মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৪

শীতের কবিতা: শীতের সকাল

বাংলায় মোট ছটি ঋতূ গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরত, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত। তবে আমরা এখন বছরের প্রতিটি ঋতূকে অনুভব করতে পারি না।  শীতের সময় ভাবি আমার কাছে গ্রীষ্মই ভালো, গ্রীষ্মের সময় ভাবি আমার কাছে শীত ভালো। আমরা অতীত ও আজানা ভবিষ্যতকে ভালোবাসি, বর্তমানে আমরা সুখী হতে পারি না। তাই আমাদের জীবনে সেই সময়টুকুর গুরুত্ব ও সৌন্দর্য থেকে আমরা বঞ্চিত হই।  শীত আমাদের পরিবেশকে যা দান করে, তা আর কোন ঋতূ করে না।  গ্রীষ্ম আমাদের পরিবেশকে যা দান করে তা শীত দিতে পারে না।  তারা প্রত্যেকে নিজের বৈশিষ্টে ও বৈচিত্রে সুন্দর। অন্য কাউর সাথে তার তুলনায় সে নিজের শোভা দান করেও পৃথিবীর মানুষে তাকে গ্রহন করে না, পৃথিবীর কাছে সহনীয় কোন ঋতূই হয়েই থাকে। তাকে পৃথিবীকে ততদিন সইতে হবে যতদিন সে থাকবে। নিজের চোখের ময়লা দূর করে মনের জড়তা দূর করে আমরা যদি নতুনভাবে তাকে দেখি তবে শীতকে ভালোলাগবে, গ্রীষ্মকে ভালবাসবে, সব ঋতূর শোভাকে তুমি অনুভব করবে। প্রকৃতির কোলে তাদের প্রত্যেকের পরমদানকে তুমি খুঁজে পাবে।

তুমি আস দুটি মাসের পায়ে করে 
            পৌষ, মাঘ যারে বলে 
       সকালের সোহাগে কুয়াসার চাদর মুড়ে 
      সূর্যকে নিয়ে এনে 

                                                  পাখিদের কলতানে তোমায় ভরাও, 
                                                  কবির খাতায় তুমিই গান লেখাও, 
                                             শীতের ছবির অমৃত দান দাও, 
                                                               তুমি সবার অপমান লও।  

                                                     ঘরের দোয়ারে শুধু তোমায় ভত্সনা 
                                                           শীত আর কেও সে না 


তুমি আস বৃত্তির ও বৃদ্ধির বার্তা নিয়ে 
 প্রকৃতির কোলে। 
মাঠে, ঘটে কৃষকের হাতে ভরে          
       ধরনীর ফসল দিয়ে। 

                                              কত ফুল, ফল, ফসল তুমি ফলাও 
                                                   পৌষ পার্বনে পিঠে পুলি তুমিই গড়াও 
                                                   নলীন গুড়ে খেজুর রসের স্বাদ পাঠাও 
                                                               তুমি পৃথিবীর স্তন্য ভরাও। 

                                            প্রকৃতির বুকে শুধু তোমার সাধনা 
                                                               মানুষ তবে তোমায় চিনল না।  



যার সাথে এই প্রকৃতির সম্পর্ক জুড়ে থাকে, সে সেই প্রকৃতির সুখকে অনুভব করে। যদি কাউর সাথে সেই সম্পর্ক না থাকে তবে তাকে নিয়ে লেখা কোন কিছু সে পড়তে পারবে তবে তাকে অনুভব করতে পারবে না।  জীবনের কোন এক সময় আমরা যার সাথে থাকি তার সাথে আমাদের জীবনের সেই স্মৃতিটুকু জরিয়ে যায়।  তারপর আমরা সেই স্মৃতিটুকু মনে করে, তার সাথে আবার বেচে থাকি। আমার শীতের সকাল আমাকে আমার ছোটবেলাতে নিয়ে যায়, শীতের সকাল মানে আমি আমাকে সেই ছোটবেলাতে দেখতে পারি। শীতের সঙ্গে আমার সেই ছোটবেলার স্মৃতি জড়িয়ে আছে , যাকে আমি কখনো ভুলতে পারব না। তবে এখন বড় হয়ে শহরে সেই শীতকে দেখতে পারি না, ভিজে, ভিজে ঘাসে ঢাকা মাঠকে দেখতে পারি না, কচু পাতার ওপর সেই জলের মুক্ত দেখতে পারি না, খেজুর গাছে খেজুর রসের ভার ঝোলান থাকা গাছ দেখতে পাই না, তার স্মৃতি শুধু আমার ছোটবেলার সাথে জড়ান আছে। এখন শীতের কবিতা আমাকে সেই দিনগুলিতে নিয়ে যায়, তাই সেই কবিতা আমি অন্তর দিয়ে অনুভব করি। 
মানুষ যদি তার জড়তা দূর করে পৃথিবীকে ভালবাসতে প্রকৃতির কাছে আসে, তার সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে তবে তার এই প্রকৃতিকে নিয়ে লেখা কবিতা ভালো লাগতে শুরু করবে। যাদের সাথে এই প্রকৃতির সম্পর্ক আছে বা কখনো ছিল সেই কবিতা তাদেরকে সেই স্মৃতি অনুভব করতে সাহায্য করে। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন