হিত হিমালয় পর্বতমালা প্রহরীর মত ভারতকে বহির শত্রুর হাত থেকে তাকে রক্ষা করছে উত্তরে হিমশীতল বাতাসকে ভারতে প্রবেশ করতে বাধা দিচ্ছে তার একটি চিত্র হাতে নিয়ে যেন মনে হয়েছে যেন সেই হিমশীতল পর্বতমালার চাদরে সোনালী রোদের আলো পরে যেন সে ঠিক তার মাথার অপর একটি মুকুট পরে আছে  তার তিনদিকে রয়েছে সুমুদ্র যেন তাকে দেখে মনে হয়েছে তার মাথায় চূড়ামনি এবং জলে তার কোমল চরনদুটি যেন সুমুদ্র দেবতা তার কোমল চরন ধুয়ে দিচ্ছে তার বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন সংস্কৃতি, পোশাক ভিন্ন,ভাষা ভিন্ন যেন তাদের আপন সংস্কৃতে এই মাতৃভূমি ভূষিত যেন তাদের সংস্কৃতি মাতৃভূমির অলংকার হয়ে আছে শুধু লোক সংস্কৃতি বৈচিত্র নয়, ভারত মাতৃভূমির কোথাও সুউচ্চ পর্বত, কোথাও মালভূমি আবার কোথাও সমভূমি যেন সে সবকিছুতে সংস্কৃতির বৈচিত্রে, তার বৈশিষ্টে, তার মাথায় এখনও সেই চূড়ামনি, অঙ্গের অলংকার তার গর্ভে গড়ে ওঠা এই সংস্কৃতি, তার চরনে আলতা পরানো জলভূমি এই সংস্কৃতি দিয়ে আজও মোরা সাজিয়েছি তাকে রানী


শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৪

বিশ্বাস

       বিশ্বাস মানুষকে, মানুষের জীবনকে কত শান্তি দেয়, পিতা যখন তার সন্তানকে কোলে নিয়ে তাকে উপরে তুলে তার  সাথে খেলা করে তখন সে হাসতে থাকে, সেটা হল সেই সন্তানের তার পিতার প্রতি বিশ্বাস, তার পিতা কখনো তাকে ফেলে দেবে না।
       যখন  চুম্বন করে সে চোখ বন্ধ করে নেয়, এ হল প্রিয়জনের প্রতি তার বিশ্বাস, তার প্রিয় কখনো তার বিশ্বাস ভেঙ্গে দেবে না। যখন পিতা তার কন্যাকে আর একজনের সাথে বিবাহ দিয়ে তাকে বিদায় করে তখন তার চোখে জল আসলেও মনে শান্তি থাকে যে সে তার কন্যার বিবাহ দিয়েছে, সে তার নতুন জীবনে সুখে থাকবে, এটি তার বিশ্বাস। সন্তান যখন স্কুল হতে বাড়ি ফিরে আসে তখন সে জানে বাড়ি গিয়ে তার মার হাতের রান্না খেতে পারবে, এটা হল তার মার প্রতি তার বিশ্বাস। যখন সে প্রথম বার স্কুলে যায় সে ভয় পেলেও তার বাবা মার কথায় সে বিশ্বাস করে তার ভয় দূর করে। কোন নবজাত শাবক বিশ্বাস করে সে তার মার ভালবাসা পাবে, তাই সে তার গর্ভে কত মাস তপস্যা করে, এটি সেই শাবকের তার মার প্রতি বিশ্বাস। প্রতিটি ফুল বিশ্বাস করে কেউ তার কাছে এসে তার পরাগসংযোগ করবে, তাই সে প্রতিদিনই ফুটে ওঠে, এটি সেই ফুলের বিশ্বাস।

এই পৃথিবীতে প্রত্যেকে কাউর উপর বিশ্বাস করেছে এবং তার সেই বিশ্বাসই তার জীবনদেবতা হয়ে তাকে তার জীবনে শান্তি দিয়েছে। সেই বিশ্বাস কোন মানুষ করুক, কোন প্রাণী করুক, আর প্রকৃতিই করুক। এই বিশ্বাসই আমাদের সজ্বল কিশলয়ের মনকে উজ্বল করে, খর্ব হতে দেয় না।  তবে এখন মানুষ সহজে বিশ্বাস করতে পারে না, নিজের মনকে বিশ্বাসের শান্তি দিতে পারে না বা তার মন বিশ্বাস করার শান্তি পায় না। আমরা আমাদের মনকে বিশ্বাসের সুখ থেকে বঞ্চিত করে রেখেছি তাকে অবিশ্বাস ও সন্দেহ করতে শিখিয়েছি। প্রথমে বিশ্বাস করে সন্দেহকে দূর না করে প্রথমে সন্দেহ করে, যাচাই করে, নিরীক্ষন করে বিশ্বাস করতে শিখেছি। যার ফলে আমরা নিজের মনকে তার স্বাভাবিকতা থেকে, তার সহজ গুন থেকে তাকে অপ্রকৃতিক এবং কৃত্তিম একটি মনে পরিনত করেছি। মানুষ এখন নিরীক্ষন করে তাকে বিশ্বাস করার আগে। বিশ্বাস পেতে হলে সে মানুষকে এক পরীক্ষা দিতে হয়।

কখনো দুজন মানুষের মধ্যে এক সম্পর্ক গড়ে উঠল বিশ্বাস ছাড়া। তারা ভাবল প্রথমে একসাথে থেকে পরস্পরকে নিরীক্ষন করে তারপর বিশ্বাস করবে। তাই সম্পর্ক গড়ে ওঠার পরও, বিবাহ হয়ে যাবার পরেও যে সময়টুকু তাদের  একে অপরের সঙ্গে কাটানো উচিত, সেই সময়টুকু তারা শুধু একে অপরকে চিনতে ও বুঝতে কাটিয়ে দিয়েছে। আর ঠিক একভাবেই তারা তাদের জীবনের এই অমূল্য সময়কে হারিয়ে ফেলছে। সম্পর্কবন্ধনে একজনের কাছে এসে তাকে চিনে তার উপর বিশ্বাস করার চেয়ে প্রথম তাকে বিশ্বাস করে তাকে চিনবার বা বুঝবার চেষ্টা করাই ভালো।

বিশ্বাসের পরীক্ষায় কেউ সফল হতে পারবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। বিশ্বাসের প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে যা হবে তার কাছে তার উত্তর আলাদা হবে।  অবশেষে দুজনেই বিশ্বাসেই সুখ তাদের জীবন থেকে হারিয়ে ফেলবে। আজ আমি একজনকে বিশ্বাস করলাম কাল সে সম্পুন্ন অন্য মানুষ রূপে আমার কাছে আসল তখন কী তার জন্য আমি আমার এই বিশ্বাসকে দোষ দেব ? সে দোষ বিশ্বাসের দোষ নয়। আমি তার উপর বিশ্বাস করেছি আমার সুখের জন্যে কারন আমি আমার মনকে দুঃখ দিতে চাই না, তাকে বিশ্বাসের শান্তি থেকে বঞ্চিত করতে চাই না, তাই আমি বিশ্বাস করেছি। তবে সে বিশ্বাসের উপর সফল হয়নি। যদি সে সফল নাও হয়ে থাকে তবে দুঃখ হবে না কারন আমি তার অপর বিশ্বাস করেছি, সে আমাকে বিশ্বাস করতে বলেনি, তাকে বিশ্বাস করার সিদ্ধান্ত আমার।  সে যদি বিশ্বাসে না করতে পারে তবে আমি এখন তাকে আর বিশ্বাস করতে শেখাব। একজন মানুষ যদি বিশ্বাস না রাখার মনভাব নিয়েও আমার কাছে আসে যদি আমি তার অপর বিশ্বাস করি, সে বদলে যাবে। আলোর কাছে অন্ধকারের কোন শক্তি নেই অন্ধকার কখনো আলোকে দূর করতে পারে না, তবে সেখানে একটু মাত্র অগ্নি শিখা সারা ঘরের অন্ধকারকে দূর করতে পারে। হাজার অবিশ্বাসের অন্ধকারকে শুধু মাত্র বিশ্বাসের আলো দিয়ে দূর করা যায়।

কোন ব্যক্তি যদি সম্পর্কে এসে শুধু সন্দেহ ও অবিশ্বাস করে তবে আর একজন যদি তাকে বিশ্বাস করে, তাকে ভালবাসে তবে সেই ব্যক্তির অবিশ্বাস ও তার ভালবাসার কাছে কে জিতবে ? সন্দেহ ও অবিশ্বাস করে সে সন্দেহ ও অবিশ্বাসকে অনুভব করবে তবে তার সঙ্গী  শুধু তার বিশ্বাস ও ভালোবাসাকে অনুভব করবে। যা সে ব্যক্তি কখনো অনুভব করতে পারেনি। তার সঙ্গী তাকে ভালোবেসে যে সুখ পেয়েছে, বিশ্বাস করে যে শান্তি পেয়েছে তা সেই ব্যক্তিকেও বিশ্বাস করতে ও ভালবাসতে শেখাবে। সেই ব্যক্তির মুখে সন্দেহ ও অবিশ্বাসের ছবি ফুটে উঠবে তবে তার সঙ্গী তাকে বিশ্বাস করে, ভালোবেসে আরও সুন্দর হবে। বিশ্বাসের কাছে সেই ব্যক্তির সন্দেহ হার মানবে। তার প্রতি তার সঙ্গীর বিশ্বাস তাকে বদলে দেবে। সে তখন বিশ্বাস করতে শিখবে। বিশ্বাস যখন করা হয় তখন অবিশ্বাস হেরে যায়। অবিশ্বাস করে না আমার ভালো হয় না তার, হয় শুধু দুজনার মনের ক্ষয়।

তুমি পড়াশুনা শিখেছ,
তুমি নিজের পরিচয় পেয়েছ,
তবে বিশ্বাস করেছ ?
কারোর চোখে তোমার ক্ষতি দেখেছ,
সম্পর্কে শুধু তোমার স্বার্থ খুজেছ,
তবে সুখের স্বার্থে বিশ্বাস করেছ ?
কখনো বিশ্বাস করে দেখ,
জীবনে সময় অনেক চলে গেল,
একবার বিশ্বাস কর !
জানো না কখন সে সময় শেষ হয়ে যাবে।

যদি জীবনে কখনো অচেনাকে বিশ্বাস না করতে শেখ, মৃত্যুর কানাতে দাড়িয়ে যখন জীবনকে  দেখবে তখন দেখতে পাবে না জীবনে কত আয় করেছি, জীবনে কত প্রতিশোধ নিয়েছি, জীবনে কত লাভ করেছি। দেখতে পারবে জীবনে কত বিশ্বাস করেছি, জীবনে কত ভালোবেসেছি, নিজের বিশ্বাস দিয়ে অবিশ্বাসকে কী জয় করেছি ? বিশ্বাস দিয়ে অবিশ্বাসের অন্ধকারকে  আলোকিত করেছি ?

যেমনভাবে বিবাহ শুধু তোমার জীবনে তোমার প্রয়োজনকে সাথে নিয়ে আসে না, তোমার প্রিয়জনের মাধুর্য, তার সৌন্দর্য তোমার জীবনে তার প্রাধান্য, তোমার প্রয়োজনগুলি মিটিয়ে আসে। ঠিক সেরকম বিশ্বাস শুধু বিশ্বাসকে নিয়ে আসে না, বিশ্বাস শান্তিকে নিয়ে আসে, বিশ্বাস ভালোবাসাকে নিয়ে আসে, বিশ্বাস সময়কে সফল করে, বিশ্বাস মানুষকে সুন্দর করে। মানুষ তো এখন বিশ্বাস করতেই পারে না বিশ্বাস অর্জন করার পরীক্ষায়, নিরীক্ষায় সে তার জীবনের অর্ধেক সময়ই কাটিয়ে দিয়েছি আর যদিও সে এটুকু বিশ্বাস করতে পারল তবে সে বিশ্বাসকে হারিয়ে ফেলে সমাজ ও মানুষের প্রভাবে। যদিও দুজন মানুষ বিশ্বাস করতে পেরেছিল তবে সামান্য কিছুর জন্য সে বিশ্বাস কিভাবে ভেঙ্গে যাবে, যেখানে বিশ্বাস করাই তার কাছে সহজ হয়ে ওঠে না, যেখানে বিশ্বাস তার মনের গুনই হয়ে উঠতে পারে না, সেখানে বিশ্বাস ভেঙ্গে যাওয়া খুব সহজ। যেমন রঙ কাপড়ের আসল পরিচয় নয় তাই সূর্যের আলোর সামনে তা বর্নহীন হয়, তেমনি বিশ্বাস যখন আমাদের মনের সহজ গুন হয়ে উঠতে পারে না, সে বিশ্বাস মানুষ, সমাজ পরিস্হিতি, ও সামান্য শক্তির প্রভাবেই নষ্ট হয়ে যায়। বিশ্বাসের উপর সম্পর্কের রঙ নয় বরং যে সম্পর্কের উপর যার বিশ্বাসের রঙ তার বিশ্বাস সমাজ, পরিস্হিতি ও মানুষের প্রভাবে তো নষ্ট হবেই। প্রথমে বিশ্বাস করতে শিখে বিশ্বাসকে নিজের রং নয়, বরং নিজের মনের পরিচয় তৈরী করতে হয়।

বিশ্বাস মানুষের মনের সহজ গুন, যেমনভাবে ভাবমান কোন নৌকা জলের ওপর কখনো স্থির থাকে না, কারন নৌকার সহজাত স্বভাব হয় জলের অপর ভেসে যাওয়া, তেমনি মানুষের সহজ গুন বিশ্বাস করা জীবনের স্রোতে, ভালবাসার স্রোতে, বিশ্বাসের হাত ধরে জীবনে এগিয়ে যাওয়া। সেই বিশ্বাসকে এখন নিজের রঙ বানিয়ে নিলে তা ফিকে হয়ে যাবে বরং নিস্বার্থ বিশ্বাসকে নিজের স্বভাব বানিয়ে নিয়ে, তার হাত ধরে জীবনে চলতে হবে। এই বিশ্বাসকে মনের মধ্যে বন্ধ করে রেখে মনের বাচ্চা মানুষকে অনেক দিন ধরে হাসতে দেয়নি। এখন সে বিশ্বাস করে মানুষের কাছে এসে হাসতে শিখবে, সে বিশ্বাস করে শান্তি পাবে।

জানি না আজ  বিশ্বাস মানুষের জীবনের কতটা জায়গা জুড়ে আছে এবং সেই বিশ্বাসের কাছে এই বিশ্বাসের প্রবন্ধ জায়গা কতটা পাবে। মানুষ যদি তার বিশ্বাসের অমূর্ত প্রতিমাকে মূর্তি দিতে চায়, মানুষ যদি তার বিশ্বাসের গুনে মানুষকে গন্ধ দিতে চায় তবে সে নিজেই লেখে তার বিশ্বাসের প্রবন্ধ। সেই প্রবন্ধ আর কাউর কাছে সত্য না হলেও তার সেই বিশ্বাসের কাছে সে সত্য, সে সাক্ষী , সে পূর্ণ। যার কাছে বিশ্বাস করা সহজ তার কাছে তার বিশ্বাসের প্রবন্ধ কঠিন হয় না।  প্রবন্ধ বোঝা কঠিন হয় না, বিশ্বাস করা যার স্বাভাবিকতা, তার কাছে তার বিশ্বাসের প্রবন্ধ অস্বাভাবিক হয় না, সে তার বিশ্বাসে বেচে না থেকে, কেউ বিশ্বাসের কাব্য লিখতে পারে না, যদি না সে তার অন্তর থেকে তার বিশ্বাসকে দেখতে পায়। বিশ্বাসে বেচে থেকে সে তার অন্তরে দেখতে পারে তার বিশ্বাসে সে কতটা শান্তিতে আছে, কত সুখে আছে, কত আনন্দে আছে।

মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৪

একটি মেয়ের কয়টি রূপ আছে ?

একজন মেয়ে কখনো কারোর মা, কখনো কারোর স্ত্রী, কখনো সে বালিকা, কখনো বা প্রেমিকা, কখনো গৃহবধূ, কখনো চাকুরীরতা। গৃহ তার হাতেই সাজে, সেই গৃহের  শৃঙ্গার শুধু তার জন্যে। সে সংসার সৃজন করে। তার ছায়ায় সন্তান-সন্ততি বেড়ে ওঠে ,তারা সত্‍ বিদ্যা, সত্‍ বুদ্ধি পায় শুধু তার মায়ের কাছে। সে মা হয়ে থাকে। তার বুদ্ধি নীপুনতায় পুরুষ শক্তি পায়, তার শৃঙ্গার পৌরুষ পুষ্টিতায়, তার ছোয়া আছে কবির কবিতায়। কত রূপে তুমি নারী এ দুনিয়ায়। 






জগতেরমাঝে কত বিচিত্ররূপে তুমিনারী
তুমি বিচিত্রবিহারীনি

অম্বর, ভূধর, সর্বচরাচর তার সাক্ষী
তোমারহাতেই জ্বলে সংসারের প্রদীপ্তশিখাটি
তাই তোমার নাম স্বর্নঅক্ষরে লিখে রাখি
তুমি সংসারসৃজনকারী

কে তোমায় দিয়েছে এতশক্তি
তোমারবুদ্ধিতে পুরুষ হয় আত্মবিশ্বাসী
তোমারছায়ায় বড় হয় সন্তান-সন্ততি
তুমি শক্তিসঞ্চারী

তোমায়নিয়ে কত গান লিখেছেকবি
তোমারনাম রটেছে কত গীতালি
তুমিইতার দক্ষ কারিগরী
তুমি রাগ রাগিনী

যখন তুমি শৃঙ্গার করবহুমুখী
তোমারচাঞ্চলে রক্তে তরঙ্গ তুলি
তুমি পুরুষের মনে বিদ্যুত্সঞ্চারিনী
তুমি তেজস্বওষৌসী

জগতেরমাঝে কত বিচিত্ররূপে তুমিনারী
তুমি বিচিত্রবিহারীনি

শুধু সুন্দর নও কারোরজন্য তুমি সুন্দরী
চাদেরআলোয় যেমন সূর্যের প্রতিচ্ছবি
নারীকেসুন্দর করেছে পুরুষের আখি
তুমি সৌন্দর্যসঞ্চারী

তোমারষোলা কলা, সিন্দুরী
পুরুষকেগড়েছে তার পৌষ্টিকতা আনি
আসনে, বসনে রেখেছে তাকে ডাকি
তুমি পৌরুষপুষ্টিদায়ী

যখন দেখি তোমার নিত্যদিনযামী
ভোর হতে রাতি সংসারেরমায়ার বাধনে বাধি
তোমারপ্রেমে সকল প্রাণই প্রেমী
তুমি সংসারবন্দিনী

তুমি কখন কারোর অবুঝস্বপ্নে স্বপ্ননচারিনী
কখনও সৃজনসখী তার জীবনসঙ্গিনী
তুমি রাগ, রাগিনী তোমারসাথে জীবন ছন্দময়ী
তুমি বহু রূপমুখী

জগতেরমাঝে কত বিচিত্ররূপে তুমিনারী
তুমি বিচিত্রবিহারীনি


__ নিত্যকিশোর চন্দ্র